মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি প্রবাসী শ্রমিক নিয়োগ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ও সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণের আহ্বান জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) ও ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল মালয়েশিয়া (টিআইএম)।

পাশাপাশি মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি প্রবাসী শ্রমিক নিয়োগ বিষয়ে গত বছরের ১৯ ডিসেম্বর বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়া সরকারের মধ্যে স্বাক্ষরিত হওয়া সমঝোতা স্মারকের বিস্তারিত জনসাধারণের জন্যে প্রকাশে যৌথভাবে আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি দুটি।

দুর্নীতির বিরুদ্ধে বার্লিন-ভিত্তিক বৈশ্বিক জোট ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের (টিআই) এ দুই ন্যাশনাল চ্যাপ্টার মঙ্গলবার (৮ ফেব্রুয়ারি) যৌথভাবে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এমন আহ্বান জানিয়েছে।

সাম্প্রতিককালে দুই দেশের গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের বরাত দিয়ে টিআইবি এবং টিআইএম গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলছে, বাংলাদেশি রিক্রুটিং এজেন্সিদের (বিআরএ) একটি অংশ তাদের মালয়েশিয়া সহযোগীদের অসাধু প্রচেষ্টায় বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়ায় প্রবাসী কর্মী নিয়োগ প্রক্রিয়াকে কুক্ষিগত করার অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে। অথচ দুই দেশের সরকার জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট এই সমঝোতা স্মারকের বিষয়বস্তু ও শর্তাদি প্রকাশে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। 

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এই গোপনীয়তা উভয় সরকারের দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ ও তথ্য অধিকার প্রতিষ্ঠার জাতীয় ও আন্তর্জাতিক উভয় অঙ্গীকারের পরিপন্থি। শুধু তাই নয়, সমঝোতা বিষয়ক তথ্য প্রকাশে অনীহা সম্ভাবনাময় এই নিয়োগ প্রক্রিয়াকে মুষ্টিমেয় রিক্রুটিং এজেন্সির হাতে চলে যাবার সুযোগ তৈরি করে দিচ্ছে।

এ বিষয়ে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান এবং টিআইএময়ের প্রেসিডেন্ট মুহাম্মদ মোহন বলেন, সমঝোতা স্মারকের বিষয়বস্তু নিয়ে গোপনীয়তার ফলে যে কারসাজির সুযোগ তৈরি হয়েছে তা শুধুমাত্র এজেন্সি নির্বাচনের উন্মুক্ত এবং ন্যায্য প্রতিযোগিতামূলক প্রক্রিয়ার বাধ্যতামূলক বিধানগুলোকেই লঙ্ঘন করবে না। একই সঙ্গে জবাবদিহিতার সুযোগকেও সীমিত করবে এবং বাংলাদেশি প্রবাসী শ্রমিকের অভিবাসন ব্যয় ও তাদের মালয়েশিয়ান নিয়োগকর্তাদের কর্মী নিয়োগ ব্যয় বাড়িয়ে দেবে। 

দুর্নীতির অভিযোগে ২০১৮ সালে বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক নিয়োগে মালয়েশিয়ার নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার ঘটনা উল্লেখ করে তারা বলেন, জনসাধারণের তথ্য প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে সমঝোতা স্মারকটি বিশদভাবে প্রকাশ এবং দুই দেশের জাতীয় পর্যায়ে এবং যৌথভাবে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য আমরা আমাদের নিজ নিজ সরকারের প্রতি আহ্বান জানাই যাতে প্রভাবশালী সিন্ডিকেটের অসাধু কুটকৌশল আবারও মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি অভিবাসন কর্মী নিয়োগ প্রক্রিয়াকে জিম্মি করতে না পারে। 

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি শ্রমিক অভিবাসন প্রত্যক্ষ অর্থনৈতিক সুবিধাসহ উভয় দেশের জাতীয় স্বার্থকেই এগিয়ে নিতে ভূমিকা রাখছে ও রাখবে। তাই টিআইবি এবং টিআইএম প্রত্যাশা করে দুই দেশের সরকার পারস্পরিক সহযোগিতার ক্ষেত্রকে ঘিরে গোপনীয়তা এবং সিন্ডিকেটের অসাধু প্রচেষ্টা ও দুর্নীতি প্রতিরোধে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেবে। 

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশে দেড় হাজারের বেশি আগ্রহী ও আইনিভাবে অনুমোদিত রিক্রুটিং এজেন্সি থাকা সত্ত্বেও মাত্র ২৫টি প্রভাবশালী বিআরএ ও তাদের প্রত্যেকের অধীনে ১০টি করে সাব এজেন্ট প্রতিষ্ঠানকে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক পাঠানোর সুযোগ দেওয়ার অসাধু পরিকল্পনা বিভিন্ন গণমাধ্যমে এরই মধ্যে প্রকাশ পেয়েছে।

আরএম/আইএসএইচ