পাহাড় কেটে প্লট আকারে বিক্রি করত মশিউর বাহিনী
চট্টগ্রামের সলিমপুরে মশিউরের আস্তানায় অভিযান চালিয়ে ৫ জন অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। র্যাব বলছে, শীর্ষ সন্ত্রাসী মশিউর সলিমপুরের সন্ত্রাসী বাহিনী গড়ে তুলে। তারা সলিমপুর এলাকায় চাঁদাবাজি, সরকারি খাস জমি ও পাহাড় কেটে প্লট আকারে লোকজনের কাছে বিক্রয় করত। সিঙ্গেল প্লট ৩ থেকে ৪ লাখ টাকায় ও ডাবল প্লট ৬ লাখ টাকায় বিক্রি করত তারা।
রোববার (৬ ফেব্রুয়ারি) বেলা সাড়ে ১১টায় পতেঙ্গায় র্যাব সদর দপ্তরে সংবাদ সম্মেলন করে র্যাব-৭ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এম এ ইউসুফ এ তথ্য জানান ।
বিজ্ঞাপন
তিনি বলেন, মশিউর বাহিনী অনেক বছর ধরে জঙ্গল সলিমপুরে নিজের আধিপত্য বিস্তার করার জন্য বড় একটি সন্ত্রাসী গ্রুপ তৈরি করে। এলাকাটি দুর্গম হওয়ায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সবসময় সুযোগ হয়না সলিমপুরে অভিযান পরিচালনা করার। আর সেই সুযোগে মশিউর ও তার বাহিনীর লোকজন এলাকাটিতে তাদের আধিপত্য বিস্তার করছিল। এই গ্রুপের বিরুদ্ধে ৫০ থেকে ৬০টি মামলা রয়েছে। দুই মাস আগে গ্রুপের প্রধান মশিউরকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর থেকেই গ্রুপের বাকি সদস্যদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলাম।
এম এ ইউসুফ বলেন, ভূমি মন্ত্রণালয় ও স্থানীয় প্রশাসনকে অনুরোধ করেছি, মশিউর বাহিনীর দখল করা জায়গা এখন সরকারের অধীন চলে যাবে। সরকারের বিধি মোতাবেক বরাদ্দ দেওয়া হবে। এছাড়া সরকারি বিদ্যুৎ নেওয়ার জন্য মশিউর বাহিনীকে ২০ হাজার টাকা দিতে হতো। বিদ্যুৎ বিল যা আসত তার থেকে সাধারণ মানুষকে বেশি টাকা দিতে হতো। এখন আশা করছি সলিমপুরের মানুষকে আর কোনো বাহিনীর অধীনে থাকতে হবে না।
তিনি বলেন, মশিউর বাহিনী ২০১০ সাল থেকে জঙ্গল সলিমপুরে এসব কাজ করে আসছিল। পাহাড় কেটে ও খাস জমি অবৈধভাবে দখল করে প্লট আকারে বিক্রি করত। এই বাহিনী এভাবে প্রায় ৩ থেকে ৪ হাজার প্লট বিক্রি করেছে।
র্যাব-৭ এর অধিনায়ক বলেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে শনিবার রাত সাড়ে নয়টার দিকে মশিউরের ছেলে শিবলুর ঘরে অভিযান চালানো হয়। এ সময় পাঁচজন সন্ত্রাসীকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের নিয়ে অস্ত্র উদ্ধার অভিযানের শুরুতেই সলিমপুরের শীর্ষ সন্ত্রাসী মশিউরের ছেলে শিবলুর নেতৃত্বে সন্ত্রাসীরা প্রথমে র্যাবকে লক্ষ্য করে ইট পাটকেল, লাঠি ও দেশীয় অস্ত্র দিয়ে হামলা করে আসামিদের ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। একপর্যায়ে পাহাড় থেকে র্যাবকে লক্ষ্য করে গুলি করে। এই পরিস্থিতিতে র্যাবও পাল্টা গুলি করে। তারই একপর্যায়ে সন্ত্রাসীরা গুলি করতে করতে পাহাড়ের দিকে পালিয়ে যায়। নিজেদের জীবন ও উদ্ধার করা অস্ত্র রক্ষা করার জন্য র্যাবকে ১২৯ রাউন্ড গুলি বর্ষণ করতে হয় বলে জানিয়েছেন র্যাব অধিনায়ক। পরে আরও র্যাব নিয়ে এলাকাটি তল্লাশি করা হয়। রাত সাড়ে বারটার দিকে অভিযানটি শেষ হয়।
গ্রেপ্তার ৫ জন হলেন- রফিকুল ইসলাম মালু ( ৪১), মো. সিরাজুল ইসলাম ( ৩৪), মো. হাসান ( ৩৫) জামাল শেখ ( ৪৭) ও মিজানুর রহমান। র্যাব বলছে, মশিউর গ্রেপ্তারের পর থেকে এই পাঁচজন গ্রুপটি পরিচালনা করে আসছিল।
র্যাব-৭ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এম এ ইউসুফ বলেন, অভিযানে বিভিন্ন স্থান ও তাদের আস্তানা থেকে ১০টি দেশীয় আগ্নেয়াস্ত্র, ১টি বিদেশি আগ্নেয়াস্ত্র ও মোট ২২ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়। এছাড়াও তাদের আস্তানা থেকে মিলিটারি গেজেট, মিলিটারি পোশাক, মিলিটারি বাইনোকুলার ও অবৈধ মুদ্রা উদ্ধার করা হয়েছে। তাদের থেকে অবৈধভাবে প্লট বরাদ্দ দেওয়ার রিসিট উদ্ধার করা হয়।
তিনি বলেন, অভিযানে র্যাবের কয়েকজন সদস্য কিছুটা আহত হয়েছেন। গ্রেপ্তার আসামিদের বিরুদ্ধে আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধারের ঘটনায় পৃথক তিনটি অস্ত্র মামলা ও র্যাবের উপর আক্রমণ, সরকারি কাজে বাধা প্রদানের কারণে র্যাব সদস্য আহতের ঘটনা, মিলিটারি উপকরণ রাখা ও অবৈধভাবে ধাতব মুদ্রা রাখায় পৃথক পৃথক আইনে মামলা করা হবে।
র্যাব জানিয়েছে, গ্রেপ্তার রফিকুল ইসলাম মালুর বিরুদ্ধে বায়েজিদ থানায় ১টি, মো. সিরাজুল ইসলামের বিরুদ্ধে চট্টগ্রামের বিভিন্ন থানায় ৫টি অস্ত্র মামলা, মো. হাসানের বিরুদ্ধে ৭টি, জামাল শেখের বিরুদ্ধে ১০টি ও মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে চট্টগ্রাম জেলার বিভিন্ন থানায় ১০টিরও বেশি মামলা রয়েছে। মশিউর জেলে যাওয়ার পরে ওই বাহিনীর নেতৃত্ব দেওয়ার চেষ্টা করেছে জামাল। এছাড়া মশিউরের ছেলে শিবলুর বিরুদ্ধে ১০টি মামলা আছে।
উল্লেখ্য, গত ২৭ ডিসেম্বর দেশি-বিদেশি অস্ত্রসহ ২৭ মামলার আসামি মশিউর রহমানকে ওই এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করেছিল র্যাব। মশিউর ‘ছিন্নমূল বস্তিবাসী’ নেতা হিসেবে পরিচয় দিতেন। ওই সময় তার কাছ থেকে দেশি-বিদেশি কয়েকটি অস্ত্র ও ১৩ রাউন্ড গুলি জব্দ করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে র্যাব অধিনায়ক বলেন, মশিউর জেলে যাওয়ার পর তার বাহিনীর সদস্যদের মধ্যে গ্রুপ পরিচালনা নিয়ে দ্বন্দ্ব শুরু হয়। মশিউর আগে খুলনার চরমপন্থি দলের সদস্য ছিল। খুলনায় অনেক মামলা হওয়ার কারণে সে পালিয়ে চট্টগ্রাম আসে। এখানে আসার পরে শিবলুকে নিজের সন্তান হিসেবে পরিচয় দিত মশিউর। কিন্তু মশিউর গ্রুপের বাকি সদস্যরা শিবলুকে মেনে নিতে পারেনি। কিন্তু মশিউর জেলে যাওয়ার পরে শিবলু চেষ্টা করেছে বাহিনীটিকে পরিচালনা করার জন্য। শিবলু নজরদারির মধ্যে রয়েছে, তাকে গ্রেপ্তারে চেষ্টা চলছে।
কেএম/আইএসএইচ