সার্চ কমিটির নিরপেক্ষতা নিয়ে সংশয় প্রকাশ সুজনের
নির্বাচন কমিশন গঠনে নতুন সার্চ কমিটি নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)। সংস্থাটি বলছে, সার্চ কমিটি কতোটা নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে পারবে, তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করার কারণ রয়েছে। তারপরও আমরা অনুসন্ধান কমিটিকে স্বাগত জানাচ্ছি এবং স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতার সঙ্গে যথাযথভাবে দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানাচ্ছি।
রোববার (৬ ফেব্রুয়ারি) সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এ আহ্বান জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
বিবৃতিতে জানানো হয়, রাষ্ট্রপতি ৫ ফেব্রুয়ারি বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে ছয় সদস্যের অনুসন্ধান কমিটি গঠন করেছেন। কমিটির সদস্য হিসেবে এমন একজনকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যিনি গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েছিলেন। কমিটির প্রধান নিজে আগের সার্চ কমিটির সদস্য ছিলেন, যা বিতর্কিত নূরুল হুদার কমিশন গঠনে ভূমিকা রেখেছে।
বিবৃতিতে আরও জানানো হয়, অতীতে বিভিন্ন অনুসন্ধান কমিটির সভাপতি ও সদস্য ছিলেন এমন কয়েকজন ব্যক্তির পত্রিকায় প্রকাশিত সাক্ষাৎকার ও মন্তব্য থেকে আমরা জেনেছি যে, অনুসন্ধান কমিটি সাধারণত সরকারের চাহিদামত ব্যক্তিদের নামই বিভিন্ন সাংবিধানিক ও বিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানে নিয়োগের জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে সুপারিশ করে। আমরা মনে করি যে, এ ধরনের লোক দেখানো ভূমিকা পালন হবে ‘অনুসন্ধান কমিটি’র নাম এবং এর কাঙ্খিত ভূমিকার সঙ্গে সম্পূর্ণরূপে অসঙ্গতিপূর্ণ।
সুজন জানায়, বিভিন্ন নির্বাচন অনুষ্ঠানে বর্তমান নূরুল হুদা কমিশনের অতি বিতর্কিত ও অনাকাঙ্খিত ভূমিকার কারণে নির্বাচন কমিশন ও আমাদের নির্বাচনী ব্যবস্থার ওপর জনমনে ব্যাপক অনাস্থা সৃষ্টি হয়েছে। এ থেকে উত্তরণের লক্ষ্যে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠন করে বর্তমান কমিশনের বিরুদ্ধে গুরুতর অসদাচরণ ও দুর্নীতির অভিযোগে তদন্ত করার জন্য ৪২ জন নাগরিক রাষ্ট্রপতির কাছে একাধিকবার আবেদন করেছিলেন, যাতে তিনি কর্ণপাতও করেননি। এমনই পরিস্থিতিতে অতীতের ন্যায় অস্বচ্ছ পদ্ধতিতে, লোক দেখানো অনুসন্ধানের নামে, আবারও সরকারের অনুগত কয়েকজন ব্যক্তিকে নির্বাচন কমিশনে নিয়োগ দেওয়া হলে, তা জাতির জন্য মহাবিপদ ডেকে আনবে বলে আমাদের আশঙ্কা।
বিবৃতিতে আরও উল্লেখ করা হয়, সম্প্রতি পাস করা নির্বাচন কমিশন গঠন আইনের ৪(১) ধারায় অনুসন্ধান কমিটির দায়িত্ব ও কার্যাবলি সম্পর্কে বলা আছে: অনুসন্ধান কমিটি স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতার নীতি অনুসরণ করিয়া দায়িত্ব পালন করিবে এবং এ আইনে বর্ণিত যোগ্যতা, অযোগ্যতা, অভিজ্ঞতা, সততা ও সুনাম বিবেচনা করিয়া প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনার পদে নিয়োগদানের জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে সুপারিশ করিবে। তাই, আইনের এ বিধান অনুযায়ী, নবগঠিত অনুসন্ধান কমিটিকে নির্বাচন কমিশনে নিয়োগের জন্য স্বচ্ছতা। নিরপেক্ষতার সঙ্গে অভিজ্ঞ, সৎ ও সুনামের অধিকারী ব্যক্তিদের বাছাই করে বের করতে হবে।
বিবৃতিতে বলা হয়, নির্বাচন কমিশনে নিয়োগের জন্য বিবেচিত ব্যক্তিদের সঠিকভাবে যাচাই-বাছাইয়ের একমাত্র পথ হলো তাদের নাম গণবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে প্রকাশ ও গণশুনানি করা। যার মাধ্যমে তাদের সততা ও সুনাম-দুর্নাম সম্পর্কিত জনশ্রুতিসহ তাদের সম্পর্কে বিভিন্ন ধরনের তথ্য জানা যাবে। আর এর ভিত্তিতেই সঠিক ব্যক্তিদের বেছে নেওয়া এবং অনাকাঙ্ক্ষিত ব্যক্তিদের দূরে রাখা যাবে। তাই আইনের নির্দেশনা অনুযায়ী স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতার নীতি অনুসরণের স্বার্থে আমরা অনুসন্ধান কমিটিকে নির্বাচন কমিশনে নিয়োগের জন্য প্রাথমিকভাবে বাছাই করা ব্যক্তিদের নাম প্রকাশের এবং তাদের সম্পর্কে গণশুনানি করার আনুরোধ জানাচ্ছি। একইসঙ্গে আমরা অনুসন্ধান কমিটিকে রাষ্ট্রপতির কাছে সুপারিশ করা চূড়ান্ত নামের তালিকার সঙ্গে একটি প্রতিবেদন রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানোর কয়েকদিন আগেই গণবিজ্ঞপ্তি আকারে প্রকাশের অনুরোধ জানাচ্ছি। প্রতিবেদনে চূড়ান্ত তালিকায় অন্তর্ভুক্ত ব্যক্তিদের বাছাই করার কারণ ও যুক্তি সুস্পষ্টভাবে লিপিবদ্ধ থাকতে হবে।
সুজন জানায়, আমরা রাজনৈতিক দলগুলোকেও তাদের প্রস্তাবিত নামের তালিকা প্রকাশের আহ্বান জানাচ্ছি। গত অনুসন্ধান কমিটির অন্যতম সদস্য অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলামও, গণমাধ্যমে প্রদত্ত এক সাক্ষাৎকারে, নির্বাচন কমিশনে নিয়োগের জন্য শুনানি আয়োজনের সুপারিশ করেছেন। আইনে নির্ধারিত বাংলাদেশের নাগরিকত্ব, ৫০ বছর বয়স ও ২০ বছরের প্রশাসনিক অভিজ্ঞতা এবং দেওলিয়াত্ব, অপ্রকৃতিস্থতা, বৈদেশিক নাগরিকত্ব, যুদ্ধাপরাধে দণ্ডপ্রাপ্তি ও সরকারে নিয়োগপ্রাপ্তি নির্বাচন কমিশনে নিয়োগের একমাত্র যোগ্যতা-অযোগ্যতার মাপকাঠি হতে পারে না।
সুজন আরও জানায়, নির্বাচন কমিশনের মত একটি স্বাধীন সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে নিয়োগপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের অনেক গুরত্বপূর্ণ ও সংবেদনশীল দায়িত্ব পালন করতে হয়, যার জন্য প্রয়োজন সততা, নিরপেক্ষতা, সাহসিকতা ও প্রজ্ঞার মতো আরও বড় বা ‘সুপেরিয়র’ যোগ্যতা। স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতার সঙ্গে সত্যিকারের অনুসন্ধানের মাধ্যমেই এসব ব্যক্তিদের খুঁজে বের করা সম্ভব। জাতির বৃহত্তর স্বার্থে এ কাজটি যথাযথভাবে করার জন্য আমরা অনুসন্ধান কমিটির প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।
এসআর/এসএম