হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের ধর্মীয় উৎসব সরস্বতী পূজা আজ (শনিবার)। সরস্বতী বিদ্যার দেবী। করোনার সংক্রমণ পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকায় এবার পূজামণ্ডপে সীমিত আকারে স্বাস্থ্যবিধি মেনে পূজার আনুষ্ঠানিকতা পালন করা হবে।

সরস্বতী পূজা উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আলাদাভাবে বাণী দিয়েছেন। বাণীতে তারা হিন্দু সম্প্রদায়ের সবাইকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়ে বলেছেন, ‘বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। হাজার বছর ধরে এ ভূখণ্ডে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল ধর্মের মানুষ মিলেমিশে একত্রে বসবাস করে আসছেন।’

সনাতন ধর্মের সংশ্লিষ্ট বিধান অনুসারে, মাঘ মাসের শুক্লা পঞ্চমী তিথিতে সরস্বতী পূজার আয়োজন করা হয়। এ তিথি বসন্ত পঞ্চমী নামেও পরিচিত। দেশে বর্ণাঢ্য আয়োজনের মধ্য দিয়ে সরস্বতী পূজা হয়ে থাকে‌। তবে করোনা পরিস্থিতির কারণে এবার সীমিত আকারে ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে এই পূজার আয়োজন করা হয়েছে।

বিদ্যার দেবী সরস্বতী পূজা উপলক্ষে শনিবার (৫ ফেব্রুয়ারি) সকাল ৭টা ৭ মিনিটে শুরু হবে পঞ্চমী তিথি। পরদিন রোববার সকাল ৭টা ৯ মিনিটে পূজার তিথি সমাপ্ত হবে। শনিবার সকালে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, শিক্ষার্থীদের বাসা ও পূজামণ্ডপে সরস্বতী পূজা হবে। পূজা শেষে ভক্তরা অঞ্জলি গ্রহণ করবেন। এদিন শিশুদের হাতেখড়িরও আয়োজন করা হয়।

শ্বেতশুভ্র বসনা সরস্বতী দেবীর এক হাতে বেদ, অন্য হাতে (পাণি) বীণা থাকে। এজন্য তাকে বীণাপাণিও বলা হয়। তাকে ঐশ্বর্যদায়িনী, বুদ্ধিদায়িনী, জ্ঞানদায়িনী, সিদ্ধিদায়িনী, মোক্ষদায়িনী এবং শক্তির আধার হিসাবে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা আরাধনা করেন। 

ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির মেলাঙ্গনে মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব সরস্বতী পূজার আয়োজন করেছে। সকাল ৯টায় পূজা অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছেন মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির সভাপতি শ্রী শৈলেন্দ্রনাথ মজুমদার ও সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. কিশোর রঞ্জন মণ্ডল। এছাড়াও রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন পূজামণ্ডপে বিদ্যাদেবীর পূজার আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করা হবে।

প্রতি বছরের মতো এবারও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহ্যবাহী জগন্নাথ হলে সরস্বতী পূজা উদযাপন করা হবে। তবে এবার স্বাস্থ্যবিধি মেনে স্বল্প পরিসরে পূজা উদযাপন করা হবে বলে জানিয়েছেন জগন্নাথ হলের প্রাধ্যক্ষ ও পূজা কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ড. মিহির লাল সাহা।

জগন্নাথ হলে সকাল ৯টায় শুরু হবে পূজার্চনা এবং ১০টা থেকে শুরু হবে অঞ্জলি প্রদান। সন্ধ্যায় আরতি অনুষ্ঠান। সন্ধ্যা ৭টার দিকে পূজামণ্ডপ পরিদর্শন করবেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান। প্রবেশে কারোর নিষেধাজ্ঞা না থাকলেও মাস্ক এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে বলে জানিয়েছেন পূজা কর্তৃপক্ষ।

অধ্যাপক মিহির লাল সাহা বলেন, শুধুমাত্র উপাসনালয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে একটি মাত্র কেন্দ্রীয় পূজা অনুষ্ঠিত হবে। করোনার সংক্রমণ কম থাকায় প্রাথমিকভাবে বিভাগভিত্তিক পূজার সিদ্ধান্ত নিলেও ওমিক্রনের জন্য সেটি বাধা হয়ে দাঁড়ায়। মনঃকষ্ট থাকলেও হল প্রশাসনের একটিমাত্র কেন্দ্রীয় পূজার সিদ্ধান্তে একমত পোষণ করেছে শিক্ষার্থীরা।

সামনের বছর পুরোনো আমেজে আবারও পূজা উদযাপন করতে পারবেন বলে আশা প্রকাশ করেন অধ্যাপক মিহির লাল সাহা।

করোনার আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলের খেলার মাঠে বিভাগভিত্তিক পূজামণ্ডপ তৈরি করা হতো। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় প্রতিটি বিভাগই একটি করে মণ্ডপ তৈরি করত। এই পূজাকে ঘিরে শিক্ষার্থীদের মাঝে আমেজ লক্ষ্য করা যেত। গত বছর থেকে খুব সীমিতভাবে পালন হচ্ছে। যেখানে অন্যান্য বছর ৮০টির মতো মণ্ডপ থাকত সেখানে একটিমাত্র মণ্ডপ দিয়েই পূজা উদযাপন করতে হচ্ছে।

পিএসডি/এইচআর/ওএফ