বিভিন্ন ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ দেশের ২৪ বিশিষ্ট নাগরিককে ২০২২ সালের একুশে পদক দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। আজ (৩ ফেব্রুয়ারি) সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়।

এ বছর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো আনোয়ার হোসেন এবং শিক্ষায় চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি অ্যান্ড এনিমেল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. গৌতম বুদ্ধ দাশ একুশে পদকে ভূষিত হয়েছেন।

তাদের অভিনন্দন জানিয়ে বৃহস্পতিবার দুপুরে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি।

স্ট্যাটাসে শিক্ষামন্ত্রী লেখেন, ‘যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় উপাচার্য অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে ও চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি অ্যান্ড এনিমেল সায়েন্সেস ইউনিভার্সিটির মাননীয় উপাচার্য অধ্যাপক ড. গৌতম বুদ্ধ দাশ শিক্ষায় ২০২২ সালে একুশে পদকে ভূষিত হয়েছেন। গবেষণায় ড. আব্দুস সাত্তার মন্ডল এবং সমাজসেবায় একুশে পদক পেলেন জনাব আব্রাহাম লিংকন। তারাও শিক্ষক।’

‘তাদের সবাইকে আন্তরিক ও প্রাণঢালা অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানাই সমগ্র শিক্ষা পরিবারের পক্ষ থেকে। আমরা শিক্ষা পরিবার গর্বিত ও আবেগাপ্লুত। আপনাদের সর্বাঙ্গীণ মঙ্গল ও দীর্ঘায়ু কামনা করি। শিক্ষার মানোন্নয়নে ও গবেষণায় অনুপ্রেরণা যোগাবে এ স্বীকৃতি, আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি।’

অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ার হোসেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ রসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগ থেকে ১৯৮১ সালে স্নাতক ও ১৯৮৩ সালে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি জাপানের টোকিও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৯১ সালে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। এরপর জাপানের ওসাকায় সানতোরি কর্পোরেশনে এবং যুক্তরাষ্ট্রের নিউজার্সিতে অবস্থিত রবার্ট উড জনসন মেডিকেল স্কুলের ইউএমডিএনজে (বর্তমানে রাটগার্স বিশ্ববিদ্যালয়) থেকে পোস্ট ডক্টরেট সম্পন্ন করেন। ১৯৮৪ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগে শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৯৭ সালে একই বিশ্ববিদ্যালয়ের অণুজীববিজ্ঞান বিভাগে অধ্যাপক হিসেবে যোগদান করেন।

আনোয়ার হোসেনের জন্ম ১৯৫৮ সালের ১ জানুয়ারি, মুন্সিগঞ্জ জেলার লৌহজং উপজেলার সাতঘরিয়া গ্রামে।

চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও এনিমেল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ের এনিমেল সায়েন্সে অ্যান্ড নিউট্রিশন বিভাগের অধ্যাপক ড. গৌতম বুদ্ধ দাশ ১৯৬৩ সালে চাঁদপুরে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৮৫ সালে বি.এসসি ইন এনিমেল হাজবেন্ড্রি (অনার্স) ডিগ্রি অর্জন করেন। একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৮৬ সালে পোল্ট্রি নিউট্রিশন বিষয়ে এমএসসি এবং ২০১২ সালে একই বিষয়ে সফলতার সঙ্গে পিএইচডি ডিগ্রী অর্জন করেন। ২০০৮ সালে তিনি হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট বিষয়ে পোস্ট গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন করেন।

প্রফেসর ড. গৌতম বুদ্ধ দাশ ২০০০ সালে চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও এনিমেল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক পদে যোগদান করেন। তিনি এনিমেল নিউট্রিশন বিষয়ে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন এবং ডেনমার্ক, লন্ডন, থাইল্যান্ড ও ভারত থেকে এনিমেল সায়েন্স ও পোল্ট্রি নিউট্রিশনে উচ্চতর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ফুড সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি অনুষদের ডিন হিসেবে ২ বছর দায়িত্ব পালন করেন। এনিম্যাল সায়েন্স ও নিউট্রিশন বিভাগে ৯ বছর বিভাগীয় প্রধান হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন। শিক্ষকতার পাশাপাশি তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে সিন্ডিকেট, একাডেমিক কাউন্সিল এবং ফিন্যান্স কমিটির সদস্য হিসেবে অত্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন।

যারা পদক পাচ্ছেন
ভাষা আন্দোলনে মোস্তফা এম. এ. মতিন (মরণোত্তর) ও মির্জা তোফাজ্জল হোসেন (মুকুল) (মরণোত্তর)। শিল্পকলার নৃত্যে জিনাত বরকতউল্লাহ, সংগীতে নজরুল ইসলাম বাবু (মরণোত্তর), ইকবাল আহমেদ ও মাহমুদুর রহমান বেণু, অভিনয়ে খালেদ মাহমুদ খান (মরণোত্তর), আফজাল হোসেন ও মাসুম আজিজ।

মুক্তিযুদ্ধে একুশে পদক পাচ্ছেন চারজন। তারা হলেন- বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব অধ্যক্ষ মো. মতিউর রহমান, সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলী (মরণোত্তর), কিউ. এ. বি. এম রহমান, আমজাদ আলী খন্দকার। সাংবাদিকতায় পদক পাচ্ছেন এম এ মালেক, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে মো. আনোয়ার হোসেন, শিক্ষায় অধ্যাপক ড. গৌতম বুদ্ধ দাশ, সমাজসেবায় এস. এম. আব্রাহাম লিংকন ও  সংঘরাজ জ্ঞানশ্রী মহাথের।  

ভাষা ও সাহিত্যে এ বছর একুশে পদক পাচ্ছেন কবি কামাল চৌধুরী ও ঝর্ণা দাশ পুরকায়স্থ।

এছাড়া গবেষণায় ড. মো. আবদুস সাত্তার মন্ডল, ড. মো. এনামুল হক (দলগত) (দলনেতা), ড. সাহানাজ সুলতানা (দলগত) এবং ড. জান্নাতুল ফেরদৌস (দলগত) একুশে পদক পাচ্ছেন।

এআর/এমএইচএস