জীবনে আর কিছু না পেলেও দুঃখ থাকবে না
গবেষণায় বিশেষ অবদানের জন্য একুশে পদক পাচ্ছেন বিশিষ্ট অণুজীব বিজ্ঞানী ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. সমীর কুমার সাহা। সম্প্রতি প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে করোনার জিন রহস্য আবিষ্কার করে গোটা বিশ্বকে চমকে দেন প্রখ্যাত এই অণুজীব বিজ্ঞানী ও তার মেয়ে ড. সেজুঁতি সাহা।
গবেষণাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অনন্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ দেশের ২১ জন বিশিষ্ট নাগরিক রাষ্ট্রের এই সম্মানজনক পুরস্কার পাচ্ছেন। বৃহস্পতিবার (৪ ফেব্রুয়ারি) সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব (অনুষ্ঠান) অসীম কুমার দে স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে তাদের নাম ঘোষণা করা হয়।
বিজ্ঞাপন
অধ্যাপক ড. সমীর কুমার সাহার নেতৃত্বে দেশে করোনাভাইরাসের জিনোম সিকোয়েন্স উদ্ভাবনের ফলে বাংলাদেশে ভাইরাসটির গতি প্রকৃতি ও ক্ষমতা সম্পর্কে জানা যাবে। এমনকি এর মাধ্যমে দ্রুত ভাইরাসটির রূপান্তরও বোঝা যাবে। যা করোনার সংক্রমণ প্রতিরোধে সহায়তা করবে। কাজে লাগবে করোনার প্রতিষেধক আবিষ্কারেও।
জীবনে অনেক পদক পেয়েছি। সেটা ইউনেস্কো অ্যাওয়ার্ড হোক বা আমেরিকান সোসাইটি অব মাইক্রোবায়োলজির অ্যাওয়ার্ড হোক। কিন্তু নিজের দেশের এমন একটা অ্যাওয়ার্ড পেয়ে মনে হচ্ছে জীবনে আর কিছু না পেলেও কোনো প্রকার দুঃখ থাকবে না। এরকম একটা অনুভূতি এই মুহূর্তে কাজ করছে। এক কথায় অভূতপূর্ব।
ড. সমীর কুমার, বিশিষ্ট অণুজীব বিজ্ঞানী ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ
কোন গবেষণার স্বীকৃতিস্বরূপ এই পদক জানতে চাইলে অধ্যাপক ড. সমীর কুমার সাহা বলেন, ‘আমার মনে হয়, আমার গবেষণাগুলোর মধ্যে শিশুদের যে ইনফেকশাস ডিজিজগুলো হয়, সেগুলো নিয়ে আমি যে কাজ করেছি। সেটার জন্যই দিয়েছে। এক্ষেত্রে বাচ্চাদের নিউমোনিয়া হলো প্রধান। নিউমোনিয়া ও টাইফয়েড নিয়ে আমার যে কাজগুলো সেগুলো হলো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।’
তিনি আরও বলেন, ‘পুরস্কার বা স্বীকৃতিটা আসলে নির্দিষ্ট কোনো কাজের জন্য না। এটা আমার আজীবন যত কাজ করেছি, সবগুলো মিলিয়েই। দেখা হয়েছে আমার কতগুলো পাবলিকেশন আছে, সেই পাবলিকেশনের কোয়ালিটিগুলো কেমন ও এটাতে বাংলাদেশের কোথায় কি উন্নতি হয়েছে, এগুলোই মূলত দেখার বিষয়।’
২০২১ সালের একুশে পদক পাচ্ছেন যারা তারা হলেন- ভাষা আন্দোলনে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ মোতাহার হোসেন তালুকদার (মরণোত্তর), শামছুল হক (মরণোত্তর), অ্যাডভোকেট আফসার উদ্দীন আহমেদ (মরণোত্তর), শিল্পকলায় বেগম পাপিয়া সরোয়ার (সংগীত), রাইসুল ইসলাম আসাদ (অভিনয়), সালমা বেগম সুজাতা (অভিনয়), আহমেদ ইকবাল হায়দার (নাটক), সৈয়দ সালাউদ্দিন জাকী (চলচ্চিত্র), ড. ভাস্বর বন্দোপাধ্যয় (আবৃত্তি), পাভেল রহমান (আলোকচিত্র)।
এছাড়াও মুক্তিযুদ্ধ ক্যাটাগরিতে গোলাম হাসনায়েন, ফজলুর রহমান খান ফারুক, বীর মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দা ইসাবেলা (মরণোত্তর), সাংবাদিকতায় অজয় দাশগুপ্ত, গবেষণায় অধ্যাপক ড. সমীর কুমার সাহা, শিক্ষায় মাহফুজা খানম, অর্থনীতিতে ড. মির্জা আব্দুল জলিল, সমাজসেবায় প্রফেসর কাজী কামরুজ্জামান, ভাষা ও সাহিত্যে কবি কাজী রোজী, বুলবুল চৌধুরী, গোলাম মুরশিদ পদক পাচ্ছেন।
একনজরে সমীর কুমার সাহা
সমীর কুমার সাহা ১৯৫৫ সালের ২৮ ডিসেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। তিনি চাঁদপুর শহরের কদমতলা এলাকার সাহা বাড়িতে বেড়ে ওঠেন। পিতা বরেণ্য ব্যবসায়ী চন্দ্রকান্ত সাহা, মাতা দুলালী প্রভা সাহা। তার অন্য ভাই-বোনরা হলেন- কবিতা সাহা, প্রবীর সাহা ও তৃপ্তি সাহা। সমীর কুমার সাহার মেয়ে অণুজীব বিজ্ঞানী ড. সেঁজুতি সাহা। তার স্ত্রী ড. সেতারুন্নাহার গণস্বাস্থ্যের গবেষক। তার ছোট ছেলেও পেশায় অণুজীব বিজ্ঞানী।
তিনি ঢাকা শিশু হাসপাতালের মাইক্রোবায়োলজির ডায়াগনস্টিক বিভাগের অধ্যাপক, সিনিয়র পরামর্শদাতা ও বাংলাদেশ শিশু স্বাস্থ্য ইন্সটিটিউটের দ্য চাইল্ড হেলথ রিসার্চ ফাউন্ডেশনের (সিএইচআরএফ) নির্বাহী পরিচালক।
ড. সমীর কুমার সাহা নিউমোনিয়া, মেনিনজাইটিস ও এন্টারিক জ্বর বিশেষজ্ঞ। বিশেষত পেডিয়াট্রিক সংক্রামক রোগগুলোর জন্য তার গবেষণা ব্যাপক পরিচিত। তিনি এই রোগগুলোর প্রকৃতি, কার্যকারক জীব, ওষুধ প্রতিরোধের নিদর্শন ও সেরোটাইপ বিতরণের সন্ধানে মনোনিবেশ করেছেন। ২০১৭ সালে ক্লিনিকাল মাইক্রোবায়োলজিতে অসামান্য গবেষণার জন্য আমেরিকান সোসাইটি ফর মাইক্রোবায়োলজি (এএসএম) অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেন। তিনি আমেরিকান একাডেমি অফ মাইক্রোবায়োলজিতে ফেলোশিপে নির্বাচিত হয়েছেন। একই বছর সাহা মাইক্রোবায়োলজিতে ইউনেস্কো কার্লোস জে ফিনলে পুরস্কার পেয়েছিলেন।
ড. সমীর কুমার সাহা রাজশাহীর চারঘাট থানার মনমোহনী হাইস্কুল থেকে এসএসসি এবং চাঁদপুর সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। ১৯৮৩ সালে বাংলাদেশের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএসসি ও এমএসসি ডিগ্রি অর্জন করেন। এছাড়া ১৯৮৯ সালে ভারতের বারানসি হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয় ইন্সটিটিউট অফ মেডিকেল সায়েন্সে থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেছেন।
টিআই/ওএফ