দুদক কর্মকর্তাকে হত্যার হুমকি, থানায় জিডি
পরিবারসহ দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কর্মকর্তা মো. শরীফ উদ্দিনকে হত্যার হুমকি দিয়েছেন কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আইয়ুব খান চৌধুরী ও তার সঙ্গীরা।
এমন অভিযোগে চট্টগ্রাম-২ এর সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সাবেক উপ-সহকারী পরিচালক মো. শরীফ উদ্দিন সিসি টিভির ফুটেজসহ চট্টগ্রামের খুলশী থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন। শরীফ উদ্দিন বর্তমানে পটুয়াখালী সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে কর্মরত আছেন।
বিজ্ঞাপন
রোববার (৩০ জানুয়ারি) চট্টগ্রামের খুলশী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সন্তোষ কুমার চাকমা ঢাকা পোস্টকে জিডির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, রাতে শরীফ উদ্দিন নিজে এসে জিডি করেছেন। অভিযোগে তাকে হত্যার হুমকির কথা বলা হয়েছে। তাই তিনি আইনি সহায়তা চেয়েছেন।
এ বিষয়ে ওই দুদক কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জিডির বিষয়টি স্বীকার করলেও বিস্তারিত কথা বলতে অস্বীকার করেন।
খুলশী থানায় দায়ের করা অভিযোগে বলা হয়েছে, মো. শরীফ উদ্দিন চট্টগ্রাম-২ এর সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সাবেক উপ-সহকারী পরিচালক। বর্তমানে পটুয়াখালী সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে উপ-সহকারী পরিচালক হিসেবে কর্মরত। দুই সন্তানসহ পরিবার নিয়ে দীর্ঘদিন যাবৎ খুলশী এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় বসবাস করছেন। গত ৩০ জানুয়ারি থেকে ১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তিন দিনের ছুটিতে পটুয়াখালী থেকে চট্টগ্রামের বাসায় অবস্থানকালে আজ সন্ধ্যা ৭টার দিকে কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (কেজিডিসিএল) সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও পেট্রোবাংলার সাবেক পরিচালক মো. আইয়ুব খান চৌধুরীসহ আরও ১ জন বাসার নীচ তলায় এসে দারোয়ানের উপস্থিতিতে সরাসরি হুমকি দেন ও অশোভন আচরণ করেন। আইয়ুব খান চৌধুরী ও তার সঙ্গী জনৈক এলজিইডির এক ব্যক্তি পরিচয়ে হুমকি দিয়ে বলেন, কেন তার বিরুদ্ধে নিউজ করাচ্ছি। তার (শরীফ) কারণে জীবন ধ্বংস হয়ে গেছে। চট্টগ্রামে কর্মরত থাকাকালে অনেকের জীবন নষ্ট করে দিছে। এক পর্যায়ে তারা অন্য কাউকে কল দিয়ে বাহির হতে লোকবল ডাকে। শরীফ ও তার পরিবারকে জানে মেরে ফেলার হুমকিও দেয়।
সাধারণ ডায়রিতে আরও বলা হয়, শরীফ উদ্দিন তাদেরকে বের হয়ে যেতে বলেন। পরবর্তীতে আইয়ুব খান চৌধুরী শান্ত হয়ে অশোভন আচরণের জন্য সরি বললেও তার গতিবিধি ও উদ্দেশ্যে সন্দেহজনক বলে মনে হয়েছে। তারা যে কোনো সময় আমার ও পরিবারের যে কোনো বড় ধরণের ক্ষতিসাধন করতে পারেন। তাই এ বিষয়ে আইনগত সহায়তার জন্য অনুরোধ করেন দুদক কর্মকর্তা। জিডির সঙ্গে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংযুক্ত করা হয়েছে।
অন্যদিকে দুদকের অপর একটি সূত্রে জানা যায়, পেট্রো বাংলার অধীন কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (কেজিডিসিএল) নিয়োগ জালিয়াতি ও পদোন্নতির অভিযোগ সংশ্লিষ্ট একটি অনুসন্ধান দুদকে চলমান রয়েছে। যেখানে অভিযোগ রয়েছে ২০২০ সালের ২২ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রামের একটি দৈনিকে কর্ণফুলী গ্যাসের ৩৭ ভুয়া কর্মকর্তাকে রাতের আঁধারে পদোন্নতি দেওয়ার প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। তাতে উল্লেখ করা হয়, নিয়োগ পরীক্ষায় ওই ৩৭ কর্মকর্তা ফেল করেন। এদের অনেকের শিক্ষাগত যোগ্যতাও ছিল না। তবু ১০ বছর আগে ৩৭ জন লোক নিয়োগ পেয়েছিলেন সহকারী ব্যবস্থাপক পদে। জালিয়াতি ধামাচাপা দিতে তাদের কোনো নথিপত্রও রাখা হয়নি। এদের নিয়োগ পরীক্ষার কোনো নথি, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার খাতার কিছুই পাওয়া যায়নি। কারও কারও সনদও জাল। কেউ কেউ পাসের আগে পাস দেখিয়ে সার্টিফিকেট জমা দিয়েছেন নিয়োগের সময়। এমনকি নজিরবিহীন কাণ্ডে নিয়োগ পাওয়া সেই কথিত কর্মকর্তারা গত ১০ বছরে পদোন্নতিও বাগিয়ে নিয়েছেন।
অভিযোগের তীর কর্ণফুলী গ্রাসের তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক আইয়ুব খান চৌধুরীসহ তাদের একটি সিন্ডিকেটের দিকে। তাদের বিরুদ্ধে অর্ধ ডজন মামলার সুপারিশ দিয়েছিলেন সেই সময়ের অনুসন্ধান কর্মকর্তা ও চট্টগ্রাম-২ এর সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সাবেক উপ-সহকারী পরিচালক মো. শরীফ উদ্দিন। যা এখনও কমিশনে অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে বলে জানা গেছে। এর জের ধরেই এমন হুমকি ও অশোভন আচরণের ঘটনা ঘটতে পারে বলে দুদকের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন।
আরএম/আইএসএইচ