গ্যাসের চাপ নেই বললেই চলে / ছবি : ঢাকা পোস্ট

রাজধানীর উত্তর বাড্ডা এলাকার বাসিন্দা তাহমিনা খাতুন কেরোসিনের চুলা কিনে বাসায় ফিরছিলেন। আলাপে জানা গেল, তার বাসায় তিতাস গ্যাসের বৈধ সংযোগ আছে। দুই চুলার জন্য প্রতিমাসে ৯৭৫ টাকা বিলও দিতে হয়। তবুও তাকে কেরোসিনের চুলা কিনতে হচ্ছে।

গ্যাস থাকতেও কেরোসিনের চুলা কেন কিনতে হলো— জানতে চাইলে তিনি বলেন, জানুয়ারির মাঝামাঝি থেকে ঠিকমতো গ্যাস পাচ্ছি না। খুবই অল্পকিছু সময় গ্যাস থাকে। যখন থাকে তখনও খুবই অল্প পরিমাণে গ্যাস আসে। তা দিয়ে কোনো কাজই করা যায় না। তাই বাধ্য হয়েই কেরোসিনের চুলা কিনলাম, যেন অন্তত রান্না করে বাসার সবাই খেতে পারি।

ইস্কাটনে থাকেন বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবী রাকিব হোসেন। তার বাসায় গ্যাসের দুটি চুলা থাকলেও কিনে এনেছেন রাইস কুকার। রাইস কুকার কেনার কারণ হিসেবে জানালেন, দিনের বেলায় গ্যাস থাকে না। রান্না করা যায় না। তাই ঝামেলা এড়াতে রাইস কুকার কেনা। গ্যাস ব্যবহার করতে না পারলেও দিতে হয় বিল।  

মিরপুর শেওড়াপাড়া এলাকার বাসিন্দা তোফাজ্জল হোসেন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, মাসজুড়ে গ্যাস থাকবে না, আর বিল দিতে হবে পুরোটাই! প্রায় প্রতিদিনই গ্যাস থাকছে না এক বেলা করে, এরপর গ্যাস এলেও জ্বলছে মিটমিট করে। স্বল্প পরিমাণ গ্যাস দিয়ে রান্না তো হয়ই না, পানিও গরম করা যায় না। ডিসেম্বর থেকে শুরু হয়েছে এ সমস্যা। জানুয়ারির ১০ তারিখের পর থেকে সমস্যা আরও বেড়েছে।

রাজধানীর পশ্চিম রামপুরা এলাকায় একটি মেস বাড়িতে থাকেন শাহিন আহমেদ নামের এক ব্যক্তি। তিনি বলেন, আমাদের বাসাসহ আশপাশের এলাকায় সকালের পর থেকে গ্যাস কমতে থাকে। বেলা ১১টার পর বলতে গেলে গ্যাস থাকেই না। আমরা তো মেসে থাকি, বুয়া আসে দুপুরের দিকে। গ্যাস থাকে না দেখে রান্না-ই হয় না অনেক দিন, হোটেলে গিয়ে খেতে হয়। চলতি মাসে প্রায়দিনই এমন ঘটনা ঘটেছে।

রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দারা গ্যাসের এমন সমস্যায় পড়েছেন। বলতে গেলে রাজধানীজুড়েই চলছে গ্যাসের তীব্র সংকট। গত ১২ জানুয়ারি থেকে এ সংকট আরও ব্যাপকতা পায়। তিতাসের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল, ১২ জানুয়ারি থেকে ২১ জানুয়ারি পর্যন্ত তিতাস অধিভুক্ত এলাকায় গ্যাসের চাপ কম থাকবে। নির্ধারিত সময়ের পর আরও দশ দিন পার হয়েছে। কিন্তু সমস্যার সমাধান হয়নি। 

জানা গেছে, গ্যাসের এ সংকট রাজধানীর মিরপুর, আগারগাঁও, শেওড়াপাড়া, রামপুরা, রায়েরবাজার, যাত্রাবাড়ী, শনির আখড়া, চিটাগাং রোড, খিলগাঁও, মুগদা, বাড্ডা ও ইস্কাটন এলাকায় বেশি। তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ বলছে, রাজধানীতে সরবরাহের জন্য দুটি টার্মিনাল ব্যবহার করে প্রতিদিন ৭০০ থেকে ৮০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস নিয়ে আসা হয়। এর মধ্যে একটি টার্মিনালে সমস্যা দেখ দিয়েছে। যে কারণে অর্ধেক গ্যাস আসছে। এতেই রাজধানীজুড়ে এ সংকটের সৃষ্টি হয়েছে।

তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মোহা. শবিউল আওয়াল এ বিষয়ে ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস ‘এলএনজি’ ইমপোর্টে কাজ করা দুটি টার্মিনালের একটিতে মেরামতের কাজ চলছে। এ কারণে সরবরাহে ঘাটতি দেখা দিয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘কাজ চলছে, মেরামত শেষ হলে আশা করা যায় গ্যাসের সংকট কমে আসবে। আমরা যতদূর জানতে পেরেছি, কাজ শেষ হয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে আরও দুই সপ্তাহ সময় লেগে যেতে পারে। এরপর টার্মিনাল থেকে সাপ্লাই শুরু হলে গ্যাসের সংকট কেটে যাবে।’

এএসএস/আরএইচ/জেএস