র্যাবের নিষেধাজ্ঞা চেয়ে ইইউতে দেওয়া চিঠি ব্যক্তিগত
র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) নিষেধাজ্ঞা চেয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) পররাষ্ট্র দপ্তরে চিঠি দেন ইউরোপীয় পার্লামেন্ট সদস্য ইভান স্টেফানেক। এটি একটি ব্যক্তিগত চিঠি। ঢাকায় নিযুক্ত ইইউর রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াইটলি জানান, এ বিষয়ে তার কাছে কোনো তথ্য নেই।
বৃহস্পতিবার (২৭ জানুয়ারি) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) আয়োজিত ‘মিট দ্য রিপোর্টার্স’ অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা জানান রাষ্ট্রদূত হোয়াইটলি।
বিজ্ঞাপন
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ডিআরইউর সভাপতি নজরুল ইসলাম মিঠু ও সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম হাসিব।
রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা নিয়ে ইইউ পার্লামেন্টে চিঠির ব্যাপারে আমার কাছে কোনো তথ্য নেই। এটি ব্যক্তিগত চিঠি। একজন ব্যক্তির অবশ্যই ব্যক্তিগত মত প্রকাশের অধিকার রয়েছে। আমি মনে করি এটিও তাই। র্যাবকে মার্কিন ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। এটা নিয়ে আমার কোনো মন্তব্য করা ঠিক হবে না।’
র্যাবের নিষেধাজ্ঞা তুলতে বাংলাদেশ সরকারের নেওয়া পদক্ষেপের মাধ্যমে দ্রুত সমস্যার সমাধান হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন হোয়াইটলি।
কূটনৈতিক সূত্রে জানা যায়, র্যাবকে নিষেধাজ্ঞা দিতে গত ২০ জানুয়ারি ইউরোপীয় পার্লামেন্ট সদস্য ইভান স্টেফানেক ইইউর পররাষ্ট্রনীতিবিষয়ক প্রধান জোসেফ বোরেল বরাবর চিঠিটি দিয়েছেন।
চিঠিতে স্টেফানেক লিখেছেন, বাংলাদেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতির জন্য আমি আপনার দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এবং হিউম্যান রাইটস ওয়াচের প্রতিবেদনে বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন দলের অমানবিক আচরণ প্রকাশিত হয়েছে। নির্বাচনের ফলাফল পরিবর্তন ও রাজনৈতিক ভিন্নমত দমন এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য। এই পরিস্থিতি বর্তমানে খুবই মারাত্মক। কারণ মার্কিন সরকার বর্তমান পুলিশের আইজিপি যিনি আগে র্যাবের প্রধান ছিলেন তার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বিশেষত টেকনাফের কাউন্সিলর একরামুল হককে ২০১৮ সালের মে মাসে হত্যা করার জন্য এ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।
ম্যাগনিটাইনেজ গ্লোবাল প্রোগ্রামের আওতায় বাংলাদেশের আরও পাঁচ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ মন্ত্রণালয় কর্তৃক নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। মানবাধিকার সংস্থা ও যুক্তরাষ্ট্রের অনেক সিনেট সদস্য বছরের পর বছর ধরে র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের কথা বলছিলেন।
দ্য ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন ফর হিউম্যান রাইটস বলছে, বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বিশেষ করে, পুলিশ ও র্যাবের দ্বারা ব্যাপক মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়েছে। ২০১৮ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত এক হাজার ১৩৪টি বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। এসব তথ্যের ভিত্তিতে আমি আপনাকে র্যাবের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপের জন্য আপনার ক্ষমতা ব্যবহারের অনুরোধ করছি।
উল্লেখ্য, গত ১০ ডিসেম্বরে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে র্যাবের সাবেক ও বর্তমান সাত কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবসে পৃথকভাবে এ নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট (রাজস্ব বিভাগ) ও পররাষ্ট্র দপ্তর।
গত বছরের নভেম্বরে র্যাবকে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশন থেকে নিষিদ্ধের দাবি জানিয়েছে ১২টি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা। তবে বিষয়টি নতুন বছরের শুরুর মাসে গণমাধ্যমে আসে।
এনআই/ওএফ