ক্রু সংকটে বন্ধ চবির তিন জোড়া শাটল
ক্রু সংকটের কারণে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) চলাচল করা তিন জোড়া শাটল ট্রেন অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। তবে অন্য চার জোড়া ট্রেন ও ডেমো ট্রেন স্বাভাবিক চলাচল করবে।
বুধবার (২৬ জানুয়ারি) থেকে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর করা হয়েছে। ঢাকা পোস্টকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের সহকারী পরিবহন কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামান।
বিজ্ঞাপন
তিনি বলেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে সাত জোড়া ট্রেন চলাচল করে। কিন্তু ক্রু সংকটের কারণে আজ থেকে তিন জোড়া ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকবে। বাকি চার জোড়া ট্রেন ও শাটল ট্রেন চলাচল করবে। তবে কতদিন বন্ধ থাকবে তা বলা যাচ্ছে না।
রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, এর আগে ডিভিশনাল মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার (ডিএমই লোকো) মো. ওয়াহিদুর রহমান সিআরবির কন্ট্রোলার অফিসে আদেশ পাঠান। ডিএমই লোকো দপ্তর থেকে পাঠানো আদেশের চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, ক্রু স্বল্পতার কারণে ২৬ জানুয়ারি থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত ১৩১/১৩২, ১৩৫/১৩৮ ও ১৪১/১৪২ নম্বরধারী ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকবে। এই তিন জোড়া ট্রেন চবিতে চলাচল করে। তবে অন্য তিন জোড়া শাটল ১৩৩/৩৪, ১৩৯/৪০, ১৪৩/৪৪ এবং এক জোড়া ডেমো ট্রেন চলাচল করবে।
উল্লেখ্য, মাইলেজ ইস্যুতে প্রায় এক বছর ধরে আন্দোলন করছেন বাংলাদেশ রেলওয়ে রানিং স্টাফ ও শ্রমিক কর্মচারী সমিতি। সম্প্রতি তারা ঘোষণা দেন, বেতন-ভাতা আগের নিয়মে বহাল না রাখলে ৮ ঘণ্টার বেশি দায়িত্ব পালন করবেন না। তারপর থেকে ট্রেন চালকের সংকট দেখা দেয়। এরই অংশ হিসেবে রেলওয়ে ট্রেন চলাচল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
বাংলাদেশ রেলওয়ে রানিং স্টাফ ও শ্রমিক কর্মচারী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মজিবুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, এতোদিন রেলের জনবল সংকটের কারণে আমরা অতিরিক্ত সময় ডিউটি করেছি। আমরা আগে বিশ্রাম না নিয়ে অতিরিক্ত সময় ডিউটি করলে সুযোগ-সুবিধা পেতাম। কিন্তু সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে একটি প্রজ্ঞাপন দিয়েছে। যাতে করে আমরা সেই সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। সুযোগ সুবিধা থাকার কারণে বিশ্রাম না নিয়ে আমরা চাকরি করতাম। কিন্তু আমাদের মাইলেজ সুবিধা কমিয়ে আনা হয়েছে। আমরা এক বছর ধরে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষকে আমাদের বিভিন্ন দাবি দিয়েছি। ৩০ জানুয়ারির মধ্যে আমাদের দাবি না মানলে ৩১ তারিখ থেকে রানিং স্টাফরা কর্মবিরতিতে যাবে।
রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, রেলের পরিবহন বিভাগের রানিং স্টাফদের মধ্যে রয়েছে লোকো মাস্টার (এলএম), সহকারী লোকোমাস্টার (এএলএম), সাব-লোকোমাস্টার বা সান্টিং লোকোমাস্টার (এসএলএম), ক্যারেজ অ্যাটেনডেন্ট, গার্ড, টিকিট ট্রেকার (টিটি)। অর্থ মন্ত্রণালয়ের নতুন প্রজ্ঞাপনে ক্যারেজ অ্যাটেনডেন্টদেরও মাইলেজ সুবিধায় আনা হয়েছে।
রেলওয়ে সূত্র জানায়, একজন রানিং স্টাফ তার নিয়োগপ্রাপ্ত এলাকায় প্রতিদিন ১২ ঘণ্টা এবং নিয়োগপ্রাপ্ত এলাকার বাইরে সর্বোচ্চ ৮ ঘণ্টা কাজ করার নিয়ম রয়েছে। তবে রেলের স্বার্থে কোনো রানিং স্টাফকে কাজে যুক্ত করা হলে বোনাস মাইলেজ সুবিধায় দেওয়ারও নিয়ম আছে। রেলওয়েতে তীব্র লোকবল সংকট থাকায় অধিকাংশ ক্ষেত্রে রানিং স্টাফদের বিশ্রামকালীন সময়েও কাজ করতে হচ্ছে।
রানিং স্টাফরা এভাবে বিশেষ সুবিধার বিনিময়ে কাজ করে প্রতি মাসেই বিপুল পরিমাণ মাইলেজ জমা করেন তাদের অ্যাকাউন্টে। রেলওয়ে আইনে এ সুবিধাকে ‘পার্ট অব পে’ হিসেবে নির্দিষ্ট করা হয়। তবে সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনে মাইলেজকে নির্দিষ্ট করে দেওয়ায় আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে রেলকর্মীরা।
কেএম/জেডএস