বাংলাদেশ ব্যাংকের ২ শীর্ষ কর্তাকে মাসোহারা দিতেন পিকে হালদার
বাংলাদেশ ব্যাংকের এক নির্বাহী পরিচালক ও সাবেক এক ডেপুটি গভর্নরকে আলোচিত প্রশান্ত কুমার হালদার (পি কে হালদার) মাসোহারা দিতেন। মাথাপিছু দুই লাখ টাকা ঘুষ দিয়ে পিকে হালদার সবকিছু ম্যানেজ করতেন। এমনকি কুকর্ম চাপা দিতে অডিট টিমকেও মোটা অংকের টাকা দিয়ে ভালো রিপোর্ট আদায় করতেন তিনি।
ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স সার্ভিস লিমিটেডের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) রাশেদুল হক আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে এমন তথ্য-উপাত্ত দিয়েছেন বলে এক ঊর্ধ্বতন সূত্র জানা গেছে। মঙ্গলবার (২ ফেব্রুয়ারি) পাঁচ দিনের রিমান্ডে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষ করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুদক উপপরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধান।
বিজ্ঞাপন
জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে রাশেদুল স্বেচ্ছায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে সম্মত হলে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট বাকী বিল্লাহর কাছে জবানবন্দি দেন। এরপর তাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
জবানবন্দির বিষয়ে দুদকের একটি সূত্রে জানা যায়, রাশেদুল হক জবানবন্দিতে বলেন, রিলায়েন্স ফাইন্যান্স ও এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলোচিত প্রশান্ত কুমার হালদারের (পিকে হালদার) নির্দেশেই প্রতিষ্ঠানটিতে ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন। ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স থেকে অর্থ লোপাটের তথ্য ধামাচাপা দিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের এক নির্বাহী পরিচালক ও সাবেক এক ডেপুটি গভর্নরকে মাসিক দুই লাখ টাকা করে মাসোহারা দিতেন। জবানবন্দিতে সবচেয়ে বেশি উঠে এসেছে সাবেক ডেপুটি গভর্নর সিতাংশু কুমার সুর (এস কে) চৌধুরীর নাম। বাংলাদেশ ব্যাংকের অডিট টিমকে ম্যানেজ করতে লাখ লাখ টাকা ঢেলেছেন পিকে হালদার এমনটা দাবি করেছেন জবানবন্দিতে।
যদিও এস কে সুর চৌধুরীর নাম এ প্রথম আসেনি। এর আগে গত ৫ জানুয়ারি যে ২৫ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল হাইকোর্ট সেখানেও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর এস কে সুর চৌধুরী নাম ছিল। তবে নির্বাহী পরিচালকের নাম এ প্রথম বেরিয়ে এসেছে।
এ বিষয়ে তদারককারী কর্মকর্তা দুদক পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, রাশেদুল হক ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তি জবানবন্দি দিয়েছেন। যা আদালতের একজন ম্যাজিস্ট্রেট রেকর্ড করেছেন। আমরা তার জবানবন্দি পাওয়ার পর তা যাচাই-বাছাই করবো। জবানবন্দিতে যাদের নাম আসবে তাদের আইনের মুখোমুখি করা হবে।
গত ২৪ জানুয়ারি বিকেলে সেগুনবাগিচা এলাকা থেকে রাশেদুল হককে গ্রেপ্তার করা হয়। একই দিনে পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেডের চেয়াররম্যান উজ্জ্বল কুমার নন্দীকেও গ্রেপ্তার করে দুদক। পরের দিন দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত থেকে তাদের পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
আলোচিত পি কে হালদার কেলেঙ্কারিতে ৩৫০ কোটি ৯৯ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ৩৩ জন শীর্ষ কর্তাদের বিরুদ্ধে গত ২৫ জানুয়ারি পৃথক পাঁচ মামলা করে দুদক। এর মধ্যে ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের নামে ৭০ কোটি ৮২ লাখ টাকা উত্তোলনপূর্বক আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে। যেখানে আসামি করা হয় পিপলস লিজিংয়ের বর্তমান চেয়ারম্যান উজ্জ্বল কুমার নন্দী ও ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসের সাবেক এমডি রাশেদুল হককে। যদিও অভিযোগ রয়েছে ইন্টারন্যাশনাল লিজিং থেকেই ২ হাজার কোটি টাকার বেশি অর্থ বের করে নিয়েছেন পিকে হালদার।
এর আগে পি কে হালদারের বিরুদ্ধে দায়ের করা ২৭৫ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন ও পাচারের মামলায় তার ব্যক্তিগত আইনজীবী সুকুমার মৃধা, মেয়ে অনিন্দিতা মৃধা, সহযোগী অবন্তীকা বড়াল এবং শংখ ব্যাপারিকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের রিমান্ডেও নেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে শংখ ব্যাপারিও আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
অভিযোগ রয়েছে পি কে হালদার পিপলস লিজিং ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস, পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস, এফএএস ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড ও বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানির (বিআইএফসি) দায়িত্ব পালন করে প্রায় তিন হাজার ৬০০ কোটি টাকা আত্মসাৎ ও পাচার করেছেন।
ক্যাসিনোবিরোধী শুদ্ধি অভিযানের পরপরই প্রশান্ত কুমার হালদারের নাম উঠে আসে। এরই মধ্যে ৮ জানুয়ারি দুদকের অনুরোধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা দিয়ে রেড অ্যালার্ট জারি করেছে ইন্টারপোল। পি কে হালদারের প্রতারণায় সহায়তাকারী ২৪ জনের বিদেশ যেতে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন আদালত। আর এখন পর্যন্ত তার সহযোগী হিসেবে ৬২ জনকে শনাক্ত করেছে এ সংস্থাটি।
আরএম/এসএম