ট্রান্সজেন্ডার বিউটি ভ্লগার সাদ মুআ

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সাদমান আফিফ ওরফে রিশুর সঙ্গে পরিচয় হয় ট্রান্সজেন্ডার নারী বিউটি ভ্লগার সাদ মুআ’র। পরিচয় সূত্রে গত ১০ জানুয়ারি রাজধানীর ভাটারায় একটি রেস্টুরেন্টে দেখা করেন। এরপর তাকে কৌশলে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার ইশতিয়াকের ভাড়া বাসায় নিয়ে যান রিশু। সেখানে ইশতিয়াক, নিরা ও রিশু জোরপূর্বক ভিকটিমকে মারধর, শ্লীলতাহানি ও যৌন নিপীড়ন করার পাশাপাশি ভিডিও ধারণ করেন। 

এসবই তারা করেছেন মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেওয়ার জন্য। তারা ভিকটিমের মোবাইল ফোন, স্বর্ণালঙ্কার ও নগদ টাকা ছিনিয়ে নেন। আরও ১ লাখ টাকা দাবি করেন।

শুধু তাই নয়, পুলিশ ও সামরিক বাহিনীর ভুয়া পরিচয়ে ভীতি প্রদর্শন ও ভুক্তভোগীকে থানায় নিয়ে যাওয়ার কথা বলে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ঘুরিয়ে রামপুরায় নামিয়ে দেয়। 

চাঞ্চল্যকর ও আলোচিত ওই ঘটনায় মূলহোতা ইশতিয়াক আমিন ফুয়াদসহ তিনজনকে রাজধানীর ফার্মগেট ও মহাখালী থেকে গ্রেফতারের পর এ তথ্য জানিয়েছে র‍্যাব। 

রোববার (২৩ জানুয়ারি) বিকেলে কারওয়ান বাজার র‍্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইং পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

তিনি বলেন, গত ১০ জানুয়ারি রাজধানীর ভাটারা এলাকায় একজন খ্যাতনামা বিউটি ভ্লগার ট্রান্সজেন্ডার নারীকে যৌন নির্যাতন ও হত্যাচেষ্টার ঘটনা ঘটে। 

ভিকটিম একজন প্রতিষ্ঠিত কর্মজীবী। তিনি নিজ যোগ্যতা, অধ্যবসায় ও কর্মদক্ষতায় উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন। তিনি দেশের প্রচলিত আইন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি বিশ্বাস ও আস্থার জায়গা থেকে স্ব-উদ্যোগে অপরাধীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণে সচেষ্ট হন। 

ঘটনার প্রেক্ষিতে ভুক্তভোগী গত শুক্রবার (২১ জানুয়ারি) রাজধানীর ভাটারা থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। যার নম্বর ৩৫। মামলার প্রেক্ষিতে র‍্যাব গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে। 

এরই ধারাবাহিকতায় গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে র‍্যাব সদর দফতর গোয়েন্দা শাখা ও র‍্যাব-১ ও র‍্যাব-২ এর যৌথ অভিযানে গতরাত থেকে আজ (রোববার) দুপুর ১টা পর্যন্ত রাজধানীর ফার্মগেট ও মহাখালী এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে ঘটনার মূলহোতা ফুয়াদ আমিন ইশতিয়াক ওরফে সানি (২১), সহযোগী সাইমা শিকদার নিরা ওরফে আরজে নিরা (২৩) ও আব্দুল্লাহ আফিফ সাদমান ওরফে রিশুকে (১৯) গ্রেফতার করা হয়।

অভিযানে ভিকটিমের ছিনিয়ে নেওয়া আইফোন উদ্ধারসহ জব্দ করা হয় প্রতারণার কাজে  ব্যবহৃত অবৈধ ওয়াকিটকি সেট, খেলনা পিস্তল, মোবাইল ও অন্যান্য সামগ্রী। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতাররা ঘটনার সম্পৃক্ততার বিষয়ে বিভিন্ন তথ্য প্রদান করে। 

গ্রেফতারদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, গ্রেফতাররা একটি সংঘবদ্ধ অপরাধী চক্র। গ্রেফতার ইশতিয়াক চক্রের মূলহোতা এবং গ্রেফতার আরজে নীরা ও গ্রেফতার অপর সদস্য সাদমান আফিফ ওরফে রিশু তার অন্যতম সহযোগী।

গ্রেফতাররা বিগত প্রায় দুই বছর যাবত নানাবিধ কৌশলে জিম্মি, ব্ল্যাকমেইল ও প্রতারণা করে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার নারী-পুরুষদের অর্থ হাতিয়ে আসছিল। তারা সাধারণত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে বিভিন্ন জনের সাথে সখ্যতা গড়ে তোলে। অতঃপর কৌশলে বিভিন্ন সময়ের আপত্তিকর ছবি ও ভিডিও ধারণ করে ভিকটিমকে হেনস্থা ও ব্ল্যাকমেইল করে। অপকর্মের জন্য তাদের ভাড়াকৃত বাসা ব্যবহার করে থাকে। যেখানে জোরপূর্বক আপত্তিকর ভিডিওগুলো ধারণ করে ব্ল্যাকমেইল করা হতো।

এছাড়া অনলাইনেও ভিকটিমদের ফাঁদে ফেলে থাকে। এসব অপকর্ম করার ক্ষেত্রে তারা নিজেদেরকে সেনা কর্মকর্তা ও পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবে ভুয়া পরিচয় দিয়ে আসছিল।

গ্রেফতারদের ট্রান্সজেন্ডার নারীকে হেনস্তা ও নির্যাতন সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, কিছুদিন পূর্বে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পরিচয় হয় রিশুর। পরিচয়ের সূত্রে ১০ জানুয়ারি ভাটারা বসুন্ধরা এলাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে রেস্টুরেন্টে ভিকটিমের সঙ্গে সাক্ষাত করে রিশু। সেখান থেকে সারপ্রাইজ দেওয়ার কথা বলে কৌশলে ভিকটিমকে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় ইশতিয়াকের ভাড়াকৃত বাসায় নিয়ে যায়। সেখানেই তিনজন মিলে ভিকটিমকে মারধর, শ্লীলতাহানি ও যৌন নিপীড়ন করার পাশাপাশি ভিডিও ধারণ করে। গ্রেফতার ইশতিয়াকের বিরুদ্ধে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় দুটি মামলা রয়েছে। ইতোপূর্বে বিভিন্ন মামলায় তিনি কারাভোগ করেছেন। গ্রেফতারদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।

জেইউ/এইচকে