রামপাল, পায়রা ও মাতারবাড়ীতে কয়লাভিত্তিক তিনটি বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। প্রকল্পগুলোর জন্য প্রয়োজনীয় কয়লা বিদেশ থেকে আমদানি করা হবে।  জ্বালানি নিরাপত্তার স্বার্থে কয়লা পরিবহনে নিরবচ্ছিন্ন সাপ্লাই চেন গড়ে তোলার জন্য বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন (বিএসসি) ৮০ হাজার টনের দুটি বাল্ক ক্যারিয়ার কেনার প্রকল্প নিয়েছে। 

মঙ্গলবার দুপুরে বিএসসি ভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে এসব তথ্য জানান সংস্থাটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক কমোডোর সুমন মাহমুদ সাব্বির।  

তিনি বলেন, বিএসসির মতো গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় এ প্রতিষ্ঠানে দেশের বর্তমান চাহিদা বিবেচনায় বিভিন্ন ধরন ও  আকারের ন্যূনতম ৪০-৫০টি জাহাজ থাকা উচিত। কিন্তু বিভিন্ন প্রতিকূল কারণে বিশেষ করে প্রয়োজনীয় অর্থের সংস্থান করতে না পারায় সে পরিমাণ জাহাজ বহরে সংযোজন করা সম্ভব হয়নি। তবে বর্তমান সরকারের সুযোগ্য দিক নির্দেশনা ও সক্রিয় সহযোগিতায় এ সংস্থা সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে সরকারের উন্নয়ন সহযোগী ও ব্লু-ইকোনমি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে রূপকল্প-২০৪১ এর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বিশ্বমানের একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ আন্তর্জাতিক শিপিং সংস্থা গড়ে তোলার লক্ষ্যে মিশ্র বাণিজ্যিক জাহাজ বহর সৃষ্টিসহ আনুষঙ্গিক নানা উন্নয়ন পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।

মতবিনিময় সভায় ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেডের ক্রুড অয়েল পরিশোধন ক্ষমতা ভবিষ্যতে দ্বিগুণ হবে। সব ক্রুড অয়েল বিএসসির নিজস্ব জাহাজের মাধ্যমে পরিবহনের জন্য এক লাখ থেকে এক লাখ ২৫ হাজার টন ধারণক্ষমতা সম্পন্ন দুটি নতুন মাদার ট্যাংকার কেনা সংক্রান্ত প্রকল্পও নেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) প্রতি বছর ৩০ লাখ টন ডিজেল অয়েল এবং ৩ লাখ ৫০ হাজার টন জেট ফুয়েল আমদানি করে, যা বিদেশি জাহাজের মাধ্যমে পরিবহন করা হয়। ইস্টার্ন রিফাইনারি কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন দুটি সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং (এসপিএম) উইথ ডাবল পাইপলাইন শীর্ষক প্রকল্প সম্পন্ন হলে আমদানি করা ডিজেল ও জেট ফুয়েল পরিবহনের জন্য দুটি ৮০ হাজার টন ক্ষমতাসম্পন্ন অয়েল ট্যাংকার সংগ্রহের জন্য প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় করা সম্ভব হবে।
 
কমোডোর সুমন মাহমুদ সাব্বির বলেন, ২০২০-২১ অর্থবছরে বিএসসির মোট আয় ৩২২ কোটি ৯৭ লাখ টাকা। এর মধ্যে মোট ব্যয় হয়েছে ২২৭ কোটি ২৭ লাখ টাকা। সমন্বয়ের পর নিট মুনাফা ৭২ কোটি ২ লাখ টাকা, যা আগের বছরের চেয়ে ৩০ কোটি ৫৫ লাখ টাকা বেশি। এবার শেয়ারহোল্ডারদের নিট লাভ থেকে ১২ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।

তিনি বলেন, বিএসসিকে বর্তমান অবস্থা থেকে ঘুরে দাঁড়াতে হবে। এ বিষয়ে এখনই আমরা দৃঢ় প্রত্যয়ী। বর্তমান সরকারের সক্রিয় সহায়তা ও দিকনির্দেশনায় ঘুরে দাঁড়ানোর প্রক্রিয়া আমরা শুরু করেছি। এখন শুধু সামনে এগিয়ে যাবার পালা। নির্ধারিত সময়ে প্রয়োজনীয় সংখ্যক জাহাজ সংগ্রহ ও সেগুলোর সুষ্ঠু পরিচালনাই আমাদের মুখ্য উদ্দেশ্য। প্রকল্পসমূহ বাস্তবায়নের মাধ্যমে বিএসসি তার হারানো ঐতিহ্য অচিরেই ফিরে পাবে বলে আশা প্রকাশ করেন।

২৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠেয় বিএসসির ৪৪তম বার্ষিক সাধারণ সভা উপলক্ষে এ মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন বিএসসির নির্বাহী পরিচালক (বাণিজ্য) ড. পীযুষ দত্ত, নির্বাহী পরিচালক (প্রযুক্তি) মোহাম্মদ ইউসুফ, সচিব মুহম্মদ আশরাফ হোসেন, মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) মো. আশরাফুল আমিন প্রমুখ।  

কেএম/আরএইচ