শিমুকে হত্যা করেন স্বামী, লাশ গুম করেন ফরহাদ
চলচ্চিত্র অভিনেত্রী রাইমা ইসলাম শিমুর বস্তাবন্দি মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় সংবাদ সম্মেলন করেছেন ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) মারুফ হোসেন সরদার। সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানান, শিমুকে হত্যা করেছেন স্বামী নোবেল আর লাশ গুমে সহায়তা করেছেন নোবেলের বন্ধু ফরহাদ।
মঙ্গলবার (১৮ জানুয়ারি) দুপুরে ওই ঘটনার বিষয়ে ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসপি মারুফ বলেন, এই ঘটনার পর আমরা শিমুর স্বামী নোবেল ও বন্ধু ফরহাদকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে আসি। জিজ্ঞাসাবাদে তাদের সংশ্লিষ্টতা প্রতীয়মান হওয়ায় তাদের গ্রেফতার করা হয়। এরপর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে নোবেল তার স্ত্রীকে হত্যার কথা স্বীকার করেছেন।
বিজ্ঞাপন
হত্যার কারণ জানতে চাইলে পুলিশ সুপার বলেন, দীর্ঘদিন ধরে পারিবারিক ও দাম্পত্য কলহ থাকায় তাকে (শিমু) হত্যা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন নোবেল। আর হত্যার পর লাশ গুমে তিনি বন্ধু ফরহাদের সহযোগিতা নেন।
মারুফ হোসেন সরদার বলেন, সোমবার সকাল ১০টায় স্থানীয়ভাবে সংবাদ পেয়ে কেরানীগঞ্জ থানার হযরতপুর ইউপির আলীপুর ব্রিজ থেকে ৩০০ গজ উত্তর পাশে বস্তাবন্দি অবস্থায় একটি মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। মৃতদেহের সুরতহাল তথ্য প্রস্তুত করে এর পরিচয় শনাক্ত করার জন্য আঙ্গুলের ছাপ নেওয়া হয় এবং পোস্টমর্টেমের জন্য মৃতদেহটি মিটফোর্ড হাসপাতালে পাঠানো হয়। পরবর্তীতে তথ্য প্রযুক্তির সাহায্যে মৃতদেহের নাম পরিচয় শনাক্ত করা সম্ভব হয়।
তিনি বলেন, তদন্তকালে জানা যায়, মৃতদেহটি চলচ্চিত্র অভিনেত্রী রাইমা ইসলাম শিমুর। তার বয়স ৪১ এবং তিনি সপরিবারে ঢাকার গ্রিন রোড এলাকায় বসবাস করেন। মৃতদেহের নাম পরিচয় ও ঠিকানা পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এ চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলার মূল রহস্য উদঘাটন করার জন্য পুলিশ সুপার ঢাকার নির্দেশনায় কেরানীগঞ্জ থানা পুলিশ ব্যাপক তৎপরতা শুরু করে। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে গুরুত্বপূর্ণ আলামত সংগ্রহ করে।
পুলিশ সুপার বলেন, তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশ চলচ্চিত্র অভিনেত্রী শিমুর বাসায় যায় এবং এ হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটনের জন্য তথ্য প্রমাণ সংগ্রহ করা শুরু করে। খুনিরা যদিও খুবই পরিকল্পিতভাবে লাশটি কেরানীগঞ্জ মডেল থানার হযরতপুরে ফেলে যায়, তবে তারা কিছু চিহ্ন রেখে যায়। আমরা তাৎক্ষণিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ আলামত জব্দ করি এবং জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ভিকটিম শিমুর স্বামী খন্দকার শাখাওয়াত আলীম নোবেল ও তার বন্ধু এস এম ওয়াই আব্দুল্লাহ ফরহাদকে রাতেই কেরানীগঞ্জ মডেল থানায় নিয়ে আসি।
মারুফ হোসেন সরদার বলেন, তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদের ফলে চলচ্চিত্র অভিনেত্রী শিমুর স্বামী খন্দকার শাখাওয়াত আলীম নোবেল ও তার বাল্যবন্ধু এস এম ওয়াই আব্দুল্লাহ ফরহাদের এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়। বিভিন্ন পারিবারিক বিষয়কে কেন্দ্র করে শিমুর সঙ্গে নোবেলের দাম্পত্য কলহ শুরু হয়। এর জেরেই তাকে হত্যা করা হয়।
মৃত্যুর বিষয়ে তিনি বলেন, দাম্পত্য কলহের জেরে রোববার আনুমানিক সকাল ৭-৮ টার মধ্যে খুন হন শিমু। শিমুর লাশ গুমের চেষ্টায় যে গাড়ি ব্যবহার করা হয়েছে সেটি জব্দ করে থানায় নিয়েছি এবং অন্যান্য আলামত সংগ্রহ করেছি। তবে কীভাবে তাকে হত্যা করা হয়েছে এ বিষয়টি এখনই বলা যাচ্ছে না। তদন্তের পর বলতে পারব।
এ ঘটনায় কেরানীগঞ্জ মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা প্রক্রিয়াধীন আছে।
এআর/এমএসি/আইএসএইচ