অভিনেত্রী রাইমা ইসলাম শিমু।

চিত্রনায়িকা রাইমা ইসলাম শিমুর (৩৫) বস্তাবন্দি মরদেহ উদ্ধারের পর তার স্বামী শাখাওয়াত আলী নোবেল এবং তার বন্ধু ফরহাদকে গ্রেফতার করেছে কেরানীগঞ্জ থানা পুলিশ।

মঙ্গলবার (১৮ জানুয়ারি) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করেন ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) মারুফ হোসেন সরদার।

তিনি জানান, সোমবার রাতে শিমুর স্বামী শাখাওয়াত আলী নোবেল এবং তার বন্ধু ফরহাদকে গ্রেফতার করা হয়। এ বিষয়ে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। মঙ্গলবার দুপুরে ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিস্তারিত জানানো হবে। 

আজ (মঙ্গলবার) দুপুরে ঢাকা পোস্টকে শিমুর বোন ফাতিমা নিশা বলেন, রোববার সন্ধ্যার দিকে আমার কাছে একটি ফোন আসে আমার বোন অভিনেত্রী রাইমা ইসলামকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। আমি তখন আমার বোনের ফোন নাম্বারে বারবার কল দেই। নাম্বার বন্ধ পাচ্ছিলাম। পরে আমি আমার বোনের মেয়েকে ফোন দেই। বলি, তোমার আম্মু কোথায়? সে আমাকে বলে, মা সকালে একা বের হয়েছে এখনো বাসায় ফেরেনি।

তারপর আমি আমার বোনের স্বামী শাখাওয়াত আলী নোবেল ভাইকে ফোন দেই। তাকে ফোন দিয়ে বলি, ভাইয়া, দিদি কোথায়? তার ফোন তো বন্ধ পাচ্ছি। তখন তিনি আমাকে বলেন, আমিতো বিষয়টি জানি না। এছাড়া সারাদিনে আমি তাকে ফোন দেইনি। তার নাম্বার যে বন্ধ সেটাও আমি জানি না। এরপর গতকাল আমার বোনের মরদেহ উদ্ধারের বিষয়টি আমরা জানতে পেরেছি। তাকে কেউ হত্যা করে এভাবে বস্তাবন্দি অবস্থায় ফেলে রেখে যাবে আমরা একটা চিন্তাই করতে পারছি না। আমার একমাত্র বোন সে।

ফাতিমা নিশা বলেন, যেহেতু আমার বোনের মরদেহটি কেরানীগঞ্জ মডেল থানা এলাকা থেকে উদ্ধার হয়েছে আমরা এখন সেখানে যাচ্ছি। কখন তার মরদেহ আমাদের কাছে হস্তান্তর করা হবে এবং এই বিষয়ে থানায় মামলার করার প্রস্তুতিও আমরা নিয়েছি।

রাইমার মৃত্যুর বিষয়ে তারা কি সন্দেহ করছেন এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, যেভাবে তার মরদেহ উদ্ধার হয়েছে এটাতে নিশ্চিত তাকে কেউ হত্যা করেছে। তবে তাকে কী কারণে এভাবে হত্যা করা হয়েছে তা আমরা চিন্তাই করতে পারছি না। কে বা কারা হত্যা করেছে তাও আমরা সন্দেহ করতে পারছি না।

শিমুর স্বামী নোবেলের উপর তাদের কোনো সন্দেহ আছে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তাদের ১৮ বছরের সংসার জীবন। নোবেল ভাই আমার বোনকে হত্যা করেছে এটা আমরা চিন্তা করি না। তার বিষয়ে এরকম চিন্তাভাবনা আমাদের মাথায় আসতেছে না। তবে আমরা শুনেছি তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাকে নিয়ে গেছে। এই বিষয়ে আমরা কাউকে এখন পর্যন্ত সন্দেহ করতে পারছি না।

এদিকে বিভিন্ন সূত্রের মাধ্যমে জানা যাচ্ছে, অভিনেত্রী রাইমা মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় তার স্বামীসহ একাধিক ব্যক্তিকে আটক করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।

কেরানীগঞ্জ মডেল থানার উপ-পরিদর্শক চুন্নু মিয়া ঢাকা পোস্টকে বলেন, এ ঘটনায় কে বা কারা সংশ্লিষ্ট থাকতে পারেন তা পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। আরও কেউ জড়িত থাকার সন্দেহ হলে আটক করা হবে।

অন্যদিকে গত রোববার রাইমার স্বামী কলাবাগান থানায় একটি জিডি করেন তার স্ত্রী নিখোঁজ হওয়ার বিষয়ে।

এ বিষয়ে কলাবাগান থানার উপ-পরিদর্শক বিপ্লব হাসান ঢাকা পোস্টকে বলেন, অভিনেত্রী রাইমা নিখোঁজ হওয়ার পর তার স্বামী নোবেল রোববার রাতে আমাদের কাছে একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। পরে গতকাল তার মরদেহ উদ্ধার হয়েছে বলে আমরা জানতে পেরেছি। যেহেতু মরদেহটি কেরানীগঞ্জে উদ্ধার হয়েছে সেখানে থানাতেই পরবর্তী অভিযোগ বা মামলা হবে। তবে এ বিষয়ে আমরাও কাজ করছি কেউ জড়িত থাকলে গ্রেফতার করার জন্য।

সোমবার (১৭ জানুয়ারি) সকাল ১০টার দিকে কেরানীগঞ্জের হযরতপুর ব্রিজের কাছে নায়িকা রাইমা ইসলাম শিমুর বস্তাবন্দি মরদেহ পাওয়া যায়। এরপর কেরানীগঞ্জ থানা পুলিশ মরদেহটি স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ (মিটফোর্ড) হাসপাতালের মর্গে নিয়ে যায়।

ঢাকা পোস্টকে তথ্যটি নিশ্চিত করেছেন কেরানীগঞ্জ মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) কাজি রমজানুল হক। তিনি বলেন, ‘নায়িকা রাইমা ইসলাম শিমুর মরদেহ আজ (সোমবার) সকালে কেরানীগঞ্জ মডেল থানাধীন হযরতপুর ইউনিয়নের আলিপুর নামক স্থানে একটি ব্রিজের নিচে থেকে বস্তাবন্দী অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। মরদহের গলায় একটি দাগও রয়েছে। মরদেহটি উদ্ধার করে আমরা স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠিয়ে দিয়েছি। শিমু নিখোঁজ হওয়ার এ বিষয়ে কলাবাগান থানায় একটি জিডি হয়েছিল।’

প্রাথমিকভাবে এটি হত্যাকাণ্ড মনে হচ্ছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘যেহেতু মরদেহটি বস্তাবন্দি ছিল এবং গলায় দাগ ছিল সেহেতু আমরা প্রাথমিকভাবে ধারণা করছি এটি হত্যাকাণ্ড। তবে এ বিষয়ে আমরা তদন্ত করছি। তবে এ বিষয়ে এখনো কোনো অভিযোগ আমাদের কাছে আসেনি।’

এদিকে ঢাকাই সিনেমার আরেক নায়িকা সাদিয়া মির্জা জানিয়েছেন, গত রোববার (১৬ জানুয়ারি) সকাল থেকে শিমু নিখোঁজ ছিলেন। একদিন পর সোমবার তার মরদেহ পাওয়া গেছে।

উল্লেখ্য, শিমু ১৯৯৮ সালে সিনেমায় আত্মপ্রকাশ করেছিলেন। ২০০৪ সাল পর্যন্ত নিয়মিত বড় পর্দায় দেখা গেছে তাকে। প্রথম সারির পরিচালকদের সিনেমায় অভিনয় করেছিলেন শিমু। গত কয়েক বছর ধরে তিনি নাটকের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। 

স্বামী ও দুই সন্তান নিয়ে শিমু রাজধানীর গ্রিনরোড এলাকার বাসায় থাকতেন। সিনেমার পাশাপাশি নাটকে নিয়মিত অভিনয় করতেন শিমু। সাম্প্রতিক সময়ে ফ্যামিলি ক্রাইসিস নামে একটি ধারাবাহিক নাটকে কাজ করেছেন। ২৩টির মতো সিনেমায় অভিনয় করেছেন। ৫০টিরও বেশি নাটকে অভিনয়ের পাশাপাশি প্রযোজনাও করেছেন তিনি।

এমএসি/এইচকে