মাত্র ২০ হাজার টাকায় রংপুরে অবস্থিত বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি করিয়ে দেওয়ার ভুয়া বিজ্ঞাপন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দিত চক্রটি। তাদের এ প্রলোভনে শিক্ষার্থীরা পা বাড়ালে প্রতারণা করে হাজার হাজার টাকা হাতিয়ে নিত চক্রটি।

এমনই প্রতারণার সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে চক্রটির মূলহোতা মেহেদী হাসানকে গ্রেফতার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) সাইবার পুলিশ সেন্টার। এ সময় তার কাছ থেকে বিকাশে লেনদেনের সিমসহ মোট ১০টি সিম, তিনটি মোবাইল ফোন এবং একটি ল্যাপটপ জব্দ করা হয়।

সোমবার (১৬ জানুয়ারি) বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সিআইডির সাইবার পুলিশ সেন্টারের এসএসপি মুহাম্মদ রেজাউল মাসুদ।

তিনি বলেন, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক প্রথম বর্ষে ভর্তির জন্য একটি প্রতারক চক্র সক্রিয় হয়ে উঠেছে এমন তথ্য পাই। সাইবার টিম জানতে পারে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে জালিয়াতি করে ভর্তির প্রলোভন দিয়ে যাচ্ছে একটি অসাধু চক্র। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তির বিষয়ে ভুয়া তথ্য সরবরাহ করে প্রতারণার মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অর্থও হাতিয়ে নিচ্ছে তারা। ‘brur চান্স ১০০% করে দিব’ নামের গ্রুপ থেকে একটি বার্তা সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে শেয়ার করা হয়।

ওই বার্তায় বলা হয়, যারা বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পায়নি, তাদের চান্স পাইয়ে দেব। এতে খরচ হবে ২০ হাজার টাকা। অগ্রিম পেমেন্ট করতে হবে ৮৫০ টাকা। একই গ্রুপ থেকে আরেকটি বার্তা শেয়ার করা হয়। সেখানে লেখা ছিল, ‘যারা রেজাল্ট চেঞ্জ করার জন্য ৮৫০ টাকা দিয়েছেন তাদের রেজাল্ট চেঞ্জ হয়েছে। বিকেল ৫টার সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে রেজাল্ট পাবেন। বাকি টাকা ভর্তির পর দেবেন।’

তিনি বলেন, এসব বিজ্ঞাপন দেখে সিআইডি সাইবার টিম এ ব্যাপারে তৎপর হয়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। অনুসন্ধান চালানো হয় বেশ কয়েকদিন। অবশেষে প্রতারক চক্রকে শনাক্ত করে সিআইডি। অনুসন্ধানে জানা যায়, এ প্রতারক চক্রটি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়সহ আরও অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি জালিয়াতির সঙ্গেও যুক্ত। এ পদ্ধতি অবলম্বন করে চক্রটি বিভিন্ন মোবাইল নম্বর ও হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ ব্যবহার করে প্রতারণার মাধ্যমে টাকা হাতিয়ে নিত।

এসএসপি মুহাম্মদ রেজাউল মাসুদ আরও বলেন, সর্বশেষ সিআইডির সাইবার টিম আজ নড়াইল জেলার লোহাগড়া থেকে প্রতারক চক্রের মূলহোতা মেহেদী হাসানকে গ্রেফতার করে।

মেহেদী হাসান প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, সে ২০১৭ সাল থেকে বিভিন্ন সময় প্রতারণার মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ টাকা আত্মসাৎ করে। প্রতারক চক্র মূলত হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তিচ্ছুদের সঙ্গে যোগাযোগ করত। তাদের দেওয়া নম্বরে যোগাযোগ করলে বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাইয়ে দেওয়ার জন্য আশ্বস্ত করা হতো এবং নিবন্ধনের টাকা দেওয়ার জন্য বাধ্য করা হতো। বিশ্ববিদ্যালয়রে ভর্তির রেজাল্টের পর হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ বন্ধ করে দেওয়া হতো। সঙ্গে এডমিন নম্বর এবং বিকাশ নম্বরও বন্ধ করে দেওয়া হতো।

গ্রেফতারের বিরুদ্ধে রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের তাজহাট থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে বলেও তিনি জানান।

এমএসি/এসএসএইচ