গ্লাস কোম্পানির মাদক কারবারের তথ্য দেওয়ায় সায়মন হত্যা
কেরানীগঞ্জে মাদক কারবারের একটি সিন্ডিকেট ‘গ্লাস কোম্পানি’। চক্রটির কয়েক সদস্য সম্পর্কে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে তথ্য দিয়েছিলেন সায়মন। তার তথ্যেই মাদক কারবারিদের কজন গ্রেফতার হন। চক্রটির মূলহোতা গ্লাস সুমন ও সহযোগীদের সন্দেহ ছিল সাময়নই তথ্য দিয়ে গ্রেফতার করিয়েছেন। তাকে উচিত শিক্ষা দিতেই হাত-পায়ের রগ কেটে হত্যা করেন তারা।
ঢাকার কেরানীগঞ্জে চাঞ্চল্যকর সায়মন হত্যাকাণ্ডের মূলহোতা মো. সুমন ওরফে গ্লাস সুমনসহ পাঁচজনকে ঢাকার কেরানীগঞ্জ থেকে গ্রেফতারের পর এসব তথ্য জানিয়েছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।
বিজ্ঞাপন
সোমবার বিকেলে রাজধানীর কারওয়ান বাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইং পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ১৫ জানুয়ারি ঢাকার কেরানীগঞ্জ এলাকায় সায়মন ওরফে নুরে আলমকে (২৫) ধারালো বিভিন্ন অস্ত্র দিয়ে হাত ও পায়ের রগ কেটে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। ওই ঘটনায় নিহত সায়মনের ভাই আরস আলম ঢাকা কেরানীগঞ্জ মডেল থানায় সাত-আটজন অজ্ঞাতনামা আসামির বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
তিনি বলেন, র্যাব সদর দফতরের গোয়েন্দা শাখা ও র্যাব-১০ এর অভিযানে রোববার দিবাগত রাত থেকে আজ (সোমবার) ভোর পর্যন্ত ঢাকার কেরানীগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে হত্যাকাণ্ডের মূলহোতা সুমন ওরফে গ্লাস সুমন (২৯), সোহাগ ওরফে লম্বু সোহাগ (২৮), শরীফ ওরফে গরীব (২৯), জনি ওরফে হর্স পাওয়ার জনি (৩২) ও হারুনকে (৩২) গ্রেফতার করা হয়েছে। হত্যায় ব্যবহৃত সুইচগিয়ার ও অন্যান্য ধারালো অস্ত্র উদ্ধার করা হয়।
কমান্ডার মঈন বলেন, গ্রেফতার গ্লাস সুমন একটি মাদক সিন্ডিকেটের মূলহোতা। তিনি দীর্ঘদিন ধরে মাদক কারবারের সঙ্গে জড়িত। কেরানীগঞ্জসহ পার্শ্ববর্তী এলাকায় তিনি ‘গ্লাস কোম্পানি’ নামে একটি মাদক সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন বলে জানা যায়। এতে সক্রিয় সদস্য সংখ্যা ১২-১৫ জন।
সায়মনকে কেন হত্যার শিকার হতে হলো— জানতে চাইলে র্যাবের এ কর্মকর্তা বলেন, আমরা গ্রেফতারদের জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। তারা হত্যার কারণ সম্পর্কে জানিয়েছেন। কিছুদিন আগে সায়মন ‘গ্লাস কোম্পানি’ মাদক সিন্ডিকেটের কয়েকজন সদস্য সম্পর্কে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে তথ্য দেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে মাদক সিন্ডিকেটের কয়েকজন গ্রেফতার হন। চক্রটি সন্দেহ করে যে, সায়মনই তথ্য দিয়েছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে।
উচিত শিক্ষা দিতেই হাত-পায়ের রগ কেটে সায়মন হত্যা
র্যাব জানায়, প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে গ্রেফতাররা হত্যাকাণ্ডটি সংঘটিত করে। তাদের সন্দেহ ছিল সায়মনের দেওয়া তথ্যের কারণে তাদের কয়েকজনকে গ্রেফতার হতে হয়। এজন্য ঘটনার কয়েক দিন পূর্বে বালুরচর মুক্তিরবাগ বালুর মাঠে বসে গ্লাস সুমনের নেতৃত্বে হত্যাকাণ্ডের চূড়ান্ত পরিকল্পনা হয়। পরিকল্পনায় পাঁচ-ছয়জন অংশ নেন।
পরিকল্পনা অনুযায়ী গত ১৫ জানুয়ারি গ্লাস সুমন সিন্ডিকেটের সদস্যরা সায়মনকে বাসা থেকে ডেকে নিয়ে যান মুক্তিরবাগ বালুর মাঠে। সেখানে চেপে ধরে তার হাত ও পায়ের রগ কেটে দেওয়া হয়। তাকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে গুরুতর আহত করে স্থান ত্যাগ করেন তারা।
হত্যা মামলায় গ্রেফতার হারুন তথ্য দিয়ে হত্যাকারীদের সহযোগিতা করেন বলে জানা যায়। প্রায় ৩০ মিনিট ধরে তারা মিশনটি চালান। গ্লাস সুমনের নেতৃত্বে সাত থেকে আটজন সক্রিয়ভাবে কিলিং মিশনে অংশ নেন। পরে স্থানীয়রা চিৎকার শুনে ঘটনাস্থলে গিয়ে সায়মনকে উদ্ধার করে মিটফোর্ড হাসপাতালে নিয়ে যান। কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
গ্রেফতার সুমন ওরফে গ্লাস সুমন হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী। তিনি হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা থেকে শুরু করে হত্যাকাণ্ডের সময় সশরীরে উপস্থিত থেকে ভুক্তভোগীর রগ কাটেন। লম্বু সোহাগ, শরীফ ও গরীবুল্লাহ রগ কাটায় অংশ নেন।
গ্রেফতার সুমনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় মাদক ও ছিনতাইয়ের পাঁচটি মামলা রয়েছে। তিনি আগে গ্লাসের দোকানে কাজ করতেন এবং ভাঙা গ্লাস দিয়ে মানুষকে বিভিন্ন সময়ে আক্রমণ ও জখম করতেন। এ কারণে তিনি এলাকায় ‘গ্লাস সুমন’ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন। গ্রেফতার সোহাগ ওরফে লম্বু সোহাগ, জনি ওরফে হর্স পাওয়ার জনি ও হারুনের বিরুদ্ধে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। গ্রেফতারদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।
জেইউ/আরএইচ