রাজধানীর পান্থপথ এলাকায় গত ২৫ নভেম্বর ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ময়লাবাহী একটি গাড়ির ধাক্কায় মোটরসাইকেল আরোহী মো. আহসান কবির খান নামে এক ব্যক্তি মারা যান। এ ঘটনার তদন্ত প্রতিবেদন তৈরি করেছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। 

বৃহস্পতিবার রাতে তদন্ত প্রতিবেদন সম্পর্কে বিস্তারিত জানিয়েছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা আবুল বাশার মোহম্মদ তাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, বিষয়টির সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে ডিএনসিসি ওইদিনই কমোডর এস এম শরিফ-উল ইসলামকে (প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা) আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে। এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে কমিটি বেশ কিছু মতামত এবং সুপারিশ দেয়।

তদন্ত কমিটির মতামত

প্রত্যক্ষদর্শী ও আশেপাশের মানুষের বক্তব্য অনুযায়ী ট্রাফিক সিগন্যাল ছাড়ার মুহূর্তে গাড়িগুলো চলা শুরু করলে মোটরসাইকেল আরোহী মো. আহসান কবির খান মোটরসাইকেল থেকে ডান দিকে পড়ে গিয়ে ডাম্প ট্রাকের পেছনের বাম দিকের চাকায় পিষ্ট হয়ে দুর্ঘটনাটি সংঘটিত হয়। 

মামলার আসামি ও ময়লার ট্রাকের চালক মো. হানিফের (ফটিক) বক্তব্য অনুযায়ী, মোটরসাইকেলটি প্রতিবন্ধকতার কারণে ওভারটেকিংয়ে ব্যর্থ হয়ে ব্রেক চাপলে আরোহী মো. আহসান কবির খান ছিটকে পড়ে ময়লার ট্রাকের পিছনের চাকার নিচে পিষ্ট হন।

স্পষ্ট সিসি ক্যামেরা ফুটেজ কিংবা দুর্ঘটনা সংঘটিত হওয়ার মুহূর্তের প্রত্যক্ষদর্শী না থাকায় ঘটনাটি সঠিকভাবে নিরূপণ করা সম্ভব হয়নি। পারিপার্শ্বিক এবং নিহতের পরিবারের সহিত আলোচনায় প্রতীয়মান হয়, মোটরসাইকেল চালকের সহিত আরোহী মো. আহসান কবির রাইড শেয়ারিং অবস্থায় ছিলেন। দুর্ঘটনা সংগঠিত গাড়িটির কোনো রেজিস্ট্রেশন ও ফিটনেস সার্টিফিকেট ছিল না। তবে চালক মো. হানিফের (ফটিক) কোনো ভারী গাড়ি চালানোর লাইসেন্স ছিল না, কিন্তু হালকা গাড়ি চালানোর বৈধ লাইসেন্স ছিল।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের নিয়মিত ড্রাইভার বিশেষত ভারী গাড়ির চালকের স্বল্পতার কারণে ড্রাইভার ছাড়াও পরিচ্ছন্নতাকর্মী কর্তৃক বিভিন্ন বিভাগে গাড়ি চালানো হয়।

পরিবহন, যান্ত্রিক সার্কেল ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রদত্ত তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের অধিকাংশ গাড়ির রেজিস্ট্রেশন ও ফিটনেস সার্টিফিকেট হালনাগাদ নেই। এছাড়াও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মোট গাড়ির বিপরীতে প্রয়োজনীয় সংখ্যক চালক নেই এবং অধিকাংশ চালকের ড্রাইভিং লাইসেন্স হালনাগাদ করা হয়নি।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের পরিবহন বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, গাড়িচালকদের জন্য কোনো প্রাতিষ্ঠানিক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নেই এবং বর্জ্যবাহী গাড়িতে উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ কর্তৃক নিয়োজিত হেলপার বা সেকেন্ড সিটার নাই। তাছাড়া ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের বর্জ্যবাহী গাড়িগুলো বেশিরভাগ সময় দিনের বেলা বর্জ্য পরিবহন করে থাকে।

কমিটির সুপারিশ

হালকা গাড়ির লাইসেন্স নিয়ে ভারী গাড়ি চালানোর কারণে চালক মো. হানিফকে (ফটিক) দোষী সাব্যস্ত করা যেতে পারে। চালক মো. হানিফ (ফটিক) মোটরসাইকেলটিকে দৃষ্টি গোচর করতে ব্যর্থ হওয়ায় এবং ডাম্প ট্রাকটির গতি নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হওয়ায় দুর্ঘটনাটি সংগঠিত হয়েছে বলে তাকে দোষী সাব্যস্ত করা যেতে পারে।

এছাড়া চালক মোটরসাইকেলটি নিয়ন্ত্রণ করতে না পারায় আরোহী মোটরসাইকেল থেকে ডানদিকে পড়ে ডাম্প ট্রাকের পিছনের চাকায় পিষ্ট হয়ে নিহত হওয়ায় মোটরসাইকেল চালককেও দোষী সাব্যস্ত করা যেতে পারে। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন কর্তৃক নিহতের পরিবারের দেখভালের দায়িত্ব নেওয়া, সড়ক নিরাপত্তা আইন এবং নিরাপদ গাড়ি চালানোর বিষয়ে ড্রাইভারদের নিয়মিত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা, চালকদের হালনাগাদ লাইসেন্স থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করা, হালকা লাইসেন্সধারীদের দিয়ে ভারী গাড়ি চালানো নিষিদ্ধ করাসহ গাড়িসমূহের রেজিস্ট্রেশন ও ফিটনেস নিয়মিত হালনাগাদ করা ছাড়াও শূন্য পদের বিপরীতে দ্রুত নতুন গাড়িচালক নিয়োগ দেওয়া, গাড়ির সংখ্যানুপাতে নতুন গাড়িচালকের পদ সৃজনপূর্বক নিয়োগ দেওয়াসহ বেশ কিছু সুপারিশ করা হয়েছে।

কী উদ্যোগ নিয়েছে ডিএনসিসি

সংগঠিত দুর্ঘটনার পর ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন কর্তৃক নিহতের পরিবারের দেখভালের দায়িত্ব নেওয়া হয়েছে বলে ডিএনসিসির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। এছাড়া কেন্দ্রীয় পুলের ৪৪টি গাড়ির রেজিস্ট্রেশন, ফিটনেস ও ট্যাক্স টোকেন হালনাগাদ করা হয়েছে। স্থানীয় সরকার বিভাগের মাধ্যমে প্রদানকৃত ৫৬টি বর্জ্যবাহী গাড়ির রেজিস্ট্রেশন কার্যক্রম ডিএনসিসির নিজস্ব অর্থায়নে সম্পন্ন করার জন্য মেয়র অনুমোদন দিয়েছেন। সে অনুযায়ী কার্যক্রম গ্রহণ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে ডিএনসিসি।

অন্যদিকে হালকা লাইসেন্সধারী চালকদের ভারী লাইসেন্স প্রদানের জন্য বিআরটিএর মাধ্যমে প্রশিক্ষণের জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে পাশাপাশি মেয়র সব চালকের উপস্থিতিতে একটি সভার মাধ্যমে অধিকতর সতর্কতা অবলম্বন করে গাড়ি চালানোর নির্দেশনা প্রদান করেছেন।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে ডিএনসিসির সব গাড়িতে ড্যাশবোর্ড ক্যামেরা স্থাপনসহ ভার্চুয়াল পরিবহনপুল গঠনের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এছাড়া বর্জ্যবাহী গাড়ি সন্ধ্যার পর থেকে সকাল সাতটা পর্যন্ত চালানোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

এএসএস/আরএইচ