ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে মাইক্রোবাসে যাত্রী ও চালক সেজে সর্বস্ব ছিনিয়ে নেওয়া আন্তঃজেলা ডাকাত দলের সক্রিয় ৬ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এই চক্রটি যাত্রীদের কাছে থেকে টাকা-মোবাইল ফোনসহ বিকাশে থাকা টাকাও ট্রান্সফার করে নিত।

বৃহস্পতিবার ( ১৩ জানুয়ারি ) চট্টগ্রামের দামপাড়ায় সিএমপির মিডিয়া কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন ) মো. শামসুল আলম।

তিনি বলেন, বুধবার (১২ জানুয়ারি) রাতে পাহাড়তলী থানার অলংকার মোড় থেকে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ, আকবর শাহ ও পাহাড়তলী থানা পুলিশের যৌথ অভিযানে তাদের গ্রেফতার করা হয়।

অন্তঃজেলা ডাকাত দলের সদস্যরা হলেন; মো. শাহ আলম আকন, মো. আবুল কালাম (৪৭), মো. জাকির হোসেন  সাঈদ (৩৬), মো. আল আমিন (২৯), মো. মিজানুর রহমান টান মিয়া (৫৩ ) ও মো. নাহিদুল ইসলাম হারুন (৩১)।

মো. শামসুল আলম বলেন, গত ১৯ ডিসেম্বর বিকেলে ৩টায় মিরসরাইয়ের জোরারগঞ্জ যাওয়ার জন্য অলংকার বাসস্ট্যান্ডে অপেক্ষা করছিলেন দুবাই প্রবাসী হোসেন মাস্টার। এ সময় একটি মাইক্রোবাসের চালক তাকে ১০০ টাকা ভাড়ায় গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়ার প্রস্তাব দেন। তখন চারজন ডাকাত নিজেদের যাত্রী পরিচয় দিয়ে মাইক্রোবাসের সামনে এসে দাঁড়ায়। চার যাত্রী দেখতে পেয়ে হোসেন মাইক্রোবাসে উঠেন। কিন্তু কিছু পথ যাওয়ার পর মাইক্রোবাসে যাত্রী বেশে থাকা চারজন তাদের সঙ্গে থাকা হাতুড়ি এবং স্ক্রু ড্রাইভার দিয়ে তাকে আঘাত করে গুরুতর আহত করে।

এ সময় তার কাছে থাকা নগদ ১০ হাজার টাকা, ২টি স্বর্ণের আংটি, ১টি মোবাইল ফোন ও তার পাসপোর্ট ছিনিয়ে নেয়। এক পর্যায়ে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম থানার উত্তর বেতিয়ারায় তাকে ফেলে যায় ছিনতাইকারীরা। স্থানীয় লোকজন হোসেন মাস্টারকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে চিকিৎসা দেয়। পরে আত্মীয়রা হোসেন মাস্টারকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন। চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ২০ ডিসেম্বর তার মৃত্যু হয়। এই ঘটনায় পাহাড়তলী থানায় মামলা দায়ের করা হয়। ওই মামলার ছায়া তদন্ত করতে গিয়ে পুলিশ ডাকাত দলের ছয়জনকে গ্রেফতার করছে। 

তিনি বলেন, ডাকাত দলের এ চক্রটি গতকাল বুধবার জোরারগঞ্জ থানার বারইয়ারহাট এলাকায় একজন বিদেশগামী যাত্রীকে গাড়িতে তুলে পাসপোর্ট, ভিসা এবং নগদ টাকা ছিনিয়ে নেয়। গ্রেফতার হওয়ার আগে অলংকার মোড়ে আরেকটি ডাকাতি করার জন্য অপেক্ষায় ছিল তারা। 

চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের এডিসি (ডিবি-বন্দর) নোবেল চাকমা বলেন, গোয়েন্দা তথ্য বিশ্লেষণ ও গোপন তথ্যের ভিত্তিতে অলংকার মোড় থেকে তাদের আটক করা হয়। এ সময় ডাকাতির কাজে ব্যবহার করা একটি মাইক্রোবাস, হাতুড়ি, স্ক্রু-ড্রাইভার, প্লাস, ২টি টিপ চুরি, ১টি গামছা, ১০টি মোবাইল সেট, ১টি পাসপোর্ট এবং একটি ভিসার কপি জব্দ করা হয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে শাহ আলম, আবু কালাম, জাকির ও আল আমিন হোসেন মাস্টারের ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে। 

তিনি আরও বলেন, আসামিদের বাড়ি বরিশাল বিভাগে। সেখান থেকে ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কে এসে মাইক্রোবাস ব্যবহার করে যাত্রী ও ড্রাইভার সেজে গাড়িতে টার্গেট করা যাত্রী তুলে সবকিছু ছিনিয়ে নেয়। তারা সংঘবদ্ধ আন্তঃজেলা ডাকাত দলের সক্রিয় সদস্য। তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় একাধিক মামলা রয়েছে।

নোবেল চাকমা আরও বলেন, এ চক্রে ১০ থেকে ১২ জন সদস্য রয়েছে। আমরা ছয়জনকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছি। বাকি চারজনের নাম পেয়েছি। তাদের গ্রেফতারে আমাদের অভিযান চলবে। ডাকাত চক্রটি বরিশাল ও বরগুনা থেকে মাইক্রোবাসে করে এসে ঢাকা থেকে তাদের সঙ্গীদের নিয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে অবস্থান করত। তারপর ডাকাতি করে সবকিছু ছিনিয়ে নিয়ে আবার বরিশালে চলে যেত।

কেএম/এসকেডি