দৈনিক চুক্তিভিত্তিক ভাড়া ২২৫০ টাকা। সেই টাকা মালিককে পরিশোধ করেই মুনাফা অর্জনের চেষ্টা করতে হতো মেঘলা পরিবহনের ঘাতক বাসটির চালক রাকিব শরীফকে। অধিক মুনাফা লাভের উদ্দেশে ট্রিপ সংখ্যা বাড়াতে প্রতিযোগিতামূলক বেপরোয়া গতিতে বাস চালিয়ে আসছিলেন তিনি। বাস ভারী যানবাহন হলেও তার রয়েছে হালকা গাড়ির ড্রাইভিং লাইসেন্স।

শনিবার (৮ জানুয়ারি) রাজধানীর হানিফ ফ্লাইওভারে বাসের ধাক্কায় দুই পথচারীর নির্মম মৃত্যুর ঘটনায় ঘাতক বাসের চালক রাকিব শরীফকে (২৫) রাজধানীর ওয়ারী এলাকা থেকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে রাকিব র‌্যাবকে জানিয়েছে, অধিক গতি থাকার কারণে ফ্লাইওভার থেকে নামার সময় বাসটির নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পথচারীদের চাপা দেন। 

রোববার (৯ জানুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‌্যাব সদর দফতরের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

তিনি বলেন, শনিবার (৮ জানুয়ারি) ঢাকা মহানগরীর হানিফ ফ্লাইওভারে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে মেঘলা পরিবহনের একটি বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে কয়েকজন পথচারীকে ধাক্কা দেয়। এতে শেখ ফরিদ (২৮) ও মো. বাদশা মিয়া (৩২) নামে দুই জন মৃত্যুবরণ করেন।

দুর্ঘটনার পর ঘাতক ড্রাইভার বাসটি রেখে পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় দুজন পথচারী নিহত হওয়ায় দেশব্যাপী ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়।

দুর্ঘটনায় নিহতদের পরিবারের সদস্যরা সড়ক ও পরিবহন আইন ২০১৮ এর ৯৮ ও ১০৫ ধারায় শনিবার ওয়ারী থানায় একটি মামলা করেন। মামলা নং-৭। পরে র‌্যাব ছায়া তদন্ত শুরু করে এবং জড়িতদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ায়।

এরই ধারাবাহিকতায় র‌্যাব-৩ এর একটি দল শনিবার রাতে রাজধানীর ওয়ারী এলাকা থেকে মেঘলা পরিবহনের ঘাতক বাসটির চালক মো. রাকিব শরীফকে গ্রেফতার করে। তিনি পটুয়াখালীর গলাচিপা থানার চরশিবার মিজানুর রহমান শরীফের ছেলে।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতার রাকিব সড়ক দুর্ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে স্বীকার করেছে।

জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতার রাকিব র‌্যাবকে জানান, তিনি সাত/আট বছর আগে থেকে মেঘলা পরিবহনের বাসের হেলপারি করে আসছেন। বাসের হেলপারি করার পাশাপাশি তিনি ড্রাইভিংয়ের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন।

পরে বাসের হেলপারি ছেড়ে নিজে বাস চালানোর জন্য মেঘলা পরিবহনের বিভিন্ন মালিকদের ড্রাইভার হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেন। কিন্তু গ্রেফতার রাকিব শরীফের ড্রাইভিং লাইসেন্স না থাকায় প্রাথমিক পর্যায়ে কোনো মালিক তাকে গাড়ি চালানোর অনুমতি দেয়নি।

পরে বিভিন্নভাবে তদবিরের মাধ্যমে মেঘলা পরিবহনের মালিকদের বাস সাময়িকভাবে চালানো শুরু করেন। ২০১৯ সালে তিনি হালকা মোটরযান ড্রাইভিং লাইসেন্স (পেশাদার) পান। হালকা মোটরযান ড্রাইভিং লাইসেন্স (পেশাদার) দিয়েই তিনি ভারী মোটরযান চালানো শুরু করেন। কিন্তু তার ভারী মোটরযান চালানোর মতো কোনো বৈধ ড্রাইভিং লাইসেন্স (পেশাদার) ছিল না।

গ্রেফতার রাকিব শরিফ আরও জানায়, ১৫ দিন আগে বাসটির মালিক সবুর মিয়ার (৫০) কাছ থেকে দৈনিক ২ হাজার ২৫০ টাকা হারে বাসটি ভাড়ায় চালানো শুরু করেন।

শনিবার বাস নিয়ে সকাল পৌনে ৯টার দিকে ভূলতা গাউছিয়া থেকে গুলিস্তানের উদ্দেশে ছেড়ে আসেন। আনুমানিক সকাল সাড়ে ৯টায় যাত্রাবাড়ীর হানিফ ফ্লাইওভার দিয়ে গুলিস্তান সংযোগে নামার সময় অধিক গতি থাকার কারণে এবং ব্রেক কাজ না করায় বাসটি নিয়ন্ত্রণ হারায়।

পরে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার বাম পাশে রেলিং ঘেঁষে নামতে থাকে। এ সময় ফ্লাইওভারে অন্য একটি বাস থেকে যাত্রী নামছিল। তাদের মধ্যে কয়েকজন পথচারীকে ধাক্কা দেয় বাসটি। দুর্ঘটনার স্থল থেকে দুজনকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন।

গ্রেফতার রাকিব আরও জানান, গাড়ির দৈনিক চুক্তিভিত্তিক ভাড়া মালিককে পরিশোধ করতে এবং অধিক মুনাফা লাভের উদ্দেশে সে ট্রিপ সংখ্যা বৃদ্ধির জন্য বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালাত। অধিক গতি থাকার কারণে ফ্লাইওভার দিয়ে নামার সময় গাড়িটি নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে পথচারীদের চাপা দেয়।

চালক গ্রেফতার হলেও বাসের মালিকের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে কি না জানতে চাইলে কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ওয়ারী থানায় দায়ের করা মামলাটির তদন্ত করছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। তদন্তে বাস মালিকের কোনো ব্যত্যয় বা দায় থাকলে অবশ্যই তা তদন্তে উঠে আসবে।

জেইউ/এসএসএইচ