রোহিঙ্গা ইস্যুতে আলোচনায় বসছে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার। নেপিডোর পক্ষ থেকে পাওয়া প্রস্তাব অনুযায়ী মূলত প্রত্যাবাসনের জন্য তালিকা যাচাই-বাছাই নিয়ে এ বৈঠক হবে। উভয়পক্ষের সম্মতিতে একটি কমিটি গঠনের মাধ্যমে চূড়ান্ত হবে ওয়ার্কিং লেভেলের বৈঠকের দিনক্ষণ।

মিয়ানমারে রাজনৈতিক পটপরিবর্তন তথা সেনা সমর্থিত সরকারের ক্ষমতা দখলের পর প্রায় এক বছরের মাথায় দেশটির পক্ষ থেকে রোহিঙ্গাদের নিয়ে আলোচনার জন্য বার্তা এলো। নেপিডোর এমন প্রস্তাবকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছে ঢাকা।

মন্ত্রণালয়ের এক জ্যৈষ্ঠ কর্মকর্তা ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘মিয়ানমারের দিক থেকে প্রস্তাব এসেছে। আলোচনা চলছে। উভয়পক্ষের সুবিধা মতো আলোচনা তারিখ চূড়ান্ত হবে। ওদের দিক থেকে অনেক দিন থেকে কোনো হাই লেভেল বা রাজনৈতিক প্রস্তাব আসছে না। এখন ওরা প্রস্তাব দিয়েছে। এটা ওয়ার্কিং লেভেল মিটিং। জুনিয়র লেভেল বা ডেস্ক লেভেলের সঙ্গে বৈঠক। বড় মাপের কিছু না। তবে তারা যে আগ্রহ দেখিয়েছে এটা বড় বিষয়।’

কবে নাগাদ বৈঠক এবং আলোচনার বিষয়ে জানতে চাইলে এ কর্মকর্তা বলেন, ‘এখনও কোনো তারিখ চূড়ান্ত হয়নি। মাত্র মিয়ানমারের দিক থেকে প্রস্তাব এসেছে। এটা কোথায় হবে বা কবে হবে তা নিয়ে আলোচনা চলছে। উভয়পক্ষের সুবিধা মতো আলোচনা তারিখ চূড়ান্ত হবে। কমিটি হবে একটা। ওই কমিটি মিট করবে। আর কোভিডের যে পরিস্থিতি ভার্চুয়ালি না হয়ে সশরীরে হওয়ার সুযোগ নেই।’

‘মিয়ানমারের নাগরিকদের যাচাই-বাছাই পেন্ডিং (ঝুলে) আছে। এটা অনেক দিন থেকে পেন্ডিং। এটা নিয়ে আমরা অনেক দিন থেকে প্রস্তাব দিয়েছি। এখন তারা প্রস্তাব দিয়েছে মিটিংয়ের জন্য। ওটা নিয়ে এ বৈঠক হবে। প্রত্যাবাসনের জন্য তো রোহিঙ্গাদের যাচাই-বাছাই করতে হবে। বাংলাদেশ থেকে তাদের প্রত্যাবাসন করতে এটা লাগবে’, যোগ করেন এ জ্যৈষ্ঠ কর্মকর্তা।

২০১৭ সালের নভেম্বরে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন নিয়ে মিয়ানমারের সঙ্গে চুক্তি সইয়ের পর এখন পর্যন্ত আট দফায় মিয়ানমারের কাছে ৮ লাখ ৩০ হাজার জনের তালিকা দিয়েছে বাংলাদেশ। মিয়ানমার এর মধ্যে মিয়ানমার মাত্র ৪২ হাজার রোহিঙ্গার তালিকা যাচাই-বাছাই শেষে ফেরত দিয়েছে। তবে এ তালিকা এখনও অসম্পূর্ণ রয়েছে। কেননা, এ তালিকায় একই পরিবারের অনেকের নাম নেই।

এবারের বৈঠকে অসম্পূর্ণ তালিকার বিষয়টির তুলে ধরবে ঢাকা। তাছাড়া বাংলাদেশের দেওয়া তালিকায় কি খুঁত বা গ্যাপ খুঁজে পেয়েছে সেটিও জানতে চাইবে ঢাকা।

জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘এটা একটা সুখবর। মিয়ানমার থেকে আমরা প্রস্তাব পেয়েছি। আমরা তো রেডি, সবসময় বসে আছি। আমরা সবসময় আশাবাদী। আমরা আশা করছি, ভালো কিছু হবে। আমরা চাই যত দ্রুত সম্ভব তাদের দেশে ফিরে যাক। সেই চেষ্টাই আমরা করে যাচ্ছি।’

২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট রাখাইনে সেনা অভিযান শুরুর পর কয়েক মাসের মধ্যে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নেয়। আগে থেকে বাংলাদেশে ছিল আরও চার লাখ রোহিঙ্গা। আন্তর্জাতিক চাপের মধ্যে মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে ২০১৭ সালের শেষ দিকে বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তি করলেও সেই প্রত্যাবাসন আজও শুরু হয়নি।

২০১৮ সালের নভেম্বরে এবং ২০১৯ সালের আগস্টে মিয়ানমারের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সমঝোতার ভিত্তিতে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু করার উদ্যোগ ব্যর্থ হয়। কেননা, রাখাইন রাজ্যের পরিবেশ নিয়ে শঙ্কার কথা তুলে ধরে ফিরতে রাজি হয়নি রোহিঙ্গারা। তবে ২০২০ সালে রোহিঙ্গাদের জন্য একমাত্র আশা জাগানোর ঘটনা যেটি ঘটেছে তা হলো- মিয়ানমারে থেকে যাওয়া অবশিষ্ট রোহিঙ্গাদের ওপর সম্ভাব্য গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ থেকে তাদের সুরক্ষা দিতে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের (আইসিজে) নির্দেশ।

এনআই/এসএসএইচ