বঙ্গোপসাগরে ২২০ প্রজাতির শৈবাল, কাজে লাগাতে চায় বাংলাদেশ
বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের একান্ত অর্থনৈতিক অঞ্চলে ২২০ প্রজাতির সি-উইড বা শৈবালের অস্তিত্ব পেয়েছে বাংলাদেশ। এসব সি-উইড বা শৈবাল আহরণের মাধ্যমে দেশে মাছের খাদ্য, পশুর খাদ্য ও বিভিন্ন টয়লেট্রিজ কাঁচামাল উৎপাদনের পাশাপাশি বিদেশে রফতানির সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
বুধবার (৫ জানুয়ারি) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ‘গ্যাস হাইড্রেন্ট ও সামুদ্রিক জেনেটিক সম্পদের ওপর গবেষণার ফলাফল’ শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞাপন
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মেরিটাইম অ্যাফেয়ার্স ইউনিটের প্রতিনিধিসহ নেদারল্যান্ডস ভিত্তিক গবেষকরা গত দুই বছরে বাংলাদেশের সমুদ্র এলাকায় গবেষণা কার্যক্রমের ভিত্তিতে এ ফলাফল পেয়েছেন। যুক্তরাজ্য ও নেদারল্যান্ডস এ গবেষণায় সহায়তা করেছে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, গবেষণালব্ধ ফলাফলে প্রতীয়মান হয় যে বাংলাদেশে প্রাপ্ত বহু সংখ্যক প্রজাতির সি-উইডের মধ্যে কয়েকটি প্রজাতির ব্যাপক বাণিজ্যিক সম্ভাবনা রয়েছে। যা বাংলাদেশের সুনীল অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে। বাংলাদেশে প্রাপ্ত নির্দিষ্ট প্রজাতির সি-উইড পাঁচটি ইন্ডাস্ট্রিয়াল চিহ্নিত করা হয়েছে।
১) মাছের খাদ্য: বাংলাদেশে প্রাপ্ত কিছু প্রজাতির সি-উইডে প্রচুর পরিমাণ প্রোটিন রয়েছে, যা মাছের খাদ্যের প্রোটিনের উৎস হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে এবং এটি আমদানি করা পিস ওয়েলের বিকল্প হতে পারে; যার বাজার অত্যন্ত ব্যাপক।
২) পশুর খাদ্য: গবেষণায় প্রাপ্ত কিছু সি-উইডে প্রচুর পরিমাণ ফ্যাটি এসিড রয়েছে, যা পশুর খাদের মান বৃদ্ধিতে ও প্রাণীর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখবে।
৩) ফুড এডিটিভ : প্রাপ্ত সি-উইডে প্রচুর পরিমাণে আগার-আগার রয়েছে। এটি বাংলাদেশের ফুড ইন্ডাস্ট্রিতে প্রচুর পরিমাণে ব্যবহৃত হচ্ছে, যা আমদানি করা হয়ে থাকে।
৪) বাল্ক কসমেটিক ইনগ্রিডিয়েন্ট : এ প্রজাতির সি-উইড থেকে বাংলাদেশ কসমেটিক ইন্ডাস্ট্রিতে কাজে লাগাতে পারবে, যা দেশের বাইরে থেকে প্রচুর পরিমাণে আমদানি করা হয়ে থাকে।
৫) হাই ভ্যালু কসমেটিক ইনগ্রিডিয়েন্ট : প্রাপ্ত সি-উইডের মাধ্যমে স্কীন কেয়ার প্রোডাক্টসহ বহুবিধ কসমেটিক প্রোডাক্ট তৈরিতে ব্যবহার করার সুযোগ রয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, ‘বাংলাদেশে পশুখাদ্যের মোট বাজার ১৬ হাজার কোটি টাকার। মাছের খাদ্য ৫ হাজার এবং প্রসাধন সামগ্রীর বাজার হচ্ছে ৭ হাজার কোটি টাকা। আমরা যদি সি-উইড ব্যবহার সঠিকভাবে করতে পারি তাহলে এ পরিমাণ পণ্যের উৎপাদন আমাদের দেশেই সম্ভব।’
সি-উইড কাজে লাগাতে দেশের শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো বিনিয়োগ আহ্বান জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মেরিটাইম অ্যাফেয়ার্স ইউনিটের প্রধান রিয়াল অ্যাডমিরাল (অব.) মো. খুরশেদ আলম সংবাদ সম্মেলনে জানান, বর্তমান প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশে সামুদ্রিক সি-উইড থেকে বাণিজ্যিক উৎপাদন ও পরিচালনার জন্য হ্যাচারি, ফার্মিং, প্রসেসিং প্ল্যান্ট এবং ইন্ডাস্ট্রিয়াল এপলিকেশনের প্রয়োজন হবে।
এ সময় তিনি জানান, এ কার্যক্রম সফল করতে যোগ্য শিল্প প্রতিষ্ঠান বা উদ্যোক্তাকে প্রয়োজনীয় সহায়তা দেবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘সি-উইড চাষের মাধ্যমে বাংলাদেশের উপকূলীয় জনগণের জন্য সহজ ও নিরাপদ কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করতে সক্ষম, যেখানে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নারীকর্মীর সহজ কর্মসংস্থান হতে পারে। এ প্রেক্ষিতে আমাদের পরবর্তী পদক্ষেপ হচ্ছে আগ্রহী ও যোগ্য শিল্প প্রতিষ্ঠান, উদ্যোক্তাকে বাংলাদেশের সি-উইডের সম্ভাবনাময় বিবিধ খাতে কার্যকরী বিনিয়োগ ও অংশগ্রহণ করানো।’
সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম বলেন, ‘আমাদের পরবর্তী পদক্ষেপ হচ্ছে আগ্রহী ও যোগ্য শিল্প প্রতিষ্ঠান বা উদ্যোক্তাকে বাংলাদেশের সি-উইডের সম্ভাবনাময় বিবিধ খাতে কার্যকরী বিনিয়োগ করানো।’
এনআই/এসএসএইচ