ফেরির ফগ লাইট কেনায় অনিয়মের অভিযোগে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন করপোরেশনের (বিআইডব্লিউটিসি) পরিচালক ও জিএমসহ ৭ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

ঘন কুয়াশায় ফেরি চলাচল স্বাভাবিক রাখতে ১০ কিলোমিটার দেখা যায় এমন উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ফগ অ্যান্ড সার্চ লাইট ক্রয়ে ৫ কোটি ৬৫ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করেন দুদকের সহকারী পরিচালক মো. সাইদুজ্জামান। বুধবার (৫ জানুয়ারি) দুদকের ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১ এ মামলাটি দায়ের করা হয়। 

দুদকের উপ-পরিচালক (জনসংযোগ) মুহাম্মদ আরিফ সাদেক মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

মামলার আসামিরা হলেন বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন করপোরেশনের (বিআইডব্লিউটিসি) সাবেক চেয়ারম্যান ও পরিচালক (কারিগরি ) ড . জ্ঞান রঞ্জন শীল, মহাব্যবস্থাপক বা জিএম ক্যাপ্টেন শওকত সরদার, মো. নুরুল হুদা, নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের ডেপুটি সেক্রেটারি পঙ্কজ কুমার পাল, বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের (বিএসএফআইসি) সাবেক মহাব্যবস্থাপক ( মেকানিক্যাল ) ইঞ্জিনিয়ার মো. রহমত উল্লা, বাংলাদেশ জুট মিলস করপোরেশনের (বিজেএমসি) মেকানিক্যাল বিভাগের ম্যানেজার ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন এবং মেসার্স জনী করপোরেশনের মালিক ওমর আলী।

এর আগে গত ৩০ ডিসেম্বর কমিশন থেকে মামলার অনুমোদন দেওয়া হয়। মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ও পিএসআই কমিটির সুপারিশ উপেক্ষা করে সার্চ অ্যান্ড ফগ লাইটের পরিবর্তে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন সার্চ লাইটসহ বিভিন্ন যন্ত্রাংশ ক্রয় করে সরকারের ৫ কোটি ৬৫ লাখ টাকার আর্থিক ক্ষতি সাধন করেছেন। অনুমোদনকৃত মামলায় তাদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৪০৯/৪২০/১০৯ ধারা তৎসহ ১৯৪৭ সনের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫ (২) ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।

বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, ২০১৫ সালের ৪ জুন থেকে ১২ জুন পর্যন্ত মোট ১০টি ফেরিতে ফগ অ্যান্ড সার্চ লাইট স্থাপন করা হয়েছে। ফেরিগুলো হলো- আরিচায় চলাচলকারী ফেরি খাঁন জাহান আলী, ফেরি জাহাঙ্গীর, ফেরি এনায়েতপুরী, ফেরি কপোতী, ফেরি কুমারী এবং মাওয়ায় চলাচলকারী ফেরি বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমীন, আমানতশাহ, শাহ আলী, কাকলী ও ক্যামেলিয়া। কিন্তু ২০১৭ সালের ২ ফেব্রুয়ারি নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. রফিকুল ইসলামের নেতৃত্বে গঠিত তদন্ত কমিটির রিপোর্ট বলছে বাস্তবে এসব ফেরিতে ফগ অ্যান্ড সার্চ লাইটের অস্তিত্ব নেই।

জানা গেছে, ২০১৪ সালে ৭ হাজার ওয়াটের উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন আধুনিক ফগ অ্যান্ড সার্চ লাইট (১০ কিলোমিটার পর্যন্ত দেখা যাবে) কেনার সিদ্ধান্ত নেয় বিআইডব্লিউটিসি। ৬টি লাইট পরীক্ষামূলকভাবে ক্রয় করার সিদ্ধান্ত হয়। যার প্রতিটির মূল্য ধরা হয়েছিল ৫৫ লাখ ৮৭ হাজার ৪০০ টাকা। যেখানে সাধারণ সার্চ লাইটের মূল্য মাত্র এক থেকে দুই লাখ টাকা।

২০১৫ সালের ২৪ নভেম্বর পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনেও অনুরূপ সত্যতা মেলে। সার্চ অ্যান্ড ফগ লাইটের কার্যকারিতা পরীক্ষার জন্য তৎকালীন সহ-ব্যবস্থাপক (মেরিন) হারুনুর রশিদ, ব্যবস্থাপক (মেরিন) মো. আব্দুস সাত্তার ও মো. আব্দুস সোবহানের সমন্বয়ে তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির বক্তব্য ছিল, সংযোজিত ফগ ও সার্চ লাইটগুলো হালকা কুয়াশার মধ্যে কাজ করছে। কিন্তু ঘন কুয়াশায় কাজ করছে না। ঘন কুয়াশায় সার্চ লাইট প্রজ্বলিত করলে কুয়াশার জল কণা অধিকতর ঝাপসা হয়ে যায়। ফলে ঘন কুয়াশায় ফেরি চলাচল সম্ভব হয় না।

অনুসন্ধান পর্যায়ে বিআইডব্লিউটিসির সাবেক চেয়ারম্যান ও পরিচালক (কারিগরি) ড. জ্ঞান রঞ্জন শীল ও জিএম শওকত সরদারসহ ১৩ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে জিজ্ঞাসাবাদ করে দুদক।

আরএম/এসকেডি