চট্টগ্রাম বন্দরের বে টার্মিনালের কাজ আগামী নির্বাচনের আগেই শুরু হবে। আর ২০২৪-২৫ সালে অপরেশনাল কাজে যাওয়ার ইচ্ছে আছে বলে জানিয়েছেন নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। 

রোববার (২ জানুয়ারি) দুপুরে চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরের অত্যাধুনিক টাগবোট কান্ডারি-৬, নিউমুরিং ওভার-ফ্লো কনটেইনার ইয়ার্ড, দ্বিতীয় ওভার ফ্লো কনটেইনার ইয়ার্ডসহ চারটি প্রকল্প কাজের উদ্বোধন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে একথা বলেন তিনি। 

খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘যেখানে দেশের স্বার্থ, বন্দরের স্বার্থ সংরক্ষণ হবে আমরা সে জায়গায় হাঁটব। দেশের স্বার্থহানি হোক, দেশের স্বার্থ কোনো জায়গায় ঘাটতি দেখা দেবে, সে জায়গায় আমরা হাঁটব না। বন্দর ও দেশের স্বার্থ আমাদের প্রথম দেখতে হবে। মাতারবাড়ী, বে টার্মিনাল ও পতেঙ্গা কনটেইনার ইয়ার্ডের ব্যাপারে অনেকেরই আগ্রহ আছে। অনেকেই প্রপোজাল দিয়েছে। এগুলো স্টাডি করে দেখছি।’

তিনি বলেন, ‘আগামী নির্বাচনের আগেই আমরা বে টার্মিনালের নির্মাণ কাজ শুরু করে দেব। যাতে ২৪-২৫ সালে অপারেশনাল কাজ শুরু করতে পারি। বে টার্মিনাল কাজের ব্যাপারে অনেক দূর এগিয়ে গিয়েছি। জমি অধিগ্রহণে কিছুটা দুর্বলতা দেখতে পাচ্ছি। আমাদের বন্দর কর্তৃপক্ষ জেলা প্রশাসকের সঙ্গে কথা বলছি। আশা করি দ্রুতই এসব সমস্যার সমাধান হবে।’

মন্ত্রী বলেন, ‘বে টার্মিনালের কিছুটা অংশ বন্দর কর্তৃপক্ষ করবে। বাকিটা পিপিপি মডেলে করব। যারা আগ্রহী তাদের মধ্যে অনেকেই প্রপোজাল দিয়েছে। আমাদের কার্যক্রম চলছে। কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করেছে ডিপি ওয়ার্ল্ড, রেড সি গেটওয়ে, আদানি, সিঙ্গাপুর পোর্ট অথিরিটি, ডেনমার্ক, তুরস্ক ও ফ্রান্স আগ্রহ প্রকাশ করেছে। আমরা তাদের প্রপোজাল দেখব এরপর পর্যালোচনা করব। দেশের স্বার্থ সংরক্ষণ করেই তাদের সাথে চুক্তি করব।’

এর আগে চট্টগ্রাম বন্দরের অত্যাধুনিক টাগবোট কান্ডারি-৬ উদ্বোধন করেন মন্ত্রী। এসময় তিনি বলেন, ‘চট্টগ্রাম বন্দর দেশের চালিকাশক্তি। আজ বাংলাদেশের যে উন্নয়ন চলছে, তার গেটওয়ে হচ্ছে এই বন্দর। এটি নিয়ে আমরা গর্ব করতে পারি। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে করোনা মহামারিতেও পণ্য-কনটেইনার হ্যান্ডলিং অব্যাহত রেখেছে বন্দর। মূলত সরকারের নেওয়া নানামুখী পদক্ষেপে গতি ধরে রেখেছে বন্দর।’

এসময় অন্যান্যের মধ্যে বন্দরের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এম শাহজাহান, বন্দরের সদস্য (প্রশাসন ও পরিকল্পনা) মো. জাফর আলম, সচিব মো. ওমর ফারুকসহ নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয় ও বন্দরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

বন্দর কর্মকর্তারা জানান, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের টাগবহরে যুক্ত হয়েছে কান্ডারি-৬। এর ফলে বন্দরে তুলনামূলক বড় জাহাজ ভেড়ানোর সুবিধা সৃষ্টি হবে। এছাড়া চট্টগ্রাম-মাতারবাড়ী এলাকায় নেওয়া প্রকল্প ও জেটিগুলো বেশি সংখ্যক বড় জাহাজ বার্থিং-আনবার্থিং ক্ষমতা বাড়বে। এছাড়া ৮৮ কোটি টাকা ব্যয়ে বন্দরের অত্যাধুনিক সার্ভিস জেটি নির্মাণ করা হয়েছে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে বন্দরে জাহাজের সুরক্ষা ও অপারেশনাল কার্যক্রমে গতি আসবে। এই প্রকল্পকে কেন্দ্র করে দুই হাজার ৬৫০ বর্গফুটের তিনতলা একটি অফিস ভবন, ৩ হাজার বর্গফুটের স্টিল কাঠামোর একটি ওয়্যারহাউস, ২ হাজার ১০০ কিউবিক মিটারেরএকটি আন্ডারগ্রাউন্ড পানির রিজার্ভার, ২২২ মিটার লম্বা ৮ ফুট উঁচু রিটেইনিং ওয়াল, রিভার ব্যাংক ও শোর প্রোটেকশন, ড্রেনেজ সিস্টেম, ৫০০ কেভির বৈদ্যুতিক সাব স্টেশন, ১০০ ফুট উঁচু সিগন্যাল টাওয়ার নির্মাণ করা হয়েছে।

পাশাপাশি নগরের ফ্রিপোর্ট মোড় পুরোনো লেবার কলোনির জায়গায় ‘নিউমুরিং ওভারফ্লো কনটেইনার ইয়ার্ড’ নির্মাণ করেছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। এই ইয়ার্ডে প্রায় ১২ হাজার কনটেইনার রাখা যাবে। ফলে বন্দরের প্রয়োজনে ও বিভিন্ন সময়ে কনটেইনার চাপ বেড়ে গেলেও জট তৈরির সম্ভাবনা অনেকাংশেই কমে যাবে বলে মনে করছে বন্দর কর্তৃপক্ষ।

এছাড়া বন্দর স্টেডিয়ামের পাশে অত্যাধুনিক সুযোগ সুবিধা সম্বলিত আরেকটি আর্ন্তজাতিকমানের সুইমিং কমপ্লেক্স নির্মাণ করা হয়েছে। এর পুরো ব্যয়ভার বহন করেছে ব্ন্দর কর্তৃপক্ষ। প্রায় ১৬ কোটি টাকা ব্যয়ে সোয়া একর জায়গার উপর নির্মাণ করা হয়েছে সুইমিং কমপ্লেক্সটি।

কেএম/জেডএস