ঘন কুয়াশায় ফেরি চলাচল স্বাভাবিক রাখতে ১০ কিলোমিটার দেখা যায় এমন উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন ফগ অ্যান্ড সার্চ লাইট কেনার উদ্যোগ নেয় বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্পোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি)। 

উদ্যোগ নেওয়ার পরপরই ২০১৫ সালের জুন মাসে আরিচা ও মাওয়া ঘাটে ১০টি লাইট স্থাপন করা হয়। কাগজপত্রে ফগ অ্যান্ড সার্চ লাইট স্থাপনের কথা বলা হলেও বাস্তবে পুকুর চুরি হয়েছে। ফগ অ্যান্ড সার্চ লাইটের পরিবর্তে স্থাপন হয়েছে শুধুমাত্র সার্চ লাইট।

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অনুসন্ধানে এমন দুর্নীতিতে ৫ কোটি ৬৫ লাখ টাকা আত্মসাত কিংবা সরকারের আর্থিক ক্ষতিসাধনের প্রমাণ মিলেছে। যে কারণে বিআইডব্লিউটিসির দুই মহাব্যবস্থাপক (জিএম) ও পরিচালকসহ সাত ঊর্ধ্বতন কর্তাদের বিরুদ্ধে মামলা করতে যাচ্ছে দুদক। দুই-একদিনের মধ্যেই সংস্থাটির সহকারী পরিচালক সাইদুজ্জামান বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করবেন। দুদকের জনসংযোগ দফতর সূত্রে এসব জানা গেছে।

অনুমোদন হওয়া মামলার আসামিরা হলেন-বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্পোরেশনের (বিআইডব্লিউটিসি) সাবেক চেয়ারম্যান ও পরিচালক (কারিগরি ) ড . জ্ঞান রঞ্জন শীল, মহাব্যবস্থাপক (জিএম) ক্যাপ্টেন শওকত সরদার, নুরুল হুদা, নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের ডেপুটি সেক্রেটারি পঙ্কজ কুমার পাল, বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের (বিএসএফআইসি) সাবেক মহাব্যবস্থাপক (মেকানিক্যাল ) ইঞ্জিনিয়ার মো. রহমত উল্লা, বাংলাদেশ জুট মিলস করপোরেশনের (বিজেএমসি) মেকানিক্যাল বিভাগের ম্যানেজার ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন এবং মেসার্স জনি কর্পোরেশনের মালিক ওমর আলী।

অনুসন্ধান প্রতিবেদন সূত্রে জানা গেছে, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ও পিএসআই কমিটির সুপারিশ উপেক্ষা করে সার্চ অ্যান্ড ফগ লাইটের পরিবর্তে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন সার্চ লাইটসহ বিভিন্ন যন্ত্রাংশ ক্রয় করে সরকারের ৫ কোটি ৬৫ লাখ টাকার আর্থিক ক্ষতি সাধন করেছেন। অনুমোদন হওয়া মামলায় তাদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৪০৯/৪২০/১০৯ ধারা তৎসহ ১৯৪৭ সনের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫ (২) ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।

বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, ২০১৫ সালের ৪ জুন থেকে ১২ জুন পর্যন্ত মোটি ১০টি ফেরিতে ফগ অ্যান্ড সার্চ লাইট স্থাপন করা হয়েছে। ফেরিগুলো হলো- আরিচায় চলাচলকারী ফেরি খাঁন জাহান আলী, ফেরি জাহাঙ্গীর, ফেরি এনায়েতপুরী, ফেরি কপোতী, ফেরি কুমারী। মাওয়ার ফেরিগুলো হলো- বীর শ্রেষ্ঠ রুহুল আমীন, আমানতশাহ, শাহ আলী, কাকলী ও ক্যামেলিয়া। কিন্তু ২০১৭ সালের ২ ফেব্রুয়ারি নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. রফিকুল ইসলামের নেতৃত্বে গঠিত তদন্ত কমিটির রিপোর্ট বলছে বাস্তবে ফগ অ্যান্ড সার্চ লাইটের অস্তিত্ব নেই।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, ২০১৪ সালে বিআইডব্লিউটিসির টেকনিক্যাল ফাইন্ড আউট করে ৭ হাজার ওয়াটের একটি আধুনিক রিপোট কনট্রোল উচ্চ ক্ষমতা সম্পান্ন ফগ অ্যান্ড সার্চ লাইট যা ১০ কিলোমিটার পর্যন্ত দেখা যাবে এমন ৬টি লাইট পরীক্ষামূলকভাবে ক্রয় করার সিদ্ধান্ত হয়। যার প্রতিটির মূল্য ধরা হয়েছিল ৫৫ লাখ ৮৭ হাজার ৪শ টাকা। যেখানে সাধারণ সার্চ লাইটের মূল্য প্রায় এক থেকে দুই লাখ টাকা।

এর আগে ২০১৫ সালের ২৪ নভেম্বর পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনেও একই সত্যতা মেলে। সার্চ অ্যান্ড ফগ লাইটের কার্যকারিতা পরীক্ষার জন্য তৎকালীন সহ-ব্যবস্থাপক (মেরিন) হারুনুর রশিদ, ব্যবস্থাপক (মেরিন) মো. আব্দুস সাত্তার ও মো. আব্দুস সোবহানের সমন্বয়ে তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়। যাদের বক্তব্য ছিল- সংযোজিত ফগ ও সার্চ লাইটিগুলো হালকা কুয়াশার মধ্যে কাজ করছে। কিন্তু ঘন কুয়াশায় কাজ করছে না। ঘন কুয়াশায় সার্চ লাইট প্রজ্জলিত করলে কুয়াশার জলকণাগুলো অধিকতর ঝাপসা হয়ে যায়। ফলে ঘন কুয়াশায় ফেরি চলাচল সম্ভব হয় না।

অনুসন্ধান পর্যায়ে বিআইডব্লিউটিসির সাবেক চেয়ারম্যান ও পরিচালক (কারিগরি) ড. জ্ঞান রঞ্জন শীল ও জিএম শওকত সরদারসহ ১৩ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে জিজ্ঞাসাবাদ করে দুদক।

আরএম/এসএম