থার্টি ফার্স্টের আতশবাজির আতঙ্কে নীড় ছেড়ে বাসা-বাড়িতে পাখিরা
থার্টি ফার্স্টের রাতে আতশবাজি ও ফানুস উড়িয়ে উদযাপন দেশব্যাপী রীতিমত আতঙ্ক ও বিরক্তির কারণে হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত রাতে ফানুস থেকে লাগা আগুনে অনেক ভবন মালিক যেমন আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। তেমনি অনেকেই ফানুস আতঙ্কে জেগে রাত কাটিয়েছেন।
থার্টি ফার্স্ট নাইটের এমন উদযাপনে শুধুমাত্র মানুষজনই আতঙ্কে ছিলেন তেমন নয়, রাজধানীর পাখিরাও আতশবাজির আতঙ্কে নিজ নীড় ছেড়ে মানুষের বাসাবাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিল। আবার যেসব পাখিরা মানুষের বাসা বাড়িতে ঢোকার সুযোগ পায়নি তারা নিরাপদ কোন গাছের শাখাতে রাত জেগেছে।
বিজ্ঞাপন
আতশবাজির কারণে পাখিদের আতঙ্কিত হয়ে নিজ বাসা ছেড়ে বিভিন্ন ভবনের কক্ষে ছোটাছুটি করার একটি ভিডিও সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। ভাইরাল হওয়া ভিডিওটিতে দেখা যায় যখন রাজধানীজুড়ে আতশবাজি ফুটছিল তখন একটি ভবনের কক্ষে এক ঝাঁক পাখি ঢুকে আতঙ্কিত হয়ে ছোটাছুটি করছিল। ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ করা এক ব্যক্তি পাখিদের এমন আতঙ্কিত হওয়ার ঘটনার বিষয়ে আবেগঘন স্ট্যাটাস দিয়েছেন।
ঢাকা পোস্টের পাঠকদের জন্য ওই ব্যক্তির স্ট্যাটাসটি হুবহু তুলে ধরা হলো। রুহি আশরাফ নামে ঐ ব্যক্তি তার ফেসবুক টাইমলাইনের লিখেন-
রাত ১২:১২ মিনিট, ০১/০১/২০২২। আমার বাসার ডাইনিং রুমে করা ভিডিও। কিছু বুঝতে পারছেন?? আমরা যখন নতুন বছর বরণ করে নিতে আতশবাজি ফোটাতে ব্যস্ত, তখন এই বোবা প্রাণিগুলো প্রাণের ভয়ে তাদের বাসা ছেড়ে আমার বাসায় আশ্রয় নিতে এসেছে। চারিদিকের আতশবাজির শব্দ আর আগুনের ফুলকি। ফানুস উড়ে এসে পড়ছে গাছের উপর। আতশবাজির স্ফুলিঙ্গ পড়ছে পাতায় পাতায়। ভয়ে আতঙ্কে এ রাতের বেলায় নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে বের হতে হয়েছে। ঘরের সব আলো নিভিয়ে, সিঁড়ির আলো জ্বালিয়ে তাদের ঘর থেকে বের করলাম।
সিঁড়ির সব জানালা গুলো আগেই খুলে দিয়েছিলাম। কারণ, সিঁড়িতে আরও অনেকগুলো ছিল। কিন্তু, অবাক হয়ে দেখলাম ঘর থেকে বেড়িয়েও সব সিঁড়ি তে বিভিন্ন যায়গায় জড়ো হয়ে আছে। একটাও জানালা দিয়ে বাহিরে যাচ্ছে না। খুব ভয় পেয়ে গেছে। ছাদে গিয়েছিলাম নতুন বছর উদযাপন দেখতে। আকাশ ভরা ফানুস আর আতশবাজি দেখতে। কিন্তু, ছাদ থেকে বেড়িয়ে ঘরে ফিরেই মনটা খারাপ হয়ে গেল।
আমাদের আনন্দগুলো ততক্ষণ আনন্দ, যতক্ষণ না সেটা অন্যের ভয়/দুঃখ/আতঙ্ক না হয়ে যায়। আসুন, নিজের আনন্দ টা সকল সৃষ্টির আনন্দ নষ্ট না করে পালন করার চেষ্টা করি। আমরা সৃষ্টির সেরা জীব। আশরাফুল মাখলুকাত। বাকি সকল সৃষ্টির নিরাপত্তা আমাদের কি ভাবা উচিত নয়???
অন্যদিকে থার্টি ফার্স্ট নাইটে নির্দেশনা না মেনে রাজধানীবাসীর উদযাপন নিয়ে দুঃখ প্রকাশ করেছেন ডিএমপি কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম। শুক্রবার (৩১ ডিসেম্বর) রাত ১১টা ৪৫ মিনিটে গুলশান-২ নম্বর চত্বরে তিনি যখন নিরাপত্তা ব্রিফিং করছিলেন তখনও আশপাশের এলাকায় বিকট শব্দে শত শত আতশবাজি ফুটতে শোনা যায়।
এ বিষয়ে মোহা. শফিকুল ইসলাম বলেন, আতশবাজি থামানোর বিষয় না। হাত দিয়ে আটকে রাখা যায় না। আতশবাজি না ফোটাতে কালকে আমি অনুরোধ করেছি, দয়া করে আতশবাজি ফোটাবেন না। আতশবাজি ফোটায় একেবারে টিনেজ ছেলে মেয়েরা। বাড়িতে গিয়ে দেখেন, আপনার ছোট ভাই দুইটা আতশবাজি কিনে ফোটাচ্ছে। এত বেশি বিধি-নিষেধ দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করাটাও ডিফিকাল্ট। আমরা ঘরে ঘরে গিয়ে নিষেধ করতে পারবনা। নগরবাসীকে অনুরোধ করেছিলাম বয়স্ক মানুষ অসুস্থ মানুষের কথা বিবেচনা করে এটি সীমিত রাখবেন। আমি আশা করব যারা এই আতশবাজি ফোটাচ্ছে তাদের শুভবুদ্ধির উদয় হবে।
এমএসি/আইএসএইচ