হাতিরঝিল হয়ে গুলশান ঢোকার সব রাস্তা বন্ধ
ইংরেজি নববর্ষ বরণকে কেন্দ্র করে যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এরই ধারাবাহিকতায় উল্লেখ করা নির্দিষ্ট এলাকার সড়ক বন্ধের পাশাপাশি হাতিরঝিল হয়ে গুলশান ঢোকার সব রাস্তা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
শুক্রবার (৩১ ডিসেম্বর) রাতে হাতিরঝিল এলাকা ঘুরে দেখা গেছে পুলিশ প্লাজা হয়ে গুলশান ঢোকার সড়ক এবং লেকপাড় রোড ধরে পুলিশ প্লাজা যাওয়ার রাস্তা সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করে দিয়েছে পুলিশ। এদিকে গুদারাঘাট থেকে গুলশান প্রবশের মূল সড়কও বন্ধ রেখে ব্যারিকেড দেওয়া হয়েছে। ফলে সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে এসব সড়কে।
বিজ্ঞাপন
এদিকে অন্যান্য স্থানের মত হাতিরঝিলেও উন্মুক্ত স্থানে বর্ষবরণকে ঘিরে থার্টি ফার্স্ট নাইটে আতশবাজি, পটকাবাজি, অশোভন আচরণ, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটায় এমন কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে। সেই লক্ষে শুক্রবার রাতে হাতিরিঝিল এলাকা থেকে সবাইকে সরিয়ে দিতে কাজ করছে পুলিশ।
শুক্রবার রাতে পুলিশ প্লাজা সংলগ্ন হাতিরঝিলে পার্ক আদলে সাজানো উন্মুক্ত স্থান থেকে সব ধরণের দর্শনার্থীদের সরিয়ে দিতে দেখা গেছে। সেখানে দায়িত্বপালন করা এক পুলিশ সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, নির্দেশনা অনুযায়ী এই সব স্থানে জনাসমাগম করতে দেওয়া হচ্ছে না। তাই সবাইকে এখান থেকে সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি হাতিরঝিল হয়ে গুলশানের দিকে প্রবেশের সড়ক আমরা ব্যারিকেট দিয়ে বন্ধ করে দিয়েছি। হাতিরঝিলে উন্মুক্ত ভাবে বর্ষবরণকে ঘিরে থার্টি ফার্স্ট নাইটে আতশবাজি, পটকাবাজি, অশোভন আচরণ, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটায় এমন কর্মকাণ্ড থেকে বিরত রাখতে আমরা কাজ করছি। এখানে উন্মুক্তভাবে কোন পার্টি বা আতশবাজি করতে আমরা দিচ্ছি না। তবে কেউ যদি বাসা বাড়ির ছাদে আতশবাজি করে তাহলে আমরা বাধা দিবো না।
এদিকে গুদারাঘাট হয়ে গুলশান, লেকপাড়-পুলিশ প্লাজা হয়ে গুলশান প্রবেশের পথে ব্যারিকেট দিয়ে বন্ধ করে দেওয়ায় পিছনের সড়কগুলোতে যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। অনেকে সড়ক বন্ধের তথ্য না জেনে এই পথে এসে ঘুরে যেতে দেখা গেছে।
অন্যদিকে বর্ষবরণকে ঘিরে থার্টি ফার্স্ট নাইটে আতশবাজি, পটকাবাজি, অশোভন আচরণ, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটায় এমন কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকার নির্দেশনার কারনে উন্মুক্ত স্থানে এসব বন্ধ থাকলেও হাতিরঝিল সংলগ্ন পাড়া মহল্লায়, অলি গলি এবং বাসার ছাদে ছাদে বর্ষবরণের প্রস্তুতি নিতে দেখা গেছে তরুণদের। সাউন্ড সিস্টেমের মাধ্যমে গান বাজিয়ে, মাঝে মাঝে আতশবাজি করে তারা তাদের উপস্থিতির জানান দিচ্ছেন। সেই সঙ্গে বাসার ছাদ গুলো থেকে ফানুস উড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। অলি গলিতে পাড়ার ছেলেদের আয়োজনে চলছে রান্না।
যেসব সড়ক বন্ধ থাকবে
৩১ ডিসেম্বর রাত ৮টা থেকে পরদিন ১ জানুয়ারি ভোর ৫টা পর্যন্ত গুলশান, বনানী ও বারিধারা এলাকায় যানবাহন নিয়ে প্রবেশের জন্য কামাল আতাতুর্ক অ্যাভিনিউ (কাকলী ক্রসিং) এবং মহাখালী আমতলী ক্রসিং ব্যবহার করা যাবে।
একই সময়ে গুলশান, বনানী ও বারিধারা এলাকায় প্রবেশের ক্ষেত্রে তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল এলাকা (ফিনিক্স রোড ক্রসিং), বনানী ১১ নম্বর রোড ক্রসিং, চেয়ারম্যান বাড়ি ক্রসিং, ঢাকা গেট, শুটিং ক্লাব, বাড্ডা লিংক রোড, ডিওএইচএস বারিধারা (ইউনাইটেড হাসপাতাল ক্রসিং) এবং নতুন বাজার ক্রসিং এলাকা ব্যবহার করা যাবে না। তবে এসব এলাকা থেকে বের হওয়ার ক্ষেত্রে ক্রসিংগুলো ব্যবহার করা যাবে।
৩১ ডিসেম্বর সন্ধ্যা ৬টা থেকে পরদিন ১ জানুয়ারি ভোর ৫টা পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় প্রবেশের ক্ষেত্রে ঢাবি শিক্ষক-শিক্ষার্থী-কর্মকর্তা/কর্মচারী ব্যতীত অন্য যেকোনো ব্যক্তি/যানবাহন কেবল পুরনো হাইকোর্ট, দোয়েল চত্বর, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, জগন্নাথ হলের দক্ষিণ ফটক এবং পলাশী মোড় ব্যবহার করতে পারবে। ঢাবি এলাকায় প্রবেশের ক্ষেত্রে অন্য সব ক্রসিং বন্ধ থাকবে।
৩১ ডিসেম্বর রাত ৮টা থেকে শাহবাগ, নীলক্ষেত ক্রসিং, দোয়েল চত্বর ক্রসিং, বক্শী বাজার ক্রসিং, পলাশী ক্রসিং এবং চাঁনখারপুল/শহীদুল্লাহ হল ক্রসিং দিয়ে কোনো যানবাহন প্রবেশ করতে পারবে না।
থার্টি ফার্স্টে উন্মুক্ত স্থানে অনুষ্ঠান নয়
এদিকে বৃহস্পতিবার (৩০ ডিসেম্বর) ডিএমপি কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বর্ষবরণকে ঘিরে থার্টি ফার্স্ট নাইটে আতশবাজি, পটকাবাজি, অশোভন আচরণ, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটায় এমন কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে। এছাড়া উন্মুক্ত স্থানে কোনো অনুষ্ঠানের আয়োজন না করতে অনুরোধ জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে বিভিন্ন দেশে সব অনুষ্ঠান সীমিত আকারে পালন করা হচ্ছে। ইংরেজি নববর্ষ বরণ উপলক্ষে থার্টি ফার্স্ট নাইটে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত আকারে নির্ধারিত অনুষ্ঠান উদযাপন করতে নগরবাসীর প্রতি অনুরোধ করা হচ্ছে।
এছাড়া বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, উন্মুক্ত স্থানে কোনো অনুষ্ঠানের আয়োজন করা যাবে না। উৎসব উদযাপনের নামে কিছু উচ্ছৃঙ্খল ব্যক্তি নিজস্ব সংস্কৃতি, মূল্যবোধ ও ঐতিহ্যবিরোধী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হয়। কিছু ব্যক্তি আনন্দের আতিশয্যে পটকাবাজি, আতশবাজি, অশোভন আচরণ, বেপরোয়া গাড়ি ও মোটরসাইকেল চালানোর মাধ্যমে রাস্তায় প্রতিবন্ধকতা অথবা দুর্ঘটনা ঘটিয়ে অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির উদ্ভব ঘটায় এবং ক্ষেত্র বিশেষে প্রকাশ্যে আপত্তিকর আচরণ করে থাকে। এসব নৈতিক মূল্যবোধ পরিপন্থী কর্মকাণ্ড একদিকে যেমন সাধারণ মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রাকে ব্যাহত করে, অন্যদিকে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটায়।
এ অবস্থায় ৩১ ডিসেম্বর রাতে পটকাবাজি, আতশবাজি, বেপরোয়া গাড়ি ও মোটরসাইকেল চালনাসহ যেকোনো ধরনের অশোভন আচরণ এবং বেআইনি কার্যকলাপ থেকে বিরত থাকার জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে অনুরোধ জানিয়ে বেশকিছু নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ইংরেজি নববর্ষ উদযাপনকালে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির যেকোনো ধরনের আশঙ্কা রোধে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ বদ্ধপরিকর।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, ঢাকা মহানগরের সার্বিক নিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলার স্বার্থে রাস্তার মোড়, ফ্লাইওভার, রাস্তায় এবং প্রকাশ্যে স্থানে কোনো ধরনের জমায়েত অথবা সমাবেশ বা উৎসব করা যাবে না। উন্মুক্ত স্থানে নববর্ষ উদযাপন উপলক্ষে কোনো ধরনের অনুষ্ঠান, সমাবেশ, নাচ, গান ও কোনো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করা যাবে না। কোথাও কোনো ধরনের আতশবাজি বা পটকা ফোটানো যাবে না।
সড়ক ব্যবহার সংক্রান্ত যেকোনো জরুরি প্রয়োজনে:
ডিসি ট্রাফিক (গুলশান)-০১৩২০-০৪৪৩৬০, এডিসি ট্রাফিক (গুলশান)-০১৩২০-০৪৪৩৬১, এসি ট্রাফিক (গুলশান)-০১৩২০-০৪৪৩৭২, এসি ট্রাফিক (মহাখালী)-০১৩২০-০৪৪৩৭৫, এসি ট্রাফিক (বাড্ডা)-০১৩২০-০৪৪৩৭৮, ডিসি ট্রাফিক (রমনা)-০১৩২০-০৪২২৬০, এডিসি ট্রাফিক (রমনা) ০১৩২০-০৪২২৬১, ডিসি (গুলশান)-০১৩২০-০৪১৪২০ ও ডিসি (রমনা)-০১৩২০-০৩৯৪৪০ নম্বরে ফোন করার জন্য নগরবাসীর প্রতি অনুরোধ জানিয়েছে ডিএমপি।
এএসএস/আইএসএইচ