মানবাধিকার লঙ্ঘনের নিরপেক্ষ তদন্ত ও শাস্তিসহ আসকের ১০ দফা দাবি
স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে মানবাধিকার লঙ্ঘনের নিরপেক্ষ তদন্ত ও শাস্তি দেওয়াসহ ন্যায়ভিত্তিক সমাজ ও রাষ্ট্র গঠনে ১০ দফা সুপারিশ করেছে মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)।
শুক্রবার (৩১ ডিসেম্বর) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাগর-রুনি মিলনায়তনে ‘মানবাধিকার পরিস্থিতি ২০২১ : আসকের পর্যালোচনা’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি তুলে ধরা হয়।
বিজ্ঞাপন
আসকের ১০ দফা সুপারিশ হলো
১. রাষ্ট্রীয় বাহিনীর দ্বারা কোনো ধরনের মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা যেমন— বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, গুম, হেফাজতে নির্যাতন ও মৃত্যু, দায়িত্বে অবহেলা ইত্যাদির অভিযোগ উঠলে তা দ্রুততার সঙ্গে নিরপেক্ষভাবে তদন্ত এবং যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করে সম্পৃক্তদের বিচারের আওতায় আনা।
২. এ পর্যন্ত সংঘটিত সব গুম, অপহরণ ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ তদন্তে নিরপেক্ষ কমিশন গঠন করে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা। কাউকে আটক বা গ্রেফতারের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় বাহিনীকে দেওয়া উচ্চ আদালতের নির্দেশনা সম্পূর্ণভাবে মেনে চলা।
৩. নাগরিকদের মতপ্রকাশের অধিকার খর্ব না করা এবং কোনো ধরনের ভয়ভীতি বা প্রতিহিংসার শিকার হওয়া ছাড়াই নাগরিকরা যেন এ অধিকারগুলো চর্চা করতে পারে, তার পরিবেশ সৃষ্টি করা। গণমাধ্যম ও নাগরিকদের মতপ্রকাশের অধিকারের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে অংশীজনদের মতামতের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনা।
৪. নারীর সমানাধিকার নিশ্চিত করতে বিদ্যমান বৈষম্যমূলক আইনগুলোতে পরিবর্তন আনা এবং শিক্ষা কারিকুলামে সমমর্যাদা, সমানাধিকার, বৈষম্যহীনতা, বৈচিত্র্যতার প্রতি সম্মান প্রভৃতি বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা।
৫. নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে এবং প্রতিকার বিধানে- ক) ভুক্তভোগী ও সাক্ষী সুরক্ষা আইন প্রণয়ন এবং বিদ্যমান সাক্ষ্য আইনের ১৫৫ (৪) ও ১৪৬ (৩) ধারা বাতিল করা। ২০০৭ সালে আইন কমিশন কর্তৃক প্রস্তাবিত ‘ক্রাইম ভিকটিম কম্পেনসেশন অ্যাক্ট’ আইনে পরিণত করা। (খ) ধর্ষণের ঘটনার ক্ষেত্রে মহামান্য উচ্চ আদালতের ১৮ দফা নির্দেশনা সুস্পষ্টভাবে মেনে চলা এবং এক্ষেত্রে ব্যত্যয় ঘটলে ব্যবস্থা গ্রহণ। (গ) আইন ও বিচারিক কাঠামোর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাইকে জেন্ডার সংবেদনশীল করে তুলতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
৬. ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের নিজস্ব আচার-বিশ্বাস ও রীতি চর্চার অধিকারসহ পর্যাপ্ত নিরাপত্তা দেওয়ার ব্যবস্থা গ্রহণ এবং সাম্প্রদায়িক হামলা ও সহিংসতামূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে বিচার নিশ্চিত করা। পার্বত্য শান্তি চুক্তি বাস্তবায়নে যথাযথ ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
৭. শারীরিক ও মানসিকভাবে অক্ষম ব্যক্তি, ইনডিজিনিয়াস, দলিত, তৃতীয় লিঙ্গ, অন্যান্য অনগ্রসর জনগোষ্ঠী ও শ্রমজীবী মানুষের অধিকারের পূর্ণ চর্চা নিশ্চিত করাসহ রাষ্ট্র ও সমাজ জীবনের সর্বক্ষেত্রে সমান অধিকার নিশ্চিত করা।
৮. মানবাধিকারকর্মী ও জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের প্রস্তাবনা অনুযায়ী জাতীয় মানবাধিকার কমিশন আইন-২০০৯ দ্রুততার সঙ্গে সংশোধন করা : কমিশনের প্রধান ও সদস্যদের নিয়োগের জন্য একটি উন্মুক্ত ও অংশগ্রহণমূলক পদ্ধতি গ্রহণ করতে হবে।
৯. কাঙ্ক্ষিত গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ও ভোটাধিকার সুনিশ্চিত করতে নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য সংবিধান অনুযায়ী একটি আইন প্রণয়নের পাশাপাশি নির্বাচন কমিশনকে স্বাধীন ও কার্যকর প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
১০. গ্রাম ও শহরের সব মানুষকে সমতার ভিত্তিতে করোনার টিকা এবং বুস্টার ডোজ দেওয়ার ক্ষেত্রে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করা।
আসকের পর্যালোচনা তুলে ধরে এসময় বক্তব্য রাখেন আসকের পরিচালক নীনা গোস্বামী, নির্বাহী পরিচালক গোলাম মনোয়ার কামাল, মহাসচিব মো. নূর খান, জ্যেষ্ঠ সমন্বয়কারী আবু আহমেদ ফয়জুর কবির ও সহকারী সমন্বয়কারী অনির্বাণ সাহা।
এএজে/এসএসএইচ