ডা. সাবিরা-মুহিবুল্লাহ হত্যায় অস্বস্তি
বৈশ্বিক মহামারিতে টালমাটাল বিশ্ব। মাঝে কিছুদিন স্বাভাবিক থাকলেও করোনার নতুন ধরন ফের আতঙ্ক ছড়াচ্ছে। এমন অবস্থায় বিদায়ের পথে ২০২১ সাল। নানা কারণেই বছরটি আলোচিত-সমালোচিত। বিদায়ী বছরেও রাজধানীসহ সারাদেশে অনেকগুলো হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতেও মৃত্যুর সংখ্যা কম নয় (যেগুলোকেও অনেকে হত্যাকাণ্ড বলছেন)। ধর্ষণের পর নৃশংস হত্যার বিষয়টিও আছে।
এসব হত্যাকাণ্ডের মধ্যে রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহ ও ডা. সাবিরার বিষয়টি দেশ ছাপিয়ে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে বিদেশেও। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সবসময় প্রতিবাদী হতে না পারলেও নৃশংস হত্যাকাণ্ড সমাজের বিবেককে নাড়া দেয়। যার রেশ সহসা মিলিয়ে যায় না। ন্যায় বিচারের আকাঙ্ক্ষা কখনো মরে না। অনেক চাঞ্চল্যকর হত্যার তদন্ত ও রায়ে সরকারসহ সংশ্লিষ্ট মহলে সন্তোষ-প্রশস্তি শোনা গেলেও কিছু কিছু ঘটনার রহস্য উন্মোচনে ব্যর্থ হয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
বিজ্ঞাপন
বিদায়ী বছরের (২০২১) নৃশংস কিছু হত্যাকাণ্ড নিয়ে ঢাকা পোস্টের আজকের আয়োজন-
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের চেষ্টাই কাল হয় মুহিবুল্লাহর
চলতি বছরের ২৯ সেপ্টেম্বর রাত সাড়ে ৮টার দিকে কক্সবাজারের উখিয়ায় লাম্বাশিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে একদল দুর্বৃত্ত রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহকে গুলি করে হত্যা করে। মুহিবুল্লাহ আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস (এআরএসপিএইচ)-এর চেয়ারম্যান ছিলেন। তিনি রোহিঙ্গাদের অধিকারের কথা তুলে ধরতেন। মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের চেষ্টায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছিলেন মুহিবুল্লাহ।
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বাধাগ্রস্ত করতেই মুহিবুল্লাহকে হত্যা করা হয় বলে দাবি পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের। অন্যদিকে, মুহিবুল্লাহ হত্যার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারের দাবি জানায় মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীসহ পশ্চিমা কূটনীতিকরা। তীব্র নিন্দা জানায় জাতিসংঘও।
আলোচিত ওই হত্যাকাণ্ডের পরদিন রাতেই নিহত মুহিবুল্লাহর ভাই হাবিবুল্লাহ বাদী হয়ে উখিয়া থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। সরাসরি জড়িত সন্দেহে অন্তত দুই ডজন ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়।
মুহিবুল্লাহ হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে এপিবিএন-১৪ এর অধিনায়ক পুলিশ সুপার নাইমুল হক জানান, কক্সবাজারের উখিয়ায় রোহিঙ্গানেতা মুহিবুল্লাহ হত্যার পর থেকে এখন পর্যন্ত ১৭২ জনকে গ্রেফতার করেছে ১৪ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের সদস্যরা। পাশাপাশি রোহিঙ্গা ক্যাম্পের দুর্বৃত্তদের বিরুদ্ধে অব্যাহত বিশেষ অভিযানে গ্রেফতার দেখানো হয় ১৫০ জনকে।
তিনি জানান, মুহিবুল্লাহ হত্যার পর তার পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। এপিবিএনের সদস্য সংখ্যা চারগুণ বাড়ানো হয়েছে। গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানোর পাশাপাশি ক্যাম্পে নিয়মিত ব্লক রেইড দেওয়া হচ্ছে।
মুহিবুল্লাহ হত্যায় সরাসরি জড়িতদের চিহ্নিত করে দ্রুত আইনের আওতায় আনার চেষ্টা চলছে বলেও জানান পুলিশ সুপার নাইমুল হক।
প্লট-জমি বাগাতে সাহিনুদ্দীন হত্যা
চলতি বছরের ১৬ মে বিকেল ৪টায় জায়গা-জমি সংক্রান্ত বিরোধের মীমাংসার কথা বলে সাহিনুদ্দীন নামের এক যুবককে রাজধানীর পল্লবী থানার ডি ব্লকের একটি গ্যারেজের ভেতর নিয়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে হত্যা করা হয়।
প্রকাশ্য দিবালোকে রোমহর্ষক ওই হত্যার ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়। চাঞ্চল্য ছড়ায় হত্যাকাণ্ডের বীভৎসতা। পরে মায়ের করা মামলায় অন্তত ১৫ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তাদের মধ্যে দুজন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হন। গ্রেফতারদের মধ্যে লক্ষ্মীপুরের সাবেক সংসদ সদস্য ও বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের সাবেক মহাসচিব এম এ আউয়ালও আছেন।
স্ত্রীর পরামর্শে আজহারুলকে হত্যা করেন ইমাম
রাজধানীর দক্ষিণখানের একটি মসজিদের ইমাম মাওলানা আব্দুর রহমান। ভুক্তভোগী আজহারুল ও তার ছেলেকে আরবি পড়াতেন তিনি। বাসায় যাওয়া-আসার একপর্যায়ে আজহারুলের স্ত্রী আসমা আক্তারের সঙ্গে ইমামের অবৈধ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। বিষয়টি টের পেয়ে ইমামকে বাসায় আসতে নিষেধ করেন আজহারুল। এ নিয়ে স্ত্রীর সঙ্গে আজহারুলের দাম্পত্য কলহ শুরু হয়।
আজহারুলকে সরিয়ে দিতে রহমানের সঙ্গে আসমা হত্যার পরিকল্পনা করেন। এরই অংশ হিসেবে এশার নামাজের পর রহমান মসজিদের দোতলায় তার ঘরে আজহারুলকে ডেকে নেন। ধারালো অস্ত্র দিয়ে প্রথমে তার গলা কেটে হত্যা করা হয়। এরপর তার দুই হাত, পা ও মাথা বিচ্ছিন্ন করে মসজিদের সেপটিক ট্যাংকের ভেতরে ফেলে দেওয়া হয়।
পরবর্তীতে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়লে ২৫ মে স্থানীয়রা র্যাবকে খবর দেন। র্যাব সদস্যরা মসজিদের ইমামকে গ্রেফতার করেন এবং তার দেখানো সেপটিক ট্যাংক থেকে আজহারুলের মরদেহের খণ্ডিত অংশ উদ্ধার করেন। পরে আজহারের স্ত্রীকেও গ্রেফতার করা হয়। এ বিষয়ে র্যাবের গণমাধ্যম মুখপাত্র খন্দকার আল মঈন বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে নিহতের স্ত্রী আসমা আক্তার ও ইমাম আব্দুর রহমান হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন।
নির্বাচনী সহিংসতায় বলি কাউন্সিলর সোহেল
গত ২২ নভেম্বর বিকেল সাড়ে ৪টায় সন্ত্রাসীরা কুমিল্লা নগরের পাথুরিয়া পাড়া থ্রি স্টার এন্টারপ্রাইজ নামের একটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে ঢুকে গুলি করে কাউন্সিলর সোহেল ও তার সহযোগী হরিপদ সাহাকে হত্যা করে। এ সময় গুলিবিদ্ধ হন আরও পাঁচজন। পরদিন কাউন্সিলর সোহেলের ভাই সৈয়দ মো. রুমন বাদী হয়ে ১১ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও আট থেকে দশজনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেন।
ওই মামলায় এজাহারভুক্ত আসামিদের মধ্যে তিনজন বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন। তাদের জানাজা ছাড়াই দাফন করা হয়। ওই ঘটনায় গ্রেফতার হন আরও সাতজন।
রোমহর্ষক ওই হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে কুমিল্লার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. সোহান সরকার জানান, সর্বশেষ গত ১৪ ডিসেম্বর নাজিম ওরফে নাদিম (৩০) ও মো. রিশাত (২৫) নামের আরও দুই আসামিকে গ্রেফতার করে পুলিশ। রিশাত ছিলেন হত্যাকাণ্ডে ব্যবহার হওয়া অস্ত্রের জোগানদাতা। আর নাজিম ওই এলাকার মিজানুর রহমানের ছেলে।
জেএসএস নেতা পুশৈ থোয়াই মারমা হত্যা
বান্দরবানে অপহৃত জনসংহতি সমিতির (জেএসএস-মূল দল) নেতা পুশৈ থোয়াই মারমার মরদেহ ১৩ ডিসেম্বর সকালে উদ্ধার করে পুলিশ। আগের দিন সন্ধ্যায় ডলুপাড়া থেকে একদল অস্ত্রধারী তাকে অপহরণ করেন। অনেক খোঁজাখুঁজির পর বান্দরবান-চন্দ্রঘোনা-রাঙ্গামাটি সড়কের আমতলিপাড়ার অদূরে তার মরদেহ পাওয়া যায়।
স্বামীর নির্যাতনে ঢাবিছাত্রীর মৃত্যু
গত ১৪ ডিসেম্বর বিকেল ৪টার দিকে রাজধানীর বনানীর স্বামীর বাসা থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) নৃত্যকলা বিভাগের ২০১৫-১৬ সেশনের শিক্ষার্থী ইলমা চৌধুরী মেঘলার (২৪) মরদেহ উদ্ধার করা হয়। ইলমার শ্বশুরবাড়ির লোকজনই পুলিশকে ফোন দেন। তারা দাবি করেন, মেঘলা আত্মহত্যা করেছেন।
মরদেহের ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে পাঠানো হয়। মামলার এজাহারে বলা হয়, নির্মমভাবে নির্যাতন করে হত্যা করা হয় ইলমাকে। ওই ঘটনায় আটক করা হয় ইলমার স্বামী ইফতেখার আবেদীনকে।
বন্ধুদের হাতে ছয় টুকরো বন্ধু
গত ১৩ জুলাই আশুলিয়ার নরসিংহপুরে সাভার রেসিডেন্সিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ মিন্টু বর্মণকে ডেকে নিয়ে হত্যা করেন তারই বন্ধুরা। হত্যার পর মরদেহ ছয় টুকরো করে স্কুলের আঙিনায় পুতে রাখেন তারা।
র্যাবের তদন্তে মরদেহের পাঁচ টুকরো স্কুলের আঙিনা থেকে এবং বিচ্ছিন্ন মাথা ঢাকার আশকোনার একটি ডোবা থেকে উদ্ধার করা হয়। গ্রেফতার করা হয় তিনজনকে। র্যাব জানায়, সাভারের আশুলিয়ায় প্রাইভেট পড়া নিয়ে দ্বন্দ্বে মিন্টু চন্দ্র বর্মণকে হত্যা করা হয়। আদালতে দুজন স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দেন।
নির্বাচনে হেরে তিন খুন
রংপুরের গঙ্গাচড়ায় ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে হেরে যান মেম্বারপ্রার্থী সাইফুল ইসলাম। প্রতিশোধ নিতে নির্বাচিত ইউপি সদস্যসহ তিনজনকে হত্যা করেন তিনি ও তার দল।
আলোচিত ওই হত্যা মামলার অন্যতম আসামি শফিকুল ইসলামকে গ্রেফতারের পর রংপুর সিআইডির পুলিশ সুপার আতাউর রহমান জানান, গঙ্গাচড়া উপজেলার নোহালী ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডে বিপুল ভোটে আজিজুল ইসলাম মেম্বার নির্বাচিত হন। এটা মেনে নিতে পারেননি পরাজিত প্রার্থী সাইফুল ইসলাম ও তার ভাই শফিকুল ইসলাম। তারা বিজয়ী আজিজুল ইসলামকে হত্যার পরিকল্পনা করেন।
গত ৬ এপ্রিল ইউপি সদস্য আজিজুল ইসলাম স্থানীয় আনন্দবাজার থেকে বাড়ি ফেরার পথে সাবেক ইউপি সদস্য সাইফুল ইসলামের নেতৃত্বে দুর্বৃত্তরা হত্যা করেন। ঘটনা ভিন্ন খাতে প্রভাবিত করতে নিজের আপন চাচাতো ভাই রিয়াজুল ইসলামকেও (৮৬) জবাই করে হত্যা করা হয়। ওই দুই হত্যাকাণ্ড দেখে ফেলায় নিহত আজিজুল ইসলামের ভাতিজি মোনালিসাকেও চার মাস পর হত্যা করা হয়।
নির্বাচনের কেন্দ্র দখলে নিতে বিজিবি সদস্যকে হত্যা
গত ২৮ নভেম্বর তৃতীয় ধাপের ইউপি নির্বাচনের দিন নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলায় চেয়ারম্যানপ্রার্থী মারুফ হোসেনের সমর্থকদের হামলায় বিজিবি সদস্য নায়েক রুবেল হোসেন নিহত হন।
কেন্দ্র দখল ও জাল ভোট দেওয়ার জন্য প্রিজাইডিং অফিসারকে অনুরোধ করেও রাজি করতে না পেরে নির্বাচনী কর্মকর্তাদের লাঞ্ছিত করা হয়। উপজেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা তা জেনে ভোট বন্ধ রাখেন। বিকেলের পর ভোট গণনা শুরু হলে মারুফের লোকজন আবারও কেন্দ্র দখলের চেষ্টা করেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কেন্দ্রে বিজিবির টহল টিম আসে। এ সময় হামলা চালিয়ে হত্যা করা হয় বিজিবি সদস্য রুবেল হোসেনকে।
ওই ঘটনায় গত ১৩ ডিসেম্বর সাভারের আশুলিয়া থেকে মূল অভিযুক্ত মারুফকে গ্রেফতার করে র্যাব-৪ এর একটি দল। গ্রেফতার মারুফ কিশোরগঞ্জ উপজেলার গড়াগ্রাম ইউপি নির্বাচনে জাতীয় পার্টির মনোনীত চেয়ারম্যানপ্রার্থী ছিলেন। তার বাবা মোসাদ্দেক হোসেন একই ইউনিয়নে ১৯ বছর ধরে চেয়ারম্যান ছিলেন। ২০১৭ সালে তার মৃত্যু হলে উপনির্বাচনে জয়ী হন মারুফ হোসেন।
নির্বাচনে হেরে নির্বাচিতকে খুন
বছরের শুরুতেই (১৬ জানুয়ারি) সিরাজগঞ্জ পৌরসভার ৬নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদে নির্বাচিত হন তরিকুল ইসলাম। ফল ঘোষণার পরপরই পরাজিত প্রার্থী শাহাদত হোসেনের সমর্থকরা তার ওপর হামলা চালান। ধারালো অস্ত্র দিয়ে তরিকুল ইসলামকে হত্যা করা হয়। ওই ঘটনার পরদিন নিহতের ছেলে হৃদয় খান শাহাদত হোসেনসহ ৩২ জনের নাম উল্লেখ করে হত্যা মামলা দায়ের করেন।
নির্বাচনে জেতার পরদিনই খুন হন মেম্বার রউফ
আগের দিন জনগণের ভোটে নির্বাচিত হন। ঠিক পরের দিনই খুন হন গাইবান্ধা সদর উপজেলার লক্ষ্মীপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য আব্দুর রউফ মিয়া। ব্যক্তিগত বিরোধের জেরে রউফকে হত্যা করার কথা স্বীকার করেন গ্রেফতার হওয়া আসামি আরিফ মিয়া। নিহতের আত্মীয়-স্বজনের দাবি, রাজনৈতিক কারণে তাকে হত্যা করা হয়েছে।
অন্যদিকে র্যাব জানায়, ব্যক্তিগত বিরোধে আরিফ খুন করেন নবনির্বাচিত মেম্বার আব্দুর রউফকে। তবে ঘটনার নেপথ্যে অন্য কোনো কারণ বা কারও সহায়তা, প্রলোভন কিংবা পরিকল্পনা ছিল কি না, সেটা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
ডা. সাবিরা হত্যা : গোলকধাঁধায় তদন্ত
গত ৩১ মে রাজধানীর কলাবাগানের ৫০/১, প্রথম লেনের ভাড়াবাসা থেকে গ্রিন লাইফ হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. সাবিরা রহমান লিপির দগ্ধ মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। তার পিঠে দুটি ও গলায় একটি ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন মেলে। আলামত সংগ্রহের পর সিআইডি’র ক্রাইম সিন ইউনিট জানায়, সাবিরাকে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করা হয়েছে। তাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাতের পর বিছানায় আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়।
খুনের নেপথ্যে কারণ কী— সে সম্পর্কে কোনো ক্লু পাচ্ছে না পুলিশ। নানা প্রশ্নের ঘুরপাকেও খুলছে না তদন্তের জট। ডা. সাবিরা হত্যার ঘটনায় অন্তত দুই ডজন পরিচিত বন্ধু, স্বজন, আত্মীয় ও বাসার বাসিন্দাদের জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ। তবে মেলেনি আমলযোগ্য তথ্য, গোলকধাঁধায় আটকা তদন্ত!
এ বিষয়ে পিবিআই, ঢাকা মেট্রো দক্ষিণের পুলিশ সুপার (এসপি) মিজানুর রহমান শেলী ঢাকা পোস্টকে বলেন, অনেক সংস্থাই কাজ করছে। আমরাও শুরু থেকে ছায়া তদন্ত করে আসছি। আমরা মূলত দুটি ডাইমেনশন (মাত্রা) বিবেচনায় নিয়ে তদন্ত করছি। ডিফারেন্ট (ভিন্ন) কিছু খুঁজছি। খুন করার পর আলামত নষ্ট করা হয়েছে নাকি খুনের আগে আগুন দেওয়া হয়েছে, প্রিপ্লান (পূর্বপরিকল্পনা) নাকি ইন্সট্যান্ট (তাৎক্ষণিক) খুন— বিষয়গুলো আগে তদন্ত করে দেখছি।
আমরা দুই ধরনেরই তথ্য পাচ্ছি। তবে এখন পর্যন্ত খুনি কে, সেটা স্পষ্ট নয়— বলেন এসপি মিজানুর রহমান শেলী।
এদিকে, মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নয় মাসে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হেফাজতে সারাদেশে ৪৮ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানায়।
নিহতদের মধ্যে বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে ‘ক্রসফায়ার’, ‘গুলিবিনিময়’ বা ‘এনকাউন্টার’-এ নিহত হন ৩৪ জন। বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গুলিতে নয়জন এবং নির্যাতনে মারা যান চারজন। এছাড়া গ্রেফতারের পরে হার্ট অ্যাটাকে (পুলিশের ভাষ্য অনুযায়ী) একজনের মৃত্যু হয়।
ধর্ষণের পর হত্যার শিকার হন ৩৯ জন এবং আত্মহত্যা করেন আট নারী। যৌন হয়রানির শিকার হয়ে আত্মহত্যা করেন ১০ নারী এবং হত্যার শিকার হন তিন নারী।
এছাড়া যৌন হয়রানির প্রতিবাদ করায় খুন হন চার পুরুষ। যৌতুকের জন্য নির্যাতন করে হত্যা করা হয় ৬০ জনকে এবং নির্যাতনের শিকার হয়ে আত্মহত্যা করেন ১২ নারী।
জেইউ/এমএআর/