চতুর্থ ধাপে ৮৩৮টি ইউনিয়ন পরিষদ ও তিনটি পৌরসভা নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুুষ্ঠিত হয়েছে রোববার (২৬ ডিসেম্বর)। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশের বিভিন্ন জেলায় সংঘর্ষ, উত্তেজনা ও বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। কয়েকটি এলাকায় নির্বাচন কর্মকর্তা ও বিজয়ী প্রার্থীর ওপরও হামলার ঘটনা ঘটেছে।

পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে গুলি ছুঁড়েছে। গুলিতে ঠাকুরগাঁও, পটুয়াখালী ও সিলেট জেলায় গুলিবিদ্ধ হয়ে তিনজন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এসব ঘটনায় আহত হয়েছেন অর্ধশতাধিক ব্যক্তি। 

ভোট সুষ্ঠু হয়েছে, দাবি ইসির

এদিকে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের চতুর্থ ধাপে ৭০ শতাংশের বেশি ভোট পড়েছে বলে দাবি করেছেন নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিব হুমায়ুন কবীর খোন্দকার। 

রোববার (২৬ ডিসেম্বর) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের মিডিয়া সেন্টারে চতুর্থ ধাপের নির্বাচন শেষে সংবাদ সম্মেলনে তার এ দাবি করেন ইসি সচিব।

সচিব বলেন, আমি খোঁজ নিয়েছি বিভিন্নভাবে। সব মিলিয়ে এ নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে, আনন্দমুখর পরিবেশে ভোট হয়েছে, জনগণের সম্পৃক্ততা ছিল। তাই ভোটারদের উপস্থিতি আমরা ৭০ শতাংশের বেশি আশা করছি।

তিনি বলেন, শুধু এই ধাপের নির্বাচনই নয় আগের তিন ধাপসহ এবারের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের প্রতিটি ধাপে নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে।

সিলেটে নির্বাচনী সহিংসতায় নিহত ১

সিলেটের গোলাপগঞ্জে ইউপি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে পুলিশের সঙ্গে গ্রামবাসীর সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। রোববার (২৬ ডিসেম্বর) রাত সাড়ে ৮টার দিকে উপজেলার সিলেট-জকিগঞ্জ সড়কের ফুলবাড়ি ইউনিয়নের বৈটিকর বাজারে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে৷

এ ঘটনায় আহত এক সাইকেল মেকানিকের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া আরও ৭-৮ জন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন।
সংঘর্ষে নিহতের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সিলেটের পুলিশ সুপার (এসপি) ফরিদ উদ্দিন।
নিহত সাইকেল মেকানিকের নাম আব্দুস সালাম (৪০)। তিনি লক্ষ্মীপাশা ইউপির রামপা দক্ষিণ ভাগ এলাকার বাসিন্দা। 

স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, রোববার গোলাপগঞ্জের ইউনিয়নে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। রাত সাড়ে ৮টার দিকে ৮ ও ৯ নং ওয়ার্ডের দুটি কেন্দ্রের ফলাফলকে কেন্দ্র করে চেয়ারম্যান প্রার্থী এমরান হোসেনের লোকজন বৈটিকর বাজারে এসে সিলেট-জকিগঞ্জ সড়ক অবরোধ করেন। এ সময় পুলিশ এসে তাদের সড়ক থেকে সরিয়ে দিতে চাইলে পুলিশের সঙ্গে এমরান হোসেনের সমর্থকদের সংঘর্ষ বাধে। পরে পুলিশ টিয়ার সেল ও গুলি নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। সংঘর্ষ চলাকালে বৈটিকর বাজারের একটি রিকশার গ্যারেজের মেকানিক আবদুস সালাম গুরুতর আহত হন। পরে তাকে উদ্ধার করে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। নিহত সালামের বুক ও পেটে ছররা গুলির অসংখ্য চিহ্ন রয়েছে। বর্তমানে মরদেহ লাশ হাসপাতালের মর্গে রাখা আছে। আহতদের মধ্যে অনেকেই সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

ঠাকুরগাঁওয়ে পুলিশের গুলিতে নিহত ১

ঠাকুরগাঁওয়ে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের ফলাফলকে কেন্দ্র করে রাস্তা অবরোধ এবং এ নিয়ে সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশের গুলিতে হামিদুল ইসলাম (৬৫) নামে এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও পাঁচজন। রোববার (২৬ ডিসেম্বর) রাত ৮টার দিকে সদর উপজেলার রুহিয়া থানার রাজাগাঁও ইউনিয়নে এ ঘটনা ঘটে। 

নিহত হামিদুল ইসলাম রাজাগাঁও ইউনিয়নের আসাননগর গ্রামের মৃত তছির উদ্দীনের ছেলে।  

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার রুহিয়া থানার রাজাগাঁও ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের আসাননগর কাদেরিয়া ইসলামিয়া দাখিল মাদরাসা ভোটকেন্দ্রের ফলাফলকে কেন্দ্র করে রাত ৮টার দিকে রাস্তা অবরোধ করেন স্থানীয়রা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ গুলি ছুড়লে ঘটনাস্থলেই একজন নিহত হন। আহত হন আরও পাঁচজন। 

রুহিয়া থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) চিত্ত রঞ্জন ঢাকা পোস্টকে বলেন, ঘটনাস্থলেই একজন মারা গেছেন। প্রশাসনের লোকজন সেখানে গেছেন। বিস্তারিত পরে জানানো হবে। আহতরা বর্তমানে ঠাকুরগাঁও সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। 

রাঙ্গাবালীতে ভোটকেন্দ্রে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত ১

পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার চরমোন্তাজ ইউনিয়নে গুলিবিদ্ধ হয়ে আবদুল খালেক (৪৫) নামে এক মেম্বার প্রার্থীর সমর্থকের মৃত্যু হয়েছে। 
রোববার (২৬ ডিসেম্বর) সন্ধ্যার পর চরমন্তাজ ইউনিয়নে নয়ার চর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে ওই ব্যক্তি গুলিবিদ্ধ হন। তবে কার গুলিতে তিনি নিহত হয়েছেন সে বিষয়ে এখনো দায়িত্বশীল কোনো পক্ষের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। 
স্থানীয় সূত্র জানায়, নিহত ব্যক্তি মেম্বার প্রার্থী জিয়ার সমর্থক। নির্বাচন পরবর্তী ভোট গণনা নিয়ে নির্বাচন সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে এক মেম্বার প্রার্থীর কর্মীসমর্থকদের মধ্যে বিরোধের জেরে এ ঘটনা ঘটে। 
রাঙ্গাবালী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) জগলুল বলেন, আমি নদীতে আছি, এখনও কিছু বলতে পারছি না। চরমোন্তাজ পৌঁছানোর পর বিস্তারিত জানাতে পারব।     
এ বিষয় জানতে পটুয়াখালীর জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও পুলিশ সুপারের (এসপি) সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তাদের পাওয়া যায়নি।

ভোট গণনা শেষে ফেরার পথে কর্মকর্তাদের ওপর হামলা, মাইক্রোবাসে আগুন

কিশোরগঞ্জে কটিয়াদী উপজেলার সহশ্রাম-ধূলদিয়া ইউনিয়নের গৌরিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের ভোট গণনা শেষে ভোটের সরঞ্জাম নিয়ে মাইক্রোবাসযোগে ফেরার পথে নির্বাচন কর্মকর্তাদের ওপর হামলা চালিয়েছে দুর্বৃত্তরা।

রোববার (২৬ ডিসেম্বর) রাত ৮টার দিকে এ হামলার ঘটনা ঘটে। একপর্যায়ে মাইক্রোবাসটিতে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা। 

ভোটের সরঞ্জাম নিয়ে নির্বাচন কর্মকর্তারা ওই এলাকার একটি বাড়িতে গিয়ে আশ্রয় নিলে সেখানে গিয়েও হামলা চালানো হয় ও তাদের সঙ্গে থাকা সরঞ্জাম ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে দুর্বৃত্তরা। খবর পেয়ে বিজিবি ও পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে অর্ধশত রাউন্ড শটগানের গুলি ছুড়ে পুলিশ। 

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, রাত ৮টার দিকে গৌরিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট গণনা শেষে উপজেলায় ফেরার পথে এ হামলার ঘটনা ঘটে। হামলাকারীরা মাইক্রোবাসে আগুন ধরিয়ে দিয়ে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের সঙ্গে থাকা সরঞ্জামও ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় ভোটগ্রহণ কর্মকর্তারা পাশের একটি বাড়িতে গিয়ে আশ্রয় নিলে সেখানেও তাদের ওপর হামলা চালানো হয়।    

কটিয়াদী থানার ওসি এসএম শাহদাত হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করে ঢাকা পোস্টকে বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। ভোটগ্রহণ কর্মকর্তারা এখন নিরাপদে রয়েছেন। এছাড়া ওই এলাকার পরিস্থিতিও স্বাভাবিক। পরবর্তীতে যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে সতর্ক অবস্থান রয়েছে পুলিশ।  

এসকেডি