ঢাকা নগর পরিবহন আনিসুল হকের নামে উৎসর্গ
বাস রুট রেশনালাইজেশন কমিটির সভাপতি ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস বলেছেন, আজকে বাস রুট রেশনালাইজেশনের আওতায় পরীক্ষামূলক যাত্রাপথে কার্যক্রম সূচনা হলো। পরীক্ষামূলক যাত্রাপথের শুভ সূচনা প্রয়াত মেয়র আনিসুল হককে উৎসর্গ করেছি। সবকিছুর শুরুই স্বপ্ন দিয়ে।
তিনি বলেন, স্বপ্ন দেখেছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রয়াত মেয়র আনিসুল হক। আমি এবং উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম সেই স্বপ্নকে বুকে ধারণ করে, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের দিকনির্দেশনা, পরামর্শের আলোকে আলোকে আজ আমরা পরীক্ষামূলক যাত্রাপথে শুভ সূচনা করলাম। আজকের এই নবযাত্রাকে আমি উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রয়াত মেয়র আনিসুল হককে উৎসর্গ করছি।
বিজ্ঞাপন
রোববার (২৬ ডিসেম্বর) মোহাম্মদপুর বিআরটিসি বাস ডিপো সংলগ্ন এলাকায় বাস রুট রেশনালাইজেশন কার্যক্রমের অংশ হিসেবে ‘ঘাটারচর-মোহাম্মদপুর-গুলিস্তান-মতিঝিল-সাইনবোর্ড-কাঁচপুর ব্রিজ’ পরীক্ষামূলক যাত্রাপথে 'ঢাকা নগর পরিবহন' শীর্ষক বাস সেবা প্রবর্তন উপলক্ষে আয়োজিত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
মেয়র তাপস বলেন, আমরা নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই পরিপূর্ণভাবে এ কার্যক্রম বাস্তবায়ন করব। সেজন্য সবার সহযোগিতা এবং বিশেষভাবে ঢাকাবাসীর সহযোগিতা কামনা করছি। এ নতুন বাস সেবা ঢাকা নগর পরিবহন আপনাদের জন্য আমাদের এবং সড়ক পরিবহন মন্ত্রীর বিজয়ের উপহার।
মেয়র ব্যারিস্টার শেখ তাপস পর্যায়ক্রমে পুরো ঢাকা শহরের গণপরিবহনে শৃঙ্খলা আনার প্রত্যয় জানিয়ে বলেন, কোনো অনুমোদনহীন বাস ঢাকা শহরে চলতে পারবে না। যে যেই রুটে পারমিট নিয়েছে সেই রুটেই পরিচালনা করতে হবে এবং পর্যায়ক্রমে সব রুটে ঢাকা নগর পরিবহন পরিচালিত হবে। আমাদের আরও কাজ বাকি আছে। বাইরের বাসের জন্য শহরের বাইরে বাস টার্মিনাল করা শুরু করব। সেই সময় বাইরের বাস আর শহরের মধ্যে ঢুকতে পারবে না।
পরীক্ষামূলক যাত্রাপথে বাস সেবা চালুকে আজকে নব সূচনা উল্লেখ করে মেয়র বলেন, আমাদের লক্ষ্য আগামী ২০২৩ সালের মধ্যে যখন এমআরটি পুরোদমে চলবে, তার সঙ্গে সঙ্গে নিচের সড়কে গণপরিবহনে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা এবং আমরা সেটা পূর্ণ বাস্তবায়ন করবো। আজকে নবসূচনার মাধ্যমে আমরা প্রথম যাত্রাপথ শুরু করছি। আমাদের গাড়ি চালক, বাস চালকরা, আমাদের শ্রমিকরা এতো দিন শুধু গ্লানি পেয়েছে। এতো দিন শুধু অবজ্ঞা পেয়েছে। আজকে নব সূচনা হলো তারা সম্মান পেয়েছে। তারা তাদের কাপড় (ইউনিফর্ম) পেয়েছ, তারা তাদের মর্যাদা পেয়েছে, তারা তাদের নির্দিষ্ট মাসিক বেতন পাচ্ছে। এটাই আমাদের নবসূচনা। জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে নব দিগন্তের বাংলাদেশ।
‘ঢাকা নগর পরিবহন’ শীর্ষক বাস সেবা প্রবর্তন উপলক্ষে আয়োজিত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি সংযুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নতুন বছরে বেশ কয়েকটি মেগা ও কয়েকটি ড্রিম প্রজেক্ট উদ্বোধন করবেন। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সারা দেশে সড়ক ও যোগাযোগ ব্যবস্থার ব্যাপক উন্নতি হয়েছে। আজকে আমাদের এই ঢাকা তরুণ প্রজন্মের ড্রিম প্রজেক্ট মেট্রোরেল এমআরটি লাইন ৬ আগামী বছরই আমরা উদ্বোধন করতে পারব। সেই লক্ষ্য নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি। আপনারা জানেন, বাঙালি জাতির অনেক স্বপ্ন এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাহসী সিদ্ধান্তের সোনালী ফসল পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। এখন পিচ ঢালাই চলছে। আগামী বছরে ইনশাআল্লাহ পদ্মা সেতু দিয়ে যান চলাচলের জন্য প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধন করবেন।
তিনি আরও বলেন, আমাদের আরেকটি প্রকল্প গাজীপুর থেকে এয়ারপোর্ট পর্যন্ত বাস র্যাপিড ট্রানজিট যেটার জন্য গত কয়েক বর্ষায় জনগণ-যাত্রীরা অনেক কষ্ট স্বীকার করেছেন। সেই ভোগান্তির অবসান হতে যাচ্ছে। আমি আশা করছি, আগামী বছরের শেষ দিকে বাস র্যাপিড ট্রানজিটও আমরা যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দিতে পারব। এছাড়াও, বহুদিন ধরে ফান্ডিংয়ের অভাবে ঢাকা এলিভেটেট এক্সপ্রেস ওয়ের নির্মাণ কাজ ঝুলে ছিল। সেই এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ কাজ এখন গতি পেয়েছে। সবচেয়ে বেশি গত পেয়েছে– চট্টগ্রামের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কর্ণফুলী টানেলের নির্মাণ কাজ। এ টানেলের প্রায় ৭৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। আগামী বছর বেশ কয়েকটি মেগা প্রজেক্ট উদ্বোধন হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেসব মেগা ও ড্রিম প্রজেক্ট উদ্বোধন করবেন এবং সে লক্ষ্যে আমাদের কর্মকাণ্ড এগিয়ে যাচ্ছে।
সড়ক ও গণপরিবহনে শৃঙ্খলা আনয়নের লক্ষ্যে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রয়াত মেয়র আনিসুল হকের অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করতে দুই সিটির মেয়র যে উদ্যোগ নিয়েছেন তাতে মন্ত্রীর ব্যক্তিগতভাবে এবং মন্ত্রণালয়ের তরফ হতে সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস ব্যক্ত করেন। এসময় ওবায়দুল কাদের বলেন, যানজট প্রবণ ঢাকা মহানগরী। দুর্ঘটনা যেমন দুর্ভাবনা তেমনি যানজট আমাদের জন্য দুশ্চিন্তারও কারণ।
অনুষ্ঠানে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, এটি বাস্তবায়নের জন্য আমরা ২০টি মিটিং করেছি। করোনার মধ্যে মিটিং করেছি। ঢাকা শহরে শৃঙ্খলা ফেরাতে চেষ্টায় গিয়ে আমরা বুঝেছি বাস রুট রেশনালাইজেশনের কোনো বিকল্প নেই। আমরা কাজ করেছি এজন্য। সবার অক্লান্ত পরিশ্রমে আজ এটা পরীক্ষামূলকভাবে বাস্তবায়ন হচ্ছে। এ রুটে যারা বাস চালাবে সবার ড্রেস থাকবে। পরিচয়পত্র বাসের ভেতরে টাঙিয়ে রাখতে হবে। শৃঙ্খলা আনতে বাসের বিকল্প নেই। যদি সবকিছু মেনটেইন করতে পারি, তাহলে সড়কে প্রাইভেটকারের চাপ কমবে।
ঢাক পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের নির্বাহী পরিচালক নীলিমা আখতারের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে ঢাকা-১৩ আসনের সংসদ সদস্য মো. সাদেক খান, বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট করপোরেশনের চেয়ারম্যান মো. তাজুল ইসলাম, বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথোরিটি (বিআরটিএ) চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মজুমদার, ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের সাবেক নির্বাহী পরিচালক খন্দকার রাকিবুর রহমান, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান নিবার্হী কর্মকর্তা ফরিদ আহম্মদ, উত্তর সিটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সেলিম রেজা, যুগ্ম পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) সৈয়দ নুরুল ইসলাম, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্লাহ, গণপরিবহন বিশেষজ্ঞ ড. এস এম সালেহ উদ্দিন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এএসএস/এসএম