নিয়োগ বিধিমালার সংশোধন চায় রেলওয়ে পোষ্য সোসাইটি
বাংলাদেশ রেলওয়ে ক্যাডার বহির্ভূত কর্মচারী নিয়োগ বিধিমালা সংশোধনসহ ৮ দফা দাবিতে মানববন্ধন ও প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি পেশ করেছে বাংলাদেশ রেলওয়ে পোষ্য সোসাইটি।
মঙ্গলবার (২১ ডিসেম্বর) সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। মানববন্ধন শেষে বেলা ১টায় সংগঠনের সভাপতির নেতৃত্বে ৭ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে গিয়ে তাঁর বরাবর স্মারকলিপি পেশ করেন।
বিজ্ঞাপন
সংগঠনের সভাপতি মো. মনিরুজ্জামান মনির বলেন, রেলওয়ে ক্যাডার বহির্ভূত কর্মচারী নিয়োগ বিধিমালা-২০২০ সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। এ নিয়োগবিধি মূলত রেলওয়ের শ্রমিক-কর্মচারী ও পোষ্যদের অধিকার বঞ্চিত করার এক ঐতিহাসিক দলিল। ষড়যন্ত্রমূলক এই নিয়োগ বিধি রেলওয়ে শ্রমিক-কর্মচারী ও পোষ্যরা নীতিগত ভাবে কখনো মেনে নেবে না।
তিনি বলেন, প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই রেলওয়ে সম্পূর্ণ আলাদা। রেলওয়ে সরকারের অন্যান্য বিভাগের মত নয়, ব্রিটিশ-ভারত থেকে পরবর্তীকালে পাকিস্তান এবং ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জনের পর বাংলাদেশ আমলেও এই প্রতিষ্ঠানটি রেলওয়ে অ্যাক্ট, সংস্থাপন কোড, জিএস রুলস, ইএনডি রুলস, রেলওয়ের বিভিন্ন বিভাগ ভিত্তিক, বিভিন্ন কোড-ম্যানুয়ালের মাধ্যমে সম্পূর্ণ আলাদা ভাবে পরিচালিত হয়ে আসছে এবং ওইসকল বিবিধ বিধি-বিধান এখন পর্যন্ত কার্যকর আছে। ক্যাডার বহির্ভূত কর্মচারী নিয়োগ বিধিমালা-২০২০ বাংলাদেশ রেলওয়ের প্রচলিত বিধি-বিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। স্বাভাবিক কারণে রেলওয়ে শ্রমিক-কর্মচারী ও পোষ্যরা মনে করে রেলওয়ে তাদের স্বতন্ত্র আইন দ্বারা পরিচালিত হয়ে আসছে এবং রেলওয়েকে চলমান স্বতন্ত্র প্রক্রিয়ায় পরিচালনা করা উচিত।
এতে আরও বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশ রেলওয়ে পোষ্য সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মহিউদ্দিন সাগর, সাংগঠনিক সম্পাদক আমজাদ হোসেন বাবু, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক হুমায়ুন কবির রাব্বি, চট্টগ্রাম জেলার সভাপতি সাইদুজ্জামান শিপন, সহ-দপ্তর সম্পাদক মো. মাহাবুব রহমান মানিক, ক্রীড়া সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম, সান্তাহার রেলওয়ে জেলা শাখার সভাপতি শেখ মামুন সরওয়ার নিটু, ঢাকা জেলা শাখার আহ্বায়ক মো. মফিজুল ইসলাম, মৌলভীবাজার জেলা শাখার সভাপতি হাসানুজ্জামান শাহিন, বগুড়া জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক মামুনুর রশিদ সাদ্দাম, সৈয়দপুর শাখার সভাপতি মো. শামিম মাহমুদ লিমন সরকার, শ্রীমঙ্গল শাখার সাধারণ সম্পাদক শিপন মিয়া, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য এমদাদুল হক, চট্টগ্রাম জেলা সাংগঠনিক সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম রানা, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক রশিদুল হক রানা, দফতর সম্পাদক সাকেল হোসেন শাকিল, সৈয়দপুর জেলা মহিলা বিষয়ক সম্পাদক মেরাজুন নেছা মনি প্রমুখ।
কর্মসূচিতে সারাদেশ থেকে আগত প্রায় ৩ শতাধিক রেলওয়ে পোষ্য অংশগ্রহণ করেন।
রেলওয়ে কর্মচারীবান্ধব নিয়োগবিধি প্রণয়নসহ বাংলাদেশ রেলওয়ে পোষ্য সোসাইটির ৮ দফা দাবি নিম্নরূপ:
১. সংশোধিত নিয়োগ বিধিমালা-২০২০ সংশোধনপূর্বক রেলওয়ে কর্মচারীবান্ধব নিয়োগবিধি প্রণয়ন এবং আইবাস সিস্টেম রেল উপযোগী করে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে রেলওয়ের সকল ট্রেড ইউনিয়ন ও উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা এবং রেলওয়ে পোষ্য সোসাইটির সঙ্গে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ এবং প্রতিটি রেল কর্মচারীর পরিবার থেকে কমপক্ষে একজন পোষ্যর চাকরি নিশ্চিতকরণের দাবি জানাচ্ছি।
২. প্রকাশিত ৮৬৫ জন খালাসী ও ১১১৩ জন ওয়েম্যানের ফলাফল থেকে অধিকার বঞ্চিত আন্দোলনরত রেলওয়ে পোষ্যদের পূর্বাঞ্চল ও পশ্চিমাঞ্চল মহাব্যবস্থাপক কর্তৃক অনুমোদিত তালিকা অনুযায়ী খালাসী ও ওয়েম্যান পদে নিয়োগ দেওয়ার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ এবং জনবল নিয়োগের জন্য নিয়োগবিধি ১৯৮৫ অনুযায়ী জারিকৃত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির পরীক্ষা গ্রহণ সম্পন্ন হওয়া এবং আবেদিত চাকরি প্রত্যাশীদের পরীক্ষা গ্রহণ ও নিয়োগ সম্পন্ন করার দাবি জানাচ্ছি।
৩. জনবল কাঠামো পুনর্গঠনের নামে মাথাভারী প্রশাসন সৃষ্টির আত্মঘাতি সিদ্ধান্ত বাতিল করে মাঠ পর্যায়ে কাজ করা শ্রমিকদের পদ বাড়াতে হবে। প্রকল্পে নিয়োজিত শ্রমিকদের স্থায়ীকরণ, রেলওয়েতে সকল প্রকার আউটসোর্সিংয়ের নামে পকেটসোর্সিং বন্ধ করতে হবে। প্রয়োজনে জনবল সংকট সমাধানে রেলওয়ে পোষ্য সোসাইটির মাধ্যমে সকল জেলা থেকে অসহায়-দরিদ্র রেলওয়ে পোষ্যদের টিএলআর/অস্থায়ী শ্রমিক হিসেবে নিয়োগ দিয়ে জনবল সংকট সমাধান করার দাবি জানাচ্ছি।
৪. রেলওয়ের রাজস্ব আয় বৃদ্ধি ও রেলওয়ে পোষ্যদের কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে রেলওয়ের ভূমি লীজ প্রদান প্রক্রিয়া পুনর্গঠন করে অব্যবহৃত ভূমি রেলওয়ে পোষ্য সুপার মার্কেট, বনায়ন, মৎস্য, কৃষি ও গবাদিপশু পালন প্রকল্পের মাধ্যমে রেলওয়ে পোষ্যদের বেকারত্বের অভিশাপ হতে মুক্তির লক্ষ্যে বিভিন্ন ব্যবসায়ী সমিতি, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির ন্যয় বাংলাদেশ রেলওয়ে পোষ্য সোসাইটিকে ভূমি লীজ প্রদান ও রেলওয়ের ভূমিতে পিপিপির আওতায় যে সমস্ত প্রতিষ্ঠানকে ভূমি লীজ দেওয়া হচ্ছে, সে সকল প্রতিষ্ঠানে জনবল নিয়োগের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে রেলওয়ে পোষ্যদের নিয়োগের বিষয়টি চুক্তিপত্রে উল্লেখ করার দাবি জানাচ্ছি। দুর্নীতি
৫. অবসরপ্রাপ্ত ও মৃত্যুবরণকারী কর্মচারীদের ফাইনাল সেটেলমেন্ট এর কাজ সরকার নির্ধারিত দুই মাস সময়ের মধ্যে দ্রুত নিষ্পত্তি করণ ও কর্মরত অবস্থায় মৃত্যুবরণকারী শ্রমিক-কর্মচারীর পোষ্যদের যোগ্যতানুযায়ী দ্রুততার সহিত নিয়োগ সম্পন্নকরণ এবং যে সকল পোষ্যদের নিয়োগ দীর্ঘদিন থেকে অকারণে আটকে আছে, তাদের নিয়োগ সম্পন্ন এবং নিয়োগের ক্ষেত্রে আবেদনের বয়সসীমা ৩০ এর স্থলে ৩২ বছর করার দাবি জানাচ্ছি।
৬. নিয়োগ, ক্রয়, ঠিকাদারি কাজ ও প্রকল্প বাস্তবায়নে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিনিধিসহ সকল প্রকার দুর্নীতির বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত টিম কর্তৃক দ্রুততম সময়ে তদন্ত সাপেক্ষে সকল ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
৭. রেলওয়ে শ্রমিক-কর্মচারী ও পোষ্যদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতকল্পে রেলওয়ে হাসপাতাল সমূহে আধুনিক চিকিৎসার সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। রেলওয়ের শ্রমিক-কর্মচারীর সন্তানদের স্বল্প ব্যয়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের লক্ষ্যে রেলওয়ে পোষ্য সোসাইটির অধীনে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ন্যায় রেলওয়ে পোষ্য ইন্টারন্যাশনাল-স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়, টেকনিক্যাল ও মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠায় অব্যবহৃত রেল ভূমি লীজ দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।
৮. অবসরপ্রাপ্ত ও কর্মরত শ্রমিক-কর্মচারীদের আবাসনের জন্য ১০ শতাংশ করে পরিত্যক্ত রেল ভূমি লীজের মাধ্যমে স্থায়ী আবাসনের ব্যবস্থা করার দাবি জানাচ্ছি, এ ক্ষেত্রে ভারতীয় রেলওয়ের মডেল অনুসরণ করা যেতে পারে।
আইএসএইচ