জাতিসংঘ বলছে আরসা আছে, বাংলাদেশ বলছে নেই
কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির (আরসা) উপস্থিতি নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্য দিচ্ছে জাতিসংঘ ও বাংলাদেশ। জাতিসংঘ বলছে, রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহকে আরসার সদস্যরা হত্যা করেছে। অন্যদিকে বাংলাদেশ বলছে, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আরসার উপস্থিতিই নেই।
রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনে সাত দিনের সফরে বাংলাদেশে এসেছেন ‘জাতিসংঘের মিয়ানমারের মানবাধিকারবিষয়ক বিশেষ দূত’ টম এন্ড্রুস। রোববার বিকেলে রাজধানীর একটি হোটেলে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন তিনি। সেখানে তিনি বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আরসার উপস্থিতি আছে এবং মুহিবুল্লাহকে তারাই হত্যা করেছে।
বিজ্ঞাপন
এদিকে, বিকেলে রাজধানীর ফরেন একাডেমিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে মোমেন বলেন, ‘বাংলাদেশে আরসার কোনো উপস্থিতি এখনো পাওয়া যায়নি। কেউ যদি পায় এবং আমাদের তথ্য প্রমাণ দেয়, তবে আমরা সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেব।’
জাতিসংঘের মিয়ানমার মানবাধিকার বিষয়ক বিশেষ দূত সাংবাদিকদের বলেন, ‘সম্প্রতি ক্যাম্পের ভেতরে রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহকে হত্যা করা হয়েছে। আমি তার পরিবার ও রোহিঙ্গা প্রতিনিধিসহ অনেকের সঙ্গে আলাপ করেছি। যে স্থানে হত্যাকাণ্ড ঘটে, সে জায়গাও পরিদর্শন করেছি। আমার কাছে নির্ভরযোগ্য তথ্য প্রমাণ আছে যে, এ হত্যা আরসার সদস্যরা ঘটিয়েছেন।’
রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আরসার উপস্থিতি নিয়ে জাতিসংঘের কাছে কী প্রমাণ রয়েছে— জানতে চান সাংবাদিকরা। জবাবে টম এন্ড্রুস বলেন, ‘এ ঘটনার বিষয়ে তদন্ত হচ্ছে, তদন্ত শেষে একটি প্রতিবেদন পাওয়া যাবে। আমি অনেকের সঙ্গে কথা বলেছি, তারা এ বিষয়ে বলেছেন। সামনের দিনে আবারো এখানে আসব; এ বিষয়ে আরও কথা হবে।’
এসময় রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোর নিরাপত্তা নিয়ে নিজের উদ্বেগের কথা জানান জাতিসংঘের এই বিশেষ দূত। তিনি বলেন, ‘কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোর নিরাপত্তা নিয়ে আমি উদ্বিগ্ন। ক্যাম্পগুলো কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে ঘেরা হচ্ছে, যা উদ্বেগজনক। রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে চলাফেরার স্বাধীনতা দেওয়া উচিত।’
ফরেন একাডেমির সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন জানান, তিনিও রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোর নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন। এজন্য বাংলাদেশ সরকার ক্যাম্প ঘিরে কাঁটাতারের বেড়া দেওয়াসহ বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছে বলে জানান তিনি।
মোমেন বলেন, ‘তারা (জাতিসংঘ, বিশ্বব্যাংক বা এমন বৈশ্বিক সংস্থা) চায় রোহিঙ্গাদের চলাফেরার স্বাধীনতা দেওয়া হোক। বাংলাদেশি নাগরিকদের মতো রোহিঙ্গাদেরও অধিকার দেওয়া হোক, যাতে রোহিঙ্গারা এখানে চাকরি-ব্যবসাসহ বাংলাদেশি নাগরিকদের মতো থাকতে পারে। কিন্তু এটি সম্ভব নয়।’
প্রত্যাবাসনই একমাত্র সমাধান জানিয়ে মোমেন বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের তাদের দেশে ফেরত যেতে হবে। আমাদের অগ্রাধিকার হচ্ছে প্রত্যাবাসন। রোহিঙ্গাদের এখানে আমরা সাময়িক আশ্রয় দিয়েছি। তাদের নিজ দেশে ফেরত যেতে হবে।’
উল্লেখ্য, এ বছরের ২৯ সেপ্টেম্বর রাত সাড়ে ৮টার দিকে কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালংয়ের লম্বাশিয়ায় ক্যাম্পের ভেতরে দুর্বৃত্তদের গুলিতে নিহত হন রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহ। তিনি আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের চেয়ারম্যান ছিলেন।
এনআই/আরএইচ/জেএস