প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী ইমরান আহমদ বলেছেন, সরকার নিরাপদ, নিয়মতান্ত্রিক ও মর্যাদাপূর্ণ অভিবাসন নিশ্চিত করতে বদ্ধ পরিকর। নিয়ম বহির্ভূত ও অনৈতিক অভিবাসনে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে মানব পাচার আইনে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। গন্তব্য দেশের চাহিদার ভিত্তিতে বিদেশগামী কর্মীদের জন্য বুস্টার ডোজ দেওয়া হবে।

রাজধানীর তেজগাঁয়ে শুক্রবার (১৭ ডিসেম্বর) বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশনে (এফডিসি) ‘করোনার অভিঘাত উত্তরণে নিরাপদ অভিবাসন’ নিয়ে এক ছায়া সংসদে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমদ এসব কথা বলেন। 

মালয়েশিয়ায় শ্রমবাজার চালুর প্রেক্ষিতে মন্ত্রী বলেন, এবারে মালয়েশিয়ায় অভিবাসন ব্যয় যৌক্তিক পর্যায়ে থাকবে। কোনো অবস্থাতেই অতীতের মতো মালয়েশিয়া যেতে অভিবাসন ব্যয় ৪/৫ লাখ টাকা হতে দেওয়া হবে না। করোনার কারণে যেসব শ্রমিক দেশে ফিরে এসেছিলেন তারা ইতোমধ্যে আবার বিদেশে যাচ্ছেন। 

তিনি বলেন, প্রবাসী কর্মীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের ওপর যে ২ শতাংশ প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে তা সরকারের পক্ষ থেকে উপহার। তবে প্রবাসীদের ২ শতাংশ প্রণোদনা প্রদানের সুযোগে যাতে কালো টাকা দেশে প্রবেশ করতে না পারে সে বিষয়ে সরকার সতর্ক রয়েছে। 

বিদেশগামী কর্মীদের ন্যায্য বিমানভাড়া নিশ্চিতের লক্ষ্যেও আলোচনা অব্যাহত রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, করোনার এই প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও ঝুঁকি হ্রাস করে বিদেশে কর্মী প্রেরণ অব্যাহত রাখা হবে। আগামী বছরের জুনের মধ্যে ৯ লাখ শ্রমিককে বিদেশ পাঠাতে সরকার কাজ করছে।

অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি’র চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ। বিশেষ অতিথি ছিলেন প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. আহমেদ মুনিরুছ সালেহীন। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বোয়েসেলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জনাব মো. বিল্লাল হোসেন ও বিএমইটির মহাপরিচালক মো. শহীদুল আলম। ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির আয়োজনে ও মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের সহায়তায় অনুষ্ঠানটি তত্ত্বাবধান করেছে বাংলাদেশ ওভারসিজ এমপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড সার্ভিসেস লি. (বোয়েসেল)।

সভাপতির বক্তব্যে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, কৃষক, শ্রমিক, মজুর, সাধারণ মানুষের পাশাপাশি এ দেশের প্রধান নায়ক সারা পৃথিবীতে অবস্থানকারী অভিবাসী ভাই ও বোনেরা। অভিবাসী এইসব নায়করা নানা প্রতিকূল পরিবেশে অবস্থান করেও আমাদের দেশের জন্য রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছে। তাদের প্রেরিত আয়ের কারণে আমাদের রিজার্ভ বেড়েছে। আমরা বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারছি। 

তিনি বলেন, করোনার এই অভিঘাতের সময়ও অভিবাসী কর্মীরা দেশের অন্যান্য খাতের চাইতে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স প্রেরণ করেছে। তাই আমরা মনে করি, করোনার এই প্রতিকূলতা মোকাবিলায় অন্যান্য খাতের সাথে নিরাপদ অভিবাসন নিশ্চিত করতে পারলে বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করতে আর কোনো বাধা থাকবে না। নিরাপদ অভিবাসন নিশ্চিতে রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোকে আরও বেশি দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে। 

তবে সরকারকে খেয়াল রাখতে হবে যে দূতাবাসে সত্যায়ন, মন্ত্রণালয়ের নিয়োগানুমতি, বিএমইটির স্মার্টকার্ড ইত্যাদি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে বৈধভাবে কর্মী প্রেরণ করার পরেও যাতে মানব পাচার আইনে কোনো রিক্রুটিং এজেন্সিকে হয়রানি হতে না হয়। নিয়ম-কানুন মেনে কর্মী প্রেরণ করলে মানবপাচার আইনে মামলা হবে না মর্মে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর আশ্বাসের বাস্তবায়ন জরুরি, যোগ করেন কিরণ।
 
নিরাপদ অভিবাসন নিশ্চিত করতে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ ১০ দফা সুপারিশ প্রদান করেন - 

>> বিদেশ গমনেচ্ছু কর্মীদের করোনার দুই ডোজ টিকা প্রদানের পাশাপাশি তাদের জন্য বুস্টার ডোজ টিকা প্রদান নিশ্চিত করা।

>> বিমানের টিকেটের আকাশচুম্বী দাম সহনীয় পর্যায়ে আনার লক্ষ্যে দেশি-বিদেশি এয়ারলাইন্সগুলোর সঙ্গে উচ্চ পর্যায়ে বৈঠক করা। একইসাথে কর্মীদের জন্য লেবার ফেয়ার চালুর উদ্যোগ নেওয়া।

>> বৈধভাবে কর্মী প্রেরণ করার পরও রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো যাতে মানবপাচারের অভিযোগে হয়রানির শিকার না হয় তার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা। 

>> কর্মী প্রেরণে পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ জোরদার করে মালয়েশিয়া, ইরাক, লিবিয়া ও কুয়েতের মতো ট্র্যাডিশনাল শ্রমবাজারগুলোতে যত দ্রুত সম্ভব পুনরায় কর্মী প্রেরণের উদ্যোগ নেওয়া। 

>> করোনার কারণে যেসব অভিবাসী শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে, তাদের পরিবারের জন্য বিশেষ সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি গ্রহণ ও আগামী বাজেটে এ খাতে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা। 

>> প্রবাসে কারাবন্দি অভিবাসী শ্রমিকদের মুক্তির জন্য কূটনৈতিক তৎপরতা জোরদার করা। 

>> বেসরকারি রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর মাধ্যমে বিদেশে কর্মী প্রেরণে সরকার নির্ধারিত অভিবাসন ব্যয়ের চেয়ে বেশি নিলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা। 

>> অভিবাসী প্রত্যাশীদের দক্ষতা বৃদ্ধি করে আন্তর্জাতিক সনদায়নের মাধ্যমে লেবার রিসিভিং কান্ট্রির স্বীকৃতি প্রাপ্তির ব্যবস্থা করা।

>> করোনার মহামারির কারণে দেশে ফিরে আসা শ্রমিকদের জন্য যে প্রণোদনা ও যে ঋণ দেওয়া হয়েছে তার যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করা। 

>> বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশ মিশনগুলোকে আরও বেশি অভিবাসীবান্ধব করে গড়ে তোলা।
 
প্রতিযোগিতায় সরকারি দল স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটি ও বিরোধী দল কুমিল্লা ইউনিভার্সিটির বিতার্কিকরা উভয়ে সমান নম্বর পাওয়ায় উভয় দলকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। প্রতিযোগিতা শেষে অংশগ্রহণকারী দলের মাঝে ট্রফি, ক্রেস্ট, নগদ অর্থ ও সনদপত্র প্রদান করা হয়। প্রতিযোগিতায় বিচারক ছিলেন  ড. এস এম মোর্শেদ, সাংবাদিক মাসউদুল হক, সাংবাদিক প্রসূন আশীষ, সাংবাদিক কাবেরী মৈত্রেয় ও সাংবাদিক মিরাজ হোসেন গাজী। 

ওএফ