কেরানীগঞ্জের ঘাটারচর থেকে কাঁচপুর পর্যন্ত প্রায় ২১ কিলোমিটারের রুটে ২৬ ডিসেম্বর পরীক্ষামূলকভাবে ‘বাস রুট রেশনালাইজেশন’ কার্যক্রম চালু হওয়ার কথা রয়েছে। শুরুতে এ কার্যক্রমে যুক্ত হওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তা রক্ষা করেননি বাসমালিকরা। কিন্তু পরে তারা আবার আগ্রহ দেখিয়েছেন।

গত ২৮ নভেম্বর ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন পরিবহন মালিক সমিতির প্রতিনিধিসহ বাস রুট রেশনালাইজেশন কমিটির ১৯তম সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভা শেষে কমিটির সদস্য ও ডিএনসিসি মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, গত মিটিংয়ে মালিকরা আমাদের ১২০টি বাস দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু তারা কথা রাখতে পারেননি।

তিনি বলেন, মালিকরা কথা না রাখায় আমরা বিআরটিসির ৩০টি দ্বিতল বাসের মাধ্যমে এ রুটে কার্যক্রম শুরু করছি। তবে যারা প্রাইভেট বাস আমাদের এই রুটে চালাতে চান, তাদের সুযোগ রয়েছে। যারা আমাদের শর্ত মেনে এ রুটে বাস পরিচালনা করতে চান, তাদের প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ ১২ ডিসেম্বরের মধ্যে আমাদের জানাতে হবে।

মেয়রের এ আলটিমেটামের পর বাস রুট রেশনালাইজেশন কার্যক্রমে ঘাটারচর থেকে মতিঝিল হয়ে কাঁচপুর পর্যন্ত প্রথম পরীক্ষামূলক রুটে আট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান ১৫৭টি বাস পরিচালনায় আগ্রহ দেখিয়েছে। জানা গেছে, পরীক্ষামূলক এই রুটে ট্রান্স সিলভা ৩৮টি, ইকবাল এন্টারপ্রাইজ দুটি, এমএল লাভলি পরিবহন চারটি, রজনীগন্ধা পরিবহন এক১টি, মোস্তফা হেলাল কবির ছয়টি, মোহাম্মদ ওলিউল্লাহ একটি, জাহান এন্টারপ্রাইজ ১০০টি এবং এইচ আর ট্রান্সপোর্ট এজেন্সি পাঁচটি বাস পরিচালনার আগ্রহ দেখিয়েছে।

প্রতীকী বাসের ছবি

জানা গেছে, পরীক্ষামূলকভাবে বিআরটিসির ৩০টি দ্বিতল বাস নিয়ে এই সেবা চালু করা হলেও পরে এ রুটে ১০০টি বাস চলবে। মূলত বাস মালিকরা প্রথমে সম্মতি জানালেও পরবর্তী সময়ে তাদের অসহযোগিতার কারণেই বিআরটিসি বাসের মাধ্যমে এ রুট চালুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

রাজধানীর গণপরিবহনে শৃঙ্খলা আনতে চলতি বছরের ১ এপ্রিল থেকে রুটভিত্তিক কোম্পানির অধীনে পরীক্ষামূলক বাস চলাচল শুরুর কথা ছিল। পরে সেটি পিছিয়ে সেপ্টেম্বরের ৭ তারিখ নির্ধারণ করা হয়। এরপরও রুটভিত্তিক কোম্পানির অধীনে পরীক্ষামূলক বাস চলাচল শুরু করতে পারেনি সংশ্লিষ্ট কমিটি।

‘বাস রুট রেশনালাইজেশন’ কমিটির ১৮তম সভা শেষে ১ ডিসেম্বর নতুন তারিখ নির্ধারণ হয়। সবশেষ ১৯তম সভার পর আগের সিদ্ধান্ত আবারও পরিবর্তন করে ২৬ ডিসেম্বর থেকে কার্যক্রম শুরুর কথা জানিয়েছে কমিটি। সড়কে শৃঙ্খলা ফেরানোর পাশাপাশি রাজধানীর গণপরিবহনের অসুস্থ প্রতিযোগিতা দূর করতেই এ কমিটি গঠন করা হয়। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী চক্রাকার বাস নামানো, নতুন রুট নির্ধারণ, বাস রুট ফ্রেঞ্চাইজিং, আন্তঃজেলা বাস টার্মিনালের স্থান নির্ধারণসহ বেশ কিছু উদ্যোগ নেয় কমিটি।

জানা গেছে,  রুট রেশনালাইজেশন কোম্পানির মাধ্যমে বাস পরিচালনায় খুব একটা সম্মতি ছিল না মালিকদের। এর কারণ হিসেবে তাদের যুক্তি ছিল, এ কার্যক্রমে বাস দিয়ে কতটা সফলতা আসবে তা নিয়ে শঙ্কা রয়েছে।

১৯তম সভা শেষে এক প্রশ্নের জবাবে বাস রুট রেশনালাইজেশন কমিটির সভাপতি ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর বলেন, বাস মালিকদের অসহযোগিতা ও নানা বাধা-বিপত্তি আছে তবে আমরা তা অতিক্রম করেই বাস রুট রেশনালাইজেশন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করব।

বাস রুট রেশনালাইজেশন কমিটির ১৯তম সভা 

তিনি বলেন, ১ ডিসেম্বর ঘাটারচর থেকে কাঁচপুর রুটে পাইলট প্রকল্পের অংশ হিসেবে বাস রুট রেশনালাইজেশনের মাধ্যমে বাস চালানোর ঘোষণা থাকলেও তা ফলপ্রসূ করা যায়নি। গণপরিবহনে দীর্ঘদিনের পুঞ্জিভূত যে বিশৃঙ্খলা, তাতে অনেক অংশীজন রয়েছে। সবাইকে শৃঙ্খলায় আনা দুরূহ। তারপরও আমরা অত্যন্ত দৃঢ়তার সঙ্গে এ কার্যক্রম হাতে নিয়েছি।

সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্লাহ বলেন, আমরা এ বিষয়ে প্রথম থেকেই সহযোগিতা করে আসছি। তবে এখানে সমস্যা যেটা হয়েছে, কাঁচপুর থেকে ঘাটারচর যে পাইলটিং রুট চালু হওয়ার কথা ছিল, সেখানে গাড়ির মালিকদের সঙ্গে  আমরা বারবার কথা বলেছি।  আমরা অগ্রগতির দিকেও গিয়েছি।

তিনি বলেন, কমিটির আগের মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত ছিল যে, ৪২০টি গাড়ি রোড পারমিটের জন্য আবেদন করেছে, স্লিপ নিয়েছে। তাদের ছাড়া আর কাউকে অনুমোদন দেওয়া হবে না। সে বিষয়ে আমরা ওয়াকিবহাল ছিলাম না, আমরা জানতাম না। এটি নিয়ে কিছুটা ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। আমাদের সহযোগিতা ছিল, আগামীতেও থাকবে। 

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রয়াত মেয়র আনিসুল হক রুটভিত্তিক কোম্পানির অধীনে বাস চালানোর উদ্যোগ নিয়েছিলেন ২০১৫ সালে। পরে ২০১৭ সালের ৩০ নভেম্বর আনিসুল হক মারা যাওয়ার পর এই ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব পান ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের তৎকালীন মেয়র মোহম্মাদ সাঈদ খোকন। সে সময় থেকে তিনি এ বিষয়ক কমিটির ১১টি সভা করেছেন। এরপর নতুন মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস এর দায়িত্ব পান। তিনি এ পর্যন্ত সভা করেছেন ছয়টি।

রেশনালাইজেশন অনুযায়ী ঘাটারচর থেকে কাঁচপুর রুটে পুরনো কোনো বাস চলবে না। এ রুটের কিলোমিটারপ্রতি ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছিল দুই টাকা ২০ পয়সা। সবমিলিয়ে বাস রুট রেশনালাইজেশনের আওতায় ১২০টি নতুন বাস চলাচলের কথা রয়েছে।

এএসএস/আরএইচ