মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে আজ বৃহস্পতিবার (১৬ ডিসেম্বর) ভোর সাড়ে ৬টায় রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন।

রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ প্রথমে স্মৃতিসৌধের বেদীতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। এরপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করেন। এ সময় রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদদের স্মরণে কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন। সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর একটি সুসজ্জিত দল তখন রাষ্ট্রীয় সালাম জানায়। এ সময় বিউগলে করুণ সুর বাজানো হয়।

রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণের সময় উপস্থিত ছিলেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ রেহানা, জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, ৯ পদাতিক ডিভিশন-এর জিওসি, ঢাকা বিভাগের বিভাগীয় কমিশনার এবং ঢাকা জেলার জেলা প্রশাসক।

এরপর শ্রদ্ধা জানান জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী ও প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন।

এরপর আওয়ামী লীগের পক্ষে বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন দলের সভানেত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। এ সময় আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী, আবদুর রাজ্জাক, জাহাঙ্গীর কবির নানক, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদসহ দলের শীর্ষ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

তাদের শ্রদ্ধা নিবেদনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় স্মৃতিসৌধে ফুল দেওয়ার আনুষ্ঠানিকতা। এরপর মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রীর নেতৃত্বে উপস্থিত বীরশ্রেষ্ঠ পরিবার, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও বীর মুক্তিযোদ্ধাগণ পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। 

উল্লেখ্য, গত বছর স্বাধীনতা দিবস ও বিজয় দিবসে বৈশ্বিক মহামারি করোনা থাকায় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানাতে আসতে পারেননি রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীসহ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা।

রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর বাণী

বিজয় দিবস উপলক্ষে পৃথক বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। লাখো শহীদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতার সুফল জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে হবে বলে উল্লেখ করেন রাষ্ট্রপতি। তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে পরমতসহিষ্ণুতা ও পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধের সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হবে।’

মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্য ও চেতনা বাস্তবায়নে নিজ নিজ অবস্থান থেকে আরও বেশি অবদান রাখতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান রাষ্ট্রপ্রধান। মহান বিজয় দিবসে দেশ ও জাতিকে উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের ‘সোনার বাংলা’ গড়ে তোলার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন আবদুল হামিদ।

অন্যদিকে, বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠাকে বাঙালির শ্রেষ্ঠতম অর্জন হিসেবে আখ্যা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘এই অর্জনকে অর্থবহ করতে স্বাধীনতার মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ও মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে সবাইকে জানতে ও জানাতে হবে। প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আমরা পৌঁছে দেব— বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তীর এ মাহেন্দ্রক্ষণে এই হোক আমাদের অঙ্গীকার।

শেখ হাসিনা বলেন, ১৬ ডিসেম্বর, মহান বিজয় দিবস। বাংলাদেশের বিজয়ের ৫০ বছর পূর্তি হলো। আজ বাঙালি জাতির এক অনন্য গৌরবোজ্জ্বল দিন। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহ্বানে সাড়া দিয়ে দীর্ঘ ২৩ বছরের রাজনৈতিক সংগ্রাম ও ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে ১৯৭১ সালের এই দিনে চূড়ান্ত বিজয় অর্জন করে বাঙালি।

তিনি বলেন, বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে আমি দেশবাসীকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাই। আমি গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। স্মরণ করছি জাতীয় চার নেতা, ত্রিশ লাখ শহীদ, সম্ভ্রমহারা দুই লাখ মা-বোন এবং জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধাদের, যাদের মহান আত্মত্যাগের বিনিময়ে আমরা পেয়েছি স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ। কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি সেইসব দেশ ও ব্যক্তিদের প্রতি যারা আমাদের মুক্তিযুদ্ধে নানাভাবে সহায়তা দিয়েছেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী 'মুজিববর্ষ' এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে বিভিন্ন বর্ণাঢ্য কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। করোনাভাইরাস মহামারি পরিস্থিতিতে জনসমাগম এড়িয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে এসব অনুষ্ঠান উদযাপন করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের বলিষ্ঠ নেতৃত্বে বাঙালি জাতি ১৯৪৮-৫২-এর ভাষা আন্দোলন, '৬২'র শিক্ষা আন্দোলন, '৬৬'র ছয়-দফা, '৬৯'র এগার-দফা ও গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে স্বাধীনতার জন্য প্রস্তুত হয়ে উঠে। '৭০-এর সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ পাকিস্তানে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। কিন্তু পাকিস্তানিরা বাঙালি জাতিকে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হতে দেয়নি। 

সরকার প্রধান বলেন, জাতির পিতা অনুধাবন করেন, স্বাধীনতা অর্জন ছাড়া বাঙালি জাতির ওপর অত্যাচার, নির্যাতন ও বঞ্চনার অবসান হবে না। তাই তিনি ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানের জনসমুদ্রে দাঁড়িয়ে দৃপ্তকণ্ঠে ঘোষণা করেন, 'এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম'। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের ডাকে শুরু হয় অসহযোগ আন্দোলন। চলতে থাকে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী '৭১-এর ২৫ মার্চ কালরাতে নিরীহ ও নিরস্ত্র বাঙালির ওপর হত্যাযজ্ঞ শুরু করে। ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। শুরু হয় সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ।

তিনি বলেন, ১৭ এপ্রিল মুজিবনগরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে রাষ্ট্রপতি, সৈয়দ নজরুল ইসলামকে উপ-রাষ্ট্রপতি এবং তাজউদ্দিন আহমদকে প্রধানমন্ত্রী করে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের প্রথম সরকার শপথ গ্রহণ করে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করে। বীর মুক্তিযোদ্ধারা ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে পাকিস্তানি হানাদার এবং তাদের দোসর রাজাকার-আলবদর-আলশামস বাহিনীকে পরাজিত করে ১৬ ডিসেম্বর চূড়ান্ত বিজয় অর্জন করেন। আমরা পাই লাল-সবুজের পতাকা।

শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা মাত্র সাড়ে ৩ বছরে যুদ্ধ-বিধ্বস্ত দেশকে পুনর্গঠন করেন। ধ্বংস-প্রাপ্ত রাস্তাঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট, রেললাইন, পোর্ট সচল করে অর্থনীতিতে গতি সঞ্চার করেন। মাত্র ১০ মাসে তার নির্দেশনায় মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ভিত্তিতে আমাদের সংবিধান প্রণীত হয়। ১৯৭৫ সালে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ৯ শতাংশ অতিক্রম করে। যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশকে বঙ্গবন্ধু 'স্বল্পোন্নত' দেশের কাতারে নিয়ে যান।

তিনি বলেন, সব প্রতিবন্ধকতা মোকাবিলা করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব যখন একটি শোষণ-বঞ্চনামুক্ত অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক সোনার বাংলা গড়ার লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছিলেন, ঠিক তখনই স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তি ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের কালরাতে তাকে পরিবারের বেশির ভাগ সদস্যসহ নির্মমভাবে হত্যা করে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে হত্যার পর থেমে যায় বাংলাদেশের উন্নয়ন-অগ্রযাত্রা। শুরু হয় হত্যা, ক্যু আর ষড়যন্ত্রের রাজনীতি। ঘাতক এবং তাদের দোসররা ইতিহাসের এই জঘন্যতম হত্যাকাণ্ডের বিচারের পথ রুদ্ধ করতে জারি করে 'ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ'।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, দীর্ঘ ২১ পর বছর বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ১৯৯৬ সালে জনগণের ভোটে জয়ী হয়ে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পায়। আমরা দায়িত্ব নিয়েই বাংলাদেশকে একটি মর্যাদাশীল দেশ হিসেবে বিশ্বের বুকে প্রতিষ্ঠিত করার উদ্যোগ নেই। সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি প্রবর্তনের মাধ্যমে গরিব, প্রান্তিক মানুষদের সরকারি ভাতার আওতায় আনা হয়। কৃষি উৎপাদনের ওপর বিশেষ জোর দিয়ে দেশকে খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ করি। পানির হিস্যা আদায়ে ১৯৯৬ সালে ভারতের সঙ্গে গঙ্গা পানি বণ্টন চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। পার্বত্য চট্টগ্রামে শাস্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ১৯৯৭ সালে ঐতিহাসিক শান্তি চুক্তি সম্পাদন করি। 'ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ’ বাতিল করে আমরা বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের বিচার কার্যক্রম শুরু করি।

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ২০০৯ সাল থেকে ধারাবাহিকভাবে সরকার গঠন করে গত ১৩ বছর ধরে মানুষের ভাগ্যোন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। আমরা আজ জাতির পিতার অসমাপ্ত কাজগুলো বাস্তবায়ন করছি। খাদ্য উৎপাদনে বাংলাদেশ আজ স্বয়ংসম্পূর্ণ। আমরা এখন পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিতে কাজ করছি। মিয়ানমার ও ভারতের সঙ্গে সমুদ্রসীমা বিরোধের শান্তিপূর্ণ নিষ্পত্তির মাধ্যমে বঙ্গোপসাগরে বিশাল এলাকার ওপর আমাদের সার্বভৌম অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বাংলাদেশ-ভারত স্থল সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়নের মাধ্যমে ছিটমহলবাসীর দীর্ঘদিনের মানবেতর জীবনের অবসান হয়েছে। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের বিচারের রায় কার্যকরের মধ্য দিয়ে জাতি গ্লানিমুক্ত হয়েছে। জাতীয় চার নেতা হত্যাকাণ্ডের বিচার কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয়েছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার অব্যাহত রয়েছে এবং বিচারের রায় কার্যকর করা হচ্ছে।

সরকার প্রধান বলেন, আমরা ২০২১-২০৪১ মেয়াদি দ্বিতীয় প্রেক্ষিত পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছি এবং ৮ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছি। আমরাই বিশ্বে প্রথম শত বছরের ‘ব-দ্বীপ পরিকল্পনা ২১০০’ বাস্তবায়ন শুরু করেছি। বাংলাদেশের উন্নয়ন অভিযাত্রায় ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ এর সুবিধা আজ শহর থেকে প্রান্তিক গ্রাম পর্যায়ে বিস্তৃত হয়েছে। প্রতিটি গ্রামে শহরের নাগরিক সুযোগ-সুবিধা পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। দেশের গৃহহীন-ভূমিহীনের জন্য ঘর তৈরি করে হচ্ছে। বাংলাদেশের একটি মানুষও আর গৃহহীন থাকবে না।

তিনি বলেন, করোনাভাইরাস মহামারিতে অর্থনীতির চাকাকে সচল রাখতে আমরা ১ লাখ ৩১ হাজার ৬৪১ কোটি টাকার ২৮টি প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছি। ৯৯.৭৫ শতাংশ মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে। মাথাপিছু আয় ২০০৫-০৬ সালের ৫৪৩ মার্কিন ডলার থেকে বৃদ্ধি পেয়ে বর্তমানে ২৫৫৪ মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে। আমরা দেশের প্রতিটি খাতে অভাবনীয় অগ্রগতি অর্জন করেছি। কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, যোগাযোগ, তথ্য-প্রযুক্তি, শিল্প ব্যবসা-বাণিজ্যসহ আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের প্রতিটি ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এখন বিশ্বের বুকে ‘রোল মডেল’। বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে মর্যাদাশীল ‘উন্নয়নশীল’ দেশে উন্নীত হওয়ার জাতিসংঘের চূড়ান্ত অনুমোদন লাভ করেছে।

শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বাংলাদেশকে ‘স্বল্পোন্নত’ দেশে উন্নীত করেন, আর আমরা মাতৃভূমিকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে নিয়ে গেলাম ‘মুজিববর্ষ’ এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর এ শুভক্ষণে। স্বাধীনতার পর বিগত ৫০ বছরে আমাদের যা কিছু অর্জন তা জাতির পিতা এবং আওয়ামী লীগের হাত ধরেই হয়েছে। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, আমাদের এই উন্নয়নের গতিধারা অব্যাহত থাকলে বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশ ২০৪১ সালের মধ্যেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত ও উন্নত-সমৃদ্ধ স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশে পরিণত হবে, ইনশাআল্লাহ।

তিনি বলেন, ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের মাধ্যমে জাতিরাষ্ট্র ‘বাংলাদেশ’ প্রতিষ্ঠা হলো বাঙালি জাতির শ্রেষ্ঠতম অর্জন। এই অর্জনকে অর্থবহ করতে স্বাধীনতার মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব এবং মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে সবাইকে জানতে ও জানাতে হবে। প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আমরা পৌঁছে দেবে- বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তীর এ মাহেন্দ্রক্ষণে এই হোক আমাদের অঙ্গীকার।

বিজয় দিবসের কর্মসূচি

১৬ ডিসেম্বর সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে মহান মুক্তিযুদ্ধের সব শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। করোনাভাইরাস মহামারির কারণে জাতীয় স্মৃতিসৌধে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা নিবেদনের সময় শুধু মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী, গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব, ৯ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি, ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার এবং ঢাকার জেলা প্রশাসক অভ্যর্থনা ও বিদায় জানানোর জন্য উপস্থিত ছিলেন।

পরে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রীর নেতৃত্বে উপস্থিত বীরশ্রেষ্ঠ পরিবার, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও বীর মুক্তিযোদ্ধারা শ্রদ্ধা জানান। তারপর স্মৃতিসৌধ খুলে দেওয়া হয় সব শ্রেণি ও পেশার মানুষের জন্য।

এদিন সকাল ৮টায় ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানাবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
করোনার কারণে গেল বছর না হলেও, এবার বর্ণাঢ্য পরিসরে অনুষ্ঠিত হবে বিজয় দিবসের কুচকাওয়াজ। প্রধান অতিথি থাকবেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। বিজয় দিবসের কুচকাওয়াজ দেখতে যাবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তীতে যোগ দিতে ঢাকা সফরে আসা ভারতের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দও কুচকাওয়াজে গেস্ট অব অনার হিসেবে যোগ দেবেন। 

মহান বিজয় দিবস ও পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আত্মসমর্পণ দিবস উপলক্ষে গণভবনে ডাকটিকিট অবমুক্ত করবেন সরকার প্রধান। একইসঙ্গে দুপুরে বাংলাদেশ পর্যটন ব্র্যান্ড নেম “মুজিব’স বাংলাদেশ” লোগো উন্মোচন করবেন প্রধানমন্ত্রী।

বিকেল সাড়ে ৪টায় জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজা থেকে বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তী ও মুজিববর্ষের শপথ পরিচালনা করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিকাল সাড়ে ৫টায় জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় অনুষ্ঠিত হবে বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তী ও মুজিববর্ষের অনুষ্ঠান।

ওএফ