প্রণবের সঙ্গে খালেদার সাক্ষাৎ না পাওয়ার কথা স্মরণ শ্রিংলার
আট বছর আগে ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির (প্রয়াত) সঙ্গে বিরোধী দলের নেতা বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সাক্ষাৎ না পাওয়ার বিষয়টি স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন দেশটির পররাষ্ট্র সচিব হর্ষবর্ধন শ্রিংলা।
বুধবার (১৫ ডিসেম্বর) ঢাকা সফররত ভারতের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের সফর নিয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে এ প্রসঙ্গে টানেন হর্ষবর্ধন শ্রিংলা।
বিজ্ঞাপন
মূলত, সাংবাদিকরা ভারতের পররাষ্ট্র সচিবের কাছে জানতে চান কোবিন্দের ঢাকা সফরে বিরোধী দলের নেতার সঙ্গে কোনো সাক্ষাৎ থাকছে কিনা- জবাবে শ্রিংলা বলেন, ‘উচ্চ পর্যায়ের সফরের সময় ঐতিহ্যগতভাবে বিরোধী দলের সঙ্গে সাক্ষাত হয়। ২০১৩ সালে ভারতের প্রেসিডেন্টের ঢাকা সফরকালে বিরোধী দলের নেতাকে বৈঠকের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। কিন্তু বাস্তবতা হলো, সেই বৈঠকটি কোনো কারণে অনুষ্ঠিত হয়নি।’
ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ‘এবারের রাষ্ট্রপতির সফর কিছুটা ভিন্ন। একটি তাৎপর্যপূর্ণ ও বিশেষ অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির আমন্ত্রণে তিনি এখানে এসেছেন। এটা দ্বিপাক্ষিক কোনো সফর নয়। সাধারণত কোনো দ্বিপাক্ষিক সফরে গণতান্ত্রিক রীতি অনুযায়ী বিরোধীদলীয় নেতাদের সঙ্গে আমরা বৈঠক করে থাকি। আমি মনে করি, এবার তেমন পর্যাপ্ত সময় নেই। যে ধরনের বৈঠকের কথা বলছেন, তার সম্ভাবনা আমরা দেখছি না।’
২০১৩ সালের মার্চে ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি ঢাকা সফরে এলে বিরোধী দলের নেতা খালেদা জিয়াকে বৈঠকের আমন্ত্রণ জানোনো হয়। কিন্তু তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেননি খালেদা জিয়া। দুই বছর পর ২০১৫ সালে ভারতের দ্য সানডে গার্ডিয়ান পত্রিকাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে খালেদা জিয়া প্রণবের সঙ্গে সাক্ষাত না করার কারণ হিসেবে বলেছিলেন, ‘১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময়কার অপরাধে তিন শীর্ষ নেতাকে সাজা দেওয়ায় জামায়াতে ইসলামী তখন ধর্মঘট ডেকেছিল। তখন আমি প্রণব মুখার্জির সঙ্গে সাক্ষাৎটি বাতিল করেছিলাম এ জন্য যে আমাদের কাছে তথ্য ছিল, তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গেলে আমার ওপর হামলা হবে। সেটা আমার জীবনের জন্য হুমকিও হতে পারে।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ভারতের রাষ্ট্রপতির সাক্ষাতে উঠে আসে দুর্গাপূজা এবং তার পরবর্তীতে হওয়া সাম্প্রদায়িক হামলার ইস্যুটি। এ প্রসঙ্গে ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বলেন, ‘সরকার দ্রুত সময়ের মধ্যে পদক্ষেপ নিয়েছে। বর্তমান সরকারের এই পদক্ষেপ অনেক দিক থেকেই সন্তোষজনক মনে হয়েছে। আমরা বিশ্বাস করি, বাংলাদেশের নিজের স্বার্থেই এসব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে দুই দেশের স্বার্থের জন্য এই পদক্ষেপ গুরুত্বপূর্ণ ছিল। যদিও সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার বিষয়টি বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়।’
শ্রিংলা বলেন, ‘উভয় দেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ প্রায় সব বিষয়ই আলোচনায় এসেছে। তবে কিছু গোপনীয়তার কারণে সব বিষয়ে বলতে পারছি না। অবশ্যই আলোচনায় এমন সব বিষয় অন্তর্ভুক্ত ছিল যা আমাদের উভয় দেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এবং আমাদের উভয় দেশের অবস্থানের সঙ্গে যায়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আমরা একই ধরনের অবস্থানে আছি। আমরা মনে করি, কিছু বিষয় বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় হলেও উভয় দেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।’
এ সময় বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্কের ব্যাখায় ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বলেন, বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক এমন বন্ধনে আবদ্ধ যে, এর সঙ্গে অন্য কোনো দেশের সম্পর্কের তুলনা চলে না।
শ্রিংলা বলেন, ‘গত ৫০ বছর আমরা যে সম্পর্ক লালন করছি সেই সম্পর্ককে ছড়িয়ে দেওয়া দরকার। নতুন প্রজন্মের কথা মাথায় রেখে সম্পর্ক এগিয়ে নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে বাণিজ্যসহ জ্বালানি, তথ্যপ্রযুক্তি, জলবায়ু পরিবর্তন কানেক্টিভিটির ওপর জোর দিতে হবে।’
সীমান্ত প্রসঙ্গে শ্রিংলা বলেন, ‘সীমান্তের নানা সমস্যা নিয়ে আগামী ১৮ ও ১৯ ডিসেম্বর বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড (বিজিবি) এবং ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) মহাপরিচালক পর্যায়ে বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।’
র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) এবং বাহিনীটির সাবেক ও বর্তমান সাত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে ভারতের মন্তব্য জানতে চাইলে দেশটির পররাষ্ট্রসচিব বলেন, ‘তৃতীয় পক্ষের এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করা সমীচীন হবে না।’
সংবাদ সম্মেলনে ঢাকায় নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার বিক্রমকুমার দোরাইস্বামী ও অন্যান্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
এনআই/ওএফ