চার বোনের মধ্যে ইলমা চৌধুরী (২৫) ছিলেন বড়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) নৃত্যকলা বিভাগের ২০১৫-১৬ সেশনের শিক্ষার্থী ছিলেন তিনি। লেখাপড়া শেষ করার আগেই বিয়ে হয় কানাডা প্রবাসী ইফতেখার আবেদীনের সঙ্গে। ইচ্ছে ছিল মাস্টার্স শেষ করে শিক্ষকতা পেশায় যুক্ত হওয়ার। কিন্তু সেই আশা অপূর্ণই থেকে গেলো ইলমার।

অভিযোগ রয়েছে, স্বামী ও শ্বশুর বাড়ির লোকজনের নির্যাতনে মৃত্যু হয়েছে তার। এ ঘটনায় মঙ্গলবারই আটক করা হয় ইলমার স্বামী ইফতেখার আবেদীনকে। আটকের পরপরই তাকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে পুলিশ। তবে সন্ধ্যা পর্যন্ত বারবার একই কথা বলছিলেন ইফতেখার। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি দাবি করেন, ‘ইলমা আবেগী ছিল, সে আত্মহত্যা করেছে।’

নিহতের ছোট চাচা গোলাম মোস্তফা চৌধুরী ঢাকা পোস্টকে বলেন, লেখাপড়া শেষ করে আমার ভাতিজি শিক্ষক হতে চেয়েছিল। কিন্তু তার স্বামীর নির্যাতনে গতকাল তার করুণ মৃত্যু হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, ইলমার সঙ্গে ইফতেখারের ফেসবুকে পরিচয় হয়। এরপর পারিবারিকভাবে চলতি বছরের ২ এপ্রিল তাদের বিয়ে হয়। বিয়ের ৩-৪ মাস পর সে কানাডায় চলে যায়। সেখান থেকে তাকে পড়ালেখা বন্ধ করে দিতে বলে। সে সবসময় তাকে (ইলমা) সন্দেহ করত। সবসময় ভিডিও কলে কথা বলতে হতো। কোনো বন্ধুর সঙ্গে যোগাযোগ করতে দিত না। কানাডা থেকে তাকে হুমকি দিত এখান থেকে তো তোকে কিছু করতে পারব না দেশে আসি তারপর  দেখছি। এমনকি পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দিতে বলে ইলমাকে।

গোলাম মোস্তফা আরও বলেন, সে দেশে এসেছে আমরা জানি না। এসে সে আমার ভাতিজিকে অত্যাচার করে হত্যা করেছে। আপনারা দেখেছেন তার শরীরে সব জায়গায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। বিয়ের প্রায় ৯ মাসের মাথায় আমার ভাতিজিকে হত্যা করা হলো। অনেক নির্যাতন করে আমার ভাতিজিকে হত্যা করেছে। আমি তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে নিহত ইলমার বাবা সাইফুল ইসলাম চৌধুরী ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমার মেয়েকে তারা নির্যাতন করে হত্যা করেছে। তার শরীরের সব জায়গায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। তার মা ও কথিত বাবা সবাই মিলে আমার মেয়েকে মেরে ফেলেছে।

তিনি আরও বলেন, আমার মেয়ে লেখাপড়ায় অনেক ভালো ছিল। ইলমা আমাকে বলেছিল বিসিএস দিয়ে শিক্ষক হবে। হঠাৎ তার সঙ্গে ইফতেখারের পরিচয় হয় ফেসবুকে। আমরা প্রথমে রাজি ছিলাম না পরে অনেক চাপাচাপির পর রাজি হই। সে নৃত্যকলায় পড়ত তার স্বামী ভাবত তার চলাফেরা অনেক খারাপ। সে তার চুল কেটে ছোট করে হিজাব পরা শুরু করে। বিয়ের দিন থেকে ইফতেখার আমার মেয়েকে নির্যাতন করত। অত্যাচার থেকে বাঁচতে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয় ইলমা। আমরা জানতাম ইফতাখারের বাবা একজন অবসরপ্রাপ্ত সেনা অফিসার। পরে জানি এটা তার আসল বাবা নয়। তার মা এ সেনা অফিসারকে ২য় বিয়ে করেছেন। আমাদের কাছে তারা সব কিছু লুকিয়েছে। সে ফ্রান্সে একটি বিয়ে করেছিল। সেই ঘরে একটা সন্তান আছে। পরে তাকে ডিভোর্স দিয়ে আমার মেয়েকে বিয়ে করেছে। এটা জানতে পেরেছি বিয়ের পর। তারা এক ভণ্ড পীরের মুরিদ হওয়ায় আমার মেয়েকে সবসময় আটকে রাখত। বাইরে বের হতে দিত না।

সাইফুল আরও বলেন, ১১ ডিসেম্বর ইফতেখার দেশে এসেছে সেটা আমরা জানতাম না। তার (ইলমার) মোবাইলে সবসময় চেক করত আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করত কি না। আমার মেয়ে আমাকে বলেছে সব ঠিক হয়ে যাবে বাবা।কিন্তু কোথায় ঠিক হলো শেষ পর্যন্ত তারা আমার মেয়েকে নির্যাতন করে মেরেই ফেলল। তারা অনেক শক্তিশালী। আমরা তাদের সঙ্গে পারব কি না জানি না। আপনাদের মাধ্যমে বলতে চাই আমার মেয়েকে যারা নির্যাতন করে হত্যা করেছে তাদের উপযুক্ত শাস্তি চাই। 

এদিকে ইলমাকে হত্যার অভিযোগে বাবা সাইফুল ইসলাম চৌধুরী বনানী থানায় মামলা (মামলা নং-২৩) দায়ের করেছেন। মামলায় নিহতের স্বামী ইফতেখার আবেদীন, মা শিশিন আমিন ও পালক পিতা মো. আমিনকে আসামি করা হয়েছে।  

এসএএ/এসকেডি