আর্ট পেপারের নামে চীন থেকে আনা হলো সিগারেটের জাল স্ট্যাম্প
চীন থেকে আর্ট পেপারের ভেতরে লুকিয়ে মিথ্যা ঘোষণায় আনা ৩ কোটি ১৯ লাখ ৮০ হাজার পিস সিগারেটের জাল স্ট্যাম্প জব্দ করেছে চট্টগ্রাম কাস্টমস। এতে ৯০ থেকে ১৪৩ কোটি টাকা শুল্ক ফাঁকি দেওয়ার চেষ্টা করেছিল চট্টগ্রামের একটি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান।
মঙ্গলবার (১৪ ডিসেম্বর) বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের অডিট ইনভেস্টিগেশন অ্যান্ড রিসার্চ (এআইআর) শাখার ডেপুটি কমিশনার শরফুদ্দীন মিয়া।
বিজ্ঞাপন
কাস্টমস সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রামের আন্দরকিল্লার আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান বাপ্পু এন্টারপ্রাইজ চীন থেকে আর্ট পেপার ঘোষণায় এক কন্টেইনার পণ্য আমদানি করে। পণ্যচালানটি খালাসের লক্ষ্যে সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট মধুমতি অ্যাসোসিয়েটস লিমিটেড চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে বিল অব এন্ট্রি দাখিল করে।
চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের পোর্ট কন্ট্রোল ইউনিট (পিসিইউ) ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার আওতায় রফতানিকারক, রফতানিকারকের ওয়েবসাইট, তৈরি দেশ, আমদানিকারকের ব্যবসায়ের ধরন ও ঠিকানা, পণ্যের বর্ণনা প্রভৃতি বিশ্লেষণ করে পণ্যচালানটিতে মিথ্যা ঘোষণায় সিগারেটের প্যাকেটে ব্যবহারযোগ্য জাল স্ট্যাম্প থাকার বিষয়ে প্রাথমিক ধারণা লাভ করে। পরবর্তীতে এআইর টিম অ্যাসাইকুডা ওয়ার্ল্ড সিস্টেমে পণ্যচালানের বিল অব এন্ট্রি লক করা হয়।
ডেপুটি কমিশনার শরফুদ্দীন মিয়া বলেন, পণ্যচালান আনা কন্টেইনার নামিয়ে বন্দরের অভ্যন্তরে নিয়ম অনুযায়ী পণ্য পরীক্ষা শুরু করে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের এআইআর টিম। কন্টেইনারের ২০টি প্যালেটের মধ্যে দৈবচয়নের ভিত্তিতে ৫টি প্যালেট দেখানোর পর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট গড়িমসি শুরু করে এবং এক পর্যায়ে কায়িক পরীক্ষা সমাপ্ত করার জন্য অনুরোধ করে।
উক্ত পাঁচটি প্যালেটে শুধুই আর্ট পেপার পাওয়া যায়। কিন্তু পরে এআইআর টিমের সদস্যরা আরও একটি প্যালেট খোলে এবং সিগারেটের জাল স্ট্যাম্প খুঁজে পায়। অতঃপর এআইআর টিম শতভাগ কায়িক পরীক্ষা শেষে সর্বমোট ২৪৬ প্যাকেট (প্রতি প্যাকেটে ২৬০ বান্ডিল এবং প্রতি বান্ডিলে ৫০০ পিস) সর্বমোট ৩ কোটি ১৯ লাখ ৮০ হাজার পিস নিম্নস্তরের ১০ শলাকা বিশিষ্ট সিগারেটের প্যাকেটে ব্যবহারের উপযোগী হালকা খয়েরি রংয়ের জাল স্ট্যাম্প পাওয়া যায়।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের এস.আর.ও নং- ১৪৭-আইন/২০২০/১০৮-মূসক অনুযায়ী, নিম্নস্তরের সিগারেট স্ট্যাম্পের রং হালকা খয়েরি যার সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ৩৯ টাকা থেকে ৬২ টাকা এবং যার বিপরীতে এসডির হার ৫৭ শতাংশ এবং মূসকের হার ১৫ শতাংশ।
এই পণ্যচালানটি খালাস হলে জাল স্ট্যাম্প ৩ কোটি ১৯ লাখ ৮০ হাজার নিম্নস্তরের সিগারেটের প্যাকেটে ব্যবহার করা যেত। যার মাধ্যমে সরকার প্রায় ৯০ কোটি থেকে ১৪৩ কোটি টাকা রাজস্ব হারাতো।
চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের কমিশনার নির্দেশে দোষী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে কাস্টম আইন এবং প্রচলিত অন্যান্য আইন ও বিধি অনুযায়ী দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা গ্রহণের কার্যক্রম চলমান রয়েছে বলে জানিয়েছেন কাস্টম কর্মকর্তরা।
উল্লেখ্য, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের এসআরও নং ১৮১-আইন/২০১৯/৩৮-মূসক তারিখ: ১৩ জুন, ২০১৯ সালের বিধি ১১ এর উপবিধি (৫) অনুযায়ী, স্ট্যাম্প বা ব্যান্ডরোল দি সিকিউরিটি প্রিন্টিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ থেকে সংগ্রহ করতে হয়। বিধি (৬) অনুযায়ী, সংশ্লিষ্ট কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট কর্তৃক দি সিকিউরিটি প্রিন্টিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ এবং সিগারেট উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধির সমন্বয়ে গঠিত কমিটি প্রতি ৩ (তিন) মাস অন্তর প্রতিষ্ঠানভিত্তিক সিগারেট স্ট্যাম্প ও ব্যান্ডরোল সরবরাহ ও ব্যবহার আড়াআড়ি যাচাইপূর্বক প্রতিবেদন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের মূসক বাস্তবায়ন শাখায় প্রেরণ করতে হয়। ফলে এই জাতীয় পণ্য দি সিকিউরিটি প্রিন্টিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ ব্যতীত অন্য কোনো প্রতিষ্ঠান থেকে ক্রয় অথবা বিদেশ থেকে আমদানি করার কোনো সুযোগ নেই।
কেএম/ওএফ