মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান নাছিমা বেগম বলেছেন, মানবাধিকার মানে শুধু গুম, খুন থেকে রক্ষার অধিকার নয়। বাসস্থানের অধিকার, শিক্ষার অধিকার, নারী ও শিশুদের অধিকারও মানবাধিকার।

আজ মঙ্গলবার (১৪ ডিসেম্বর) অনলাইনে জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরাম আয়োজিত টেকসই উন্নয়নে কন্যাশিশুর নিরাপত্তা ও জেন্ডার সমতা বিষয়ক এক আলোচনায় তিনি এসব কথা বলেন।

নাছিমা বেগম বলেন, আমরা ভেবেছিলাম করোনাকালে নারী ও কন্যাশিশুর প্রতি নির্যাতন কমবে। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে নির্যাতন আরও বেড়েছে। এই জায়গাতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার অনুরোধ করছি। মানবাধিকার কমিশন এটা নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। প্রথমবারের মতো ন্যাশনাল ইনকোয়ারি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কিন্তু সরকারের একার পক্ষে সবকিছু করা সম্ভব না। তাই সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানাচ্ছি। 

আলোচনায় জাতীয় কন্যাশিশু এডভোকেসি ফোরামের সহসভাপতি শাহীন আক্তার ডলি বলেন, আজকের কন্যাশিশুরা আগামী দিনের বিশ্বকে নেতৃত্ব দিবে। ২০৩০ সালের মধ্যে এসডিজি অর্জন করতে হলে কন্যাশিশুদের শিক্ষা, নিরাপত্তা ও সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে হবে। এজন্য আজকের আয়োজনে আমরা টেকসই উন্নয়নের কথা বলেছি। বর্তমানে আমরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে নারীদের অগ্রগতি দেখতে পাই। কিন্তু পুরুষের সাথে যদি তুলনা করি তাহলে নারীরা এখনও অনেক পিছিয়ে আছে। নারী ও কন্যাশিশুদের মর্যাদা ও ক্ষমতায়নের প্রশ্নে আমাদের এখনও অনেক দূর যেতে হবে। 

তিনি বলেন, আমরা দেখতে পেয়েছি করোনাকালীন সময়ে নারী ও কন্যাশিশুর প্রতি নির্যাতন বেড়েছে। আমরা ১৩৫ জন কর্মজীবী নারীর ওপর গবেষণা করেছি। সেই গবেষণায় দেখা গেছে ১৩৫ জনই কোনো না কোনোভাবে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। আমরা ২০২১ সালে জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত কন্যাশিশুদের প্রতি নির্যাতনের চিত্র বিশ্লেষণ করে দেখতে পেয়েছি, এই সময়ে ৮৩১ জন কন্যাশিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে, ১৫৩ জন আত্মহত্যা করেছে। আমরা এমন চিত্র আর দেখতে চাই না।

দি হাঙ্গার প্রজেক্টের কান্ট্রি ডিরেক্টর বদিউল আলম মজুমদার বলেন, আমাদের স্বাধীনতার স্বপ্ন ছিল দেশের সকল জনগোষ্ঠীর আত্মমর্যাদাশীল জীবন গড়ে তোলা। কিন্তু অর্ধেক জনগোষ্ঠী অর্থাৎ নারী ও কন্যাশিশুদের জন্য আত্মমর্যাদাশীল জীবন তৈরি করতে না পারলে স্বাধীনতার স্বপ্ন পূরণ হবে না। কন্যাশিশুদের অধিকার হরণের বড় ক্ষেত্রে হচ্ছে বাল্যবিবাহ। বাল্যবিবাহের ফলে শুধু কন্যাশিশুর ক্ষতিগ্রস্ত হয় না, অনেকেই ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

আলোচনায় আরও যুক্ত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজের শিক্ষক ড. সোমা দে, অপরাজেয় বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ওয়াহিদা বানু; দৈনিক প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক সোহরাব হাসান, দৈনিক ইত্তেফাক সম্পাদক তাসমিমা হোসেন, সিনিয়র সাংবাদিক অজয় দাস, বাংলা ট্রিবিউনের চিফ রিপোর্টার উদিসা ইসলাম, ইউনিসেফ বাংলাদেশের চাইল্ড প্রটেকশন স্পেশালিস্ট শাবনাজ জাহেরীন, ইউএনডিপির জেন্ডার এক্সপার্ট বিথিকা হাসান, এটিএন বাংলার সিনিয়র ভিডিও এডিটর রোকসানা বানু, নাগরিক উদ্যোগের নাদিরা পারভিন প্রমুখ।

এমএইচএন/এইচকে