রাজধানীর গুলিস্তানে গাড়িচাপায় নটরডেম কলেজের শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ৯ জন গাড়ি চালককে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। 

রাজধানীর গুলিস্তানে গাড়িচাপায় নটরডেম কলেজছাত্রের মৃত্যুর ঘটনায় পর এ বিষয়ে তদন্ত করতে গিয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন জানতে পেরেছে, যেসব চালকের জন্য ময়লার গাড়িগুলো বরাদ্দ ছিল সেসব গাড়ি তারা না চালিয়ে অন্যদের দিয়ে চালাত।

বিষয়টি জানতে পেরে ডিএসসিসির ৯ জন গাড়ি চালকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। সোমবার (১৩ ডিসেম্বর) রাতে ঢাকা পোস্টকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ডিএসসিসির জনসংযোগ কর্মকর্তা আবু নাছের।

তিনি বলেন, নিজেদের অনুকূলে বরাদ্দ থাকা গাড়ি বহিরাগত লোকদের দিয়ে চালানোর দায়ে ৯ জন চালককে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।

জানা গেছে, দায়িত্ব পালনে অবহেলা, অসদাচরণ ও অদক্ষতার অভিযোগে ৮ ডিসেম্বর এসব চালককে বরখাস্ত করা হয়। তবে চালকদের বরখাস্তের বিষয়টি এতদিন গোপন রাখা হয়েছিল। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সচিব স্বাক্ষরিত সাময়িক বরখাস্তের অফিস আদেশে বলা হয়েছে, এসব চালকের অনুকূলে গাড়ি বরাদ্দ দেওয়া হলেও নিজে না চালিয়ে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের গাড়িচালক নন, এমন ব্যক্তিকে দিয়ে অবৈধভাবে গাড়ি চালনা করে আসছিলেন তারা। 

নিয়মিত গাড়িচালক গাড়ি না চালিয়ে অন্য কোনো সাধারণ গাড়িচালক ভারী গাড়ি চালানোর জন্য প্রায়ই দুর্ঘটনা সংঘটিত হচ্ছে এবং প্রাণহানিসহ জানমালের ক্ষতি সাধিত হচ্ছে। চালকদের এমন কার্যকলাপ করপোরেশনের শৃঙ্খলাপরিপন্থী এবং সংস্থার সুনাম চরমভাবে ক্ষুণ্ন হয়েছে। তাই তাদের বরখাস্ত করা হয়েছে। সাময়িক বরখাস্তকালীন এসব চালকরা কেবল বিধি অনুযায়ী খোরাকি ভাতা পাবেন।

জানা গেছে, সাময়িক বরখাস্ত হওয়া ৯ চালকের মধ্যে ৭ জন ময়লাবাহী গাড়ি চালক ছিলেন। বাকি দুজন হালকা গাড়ি চালাতেন। সাময়িক বরখাস্ত হওয়া ময়লাবাহী গাড়িচালকেরা হলেন- বেলায়েত হোসেন, ফরিদ আহমেদ, মো. আবদুল্লাহ, কাউছার আলী, জামাল উদ্দিন-২, কবির হোসেন-২ এবং রবিউল আলম। এছাড়া হালকা গাড়িচালকরা- হলেন নূর জালাল শিকদার ও আজিম উদ্দিন।

গত ২৪ নভেম্বর বেলা সাড়ে ১১টায় ডিএসসিসির গাড়ির ধাক্কায় নটরডেম শিক্ষার্থী নাঈম হাসানের (১৭) মৃত্যু হয়। এরপর শিক্ষার্থীদের আন্দোলন শুরু হয়। ঘটনার পর তাৎক্ষণিক তদন্ত কমিটি করে দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা এয়ার কমডোর সিতওয়াত নাঈমকে আহ্বায়ক এবং মহা-ব্যবস্থাপক (পরিবহন) বিপুল চন্দ্র বিশ্বাস ও তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (যান্ত্রিক) আনিছুর রহমানকে সদস্য করে ৩ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির ৭ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করার কথা ছিল।
এই কমিটির কার্যপরিধির মধ্যে ছিল দুর্ঘটনাটি কীভাবে সংগঠিত হলো তা সবিস্তারে উত্থাপন ও দোষী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করা। ভবিষ্যতে যেন এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা এড়ানো যায়, সেজন্য সুপারিশ করা।

এরপর তদন্ত করতে গিয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের পরিবহন বিভাগের বিভিন্ন অনিয়ম, অব্যবস্থাপনার বিষয়গুলো উঠে আসতে শুরু করে।

এদিকে গত ৮ ডিসেম্বর আদি বুড়িগঙ্গা নদীপথের (চ্যানেল) উপর সেতু নির্মাণের সম্ভাব্য স্থান পরিদর্শন শেষে এক প্রশ্নের জবাবে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর বলেন, আপনারা জানেন যে, দীর্ঘদিনের পুঞ্জিভূত সমস্যায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের পরিবহন বিভাগ একদম নুয়ে পড়েছিল। আমরা তদন্ত প্রতিবেদন পেয়েছি এবং তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী আমরা এরই মাঝে কার্যক্রম হাতে নিয়েছি। আমরা পর্যালোচনা করেছি এবং যারা যারা দোষী, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছি। যদিও সাময়িক অসুবিধা হবে, একটু দুর্ভোগ হতে পারে, তারপরও আমরা কঠোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে নিয়মিত গাড়ি চালক ছাড়া অন্য কাউকে দিয়ে আমাদের গাড়ি পরিচালনা করব না এবং আমাদের সম্পদ, আমাদের গাড়ি কাউকে ধরতে দেব না। এ ব্যাপারে আমরা কঠোর। যারা যারা এই নিয়ম ভঙ্গ করে এগুলো করে আসছে, তাদের বিরুদ্ধে আমরা কঠোর ব্যবস্থা নেব এবং ভবিষ্যতে যাতে আর এ ধরনের সুযোগ না থাকে, সে জন্য আমরা পুরো সংস্কার করছি।

এএসএস/জেডএস