চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে সাজাপ্রাপ্ত এক বন্দিকে মারধরের অভিযোগে সিনিয়র জেল সুপারসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা হয়েছে। আদালত সিআইডিকে পুলিশ সুপার পদমর্যাদার কর্মকর্তা দিয়ে মামলাটি তদন্ত করে  দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।

সোমবার ( ১৩ ডিসেম্বর) চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ শেখ আসফাকুর রহমানের আদালতে মামলাটি করা হয়। আদালত শুনানি শেষে সিআইডিকে তদন্তের নির্দেশ দেন।

আদালতে ফটিকছড়ি উপজেলার বাসিন্দা ও বন্দির স্ত্রী পারভিন আক্তার হিরা এ আবেদন দাখিল করেন। নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু আইনের ১৩ (১) (২) এর (ক) (খ) (গ) ধারায় মামলাটি দাখিল করা হয়েছে।

মামলায় অভিযুক্তরা হলেন- চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার শফিকুল ইসলাম, জেলার দেওয়ান তারিকুল ইসলাম, ডেপুটি জেলার মো. সাইমুর, কারারক্ষী সবুজ দাশ ও সুবেদার মো. এমদাদ হোসেন।

চট্টগ্রাম মহানগর আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) মো. ফখরুদ্দিন বলেন, চট্টগ্রাম কারাগারে মো. শামীম নামে এক বন্দিকে নির্যাতনের অভিযোগে সিনিয়র জেল সুপারসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে একটি মামলা করা হয়েছে। আদালত মামলাটি গ্রহণ করে অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) পুলিশ সুপার পদমর্যাদার কর্মকর্তা দিয়ে তদন্তের আদেশ দিয়েছেন।

মামলার বাদী পারভীন আকতার হিরা ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমার স্বামীকে নির্যাতনের অভিযোগে আজ আদালতে একটি মামলা দায়ের করেছি। আমার স্বামীর ওপর যারা নির্যাতন করেছেন তাদের বিচার চাই।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, বাদী পারভিন আক্তারের স্বামী মো. শামীম দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি হিসেবে ২০০৪ সাল থেকে চট্টগ্রাম কারাগারে আছেন। একটি হত্যা মামলায় ২০০৭ সালের শামীমকে ফাঁসির আদেশ দেন আদালত। ২০১২ সালে তার সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন আদালত।

মামলার আবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, অভিযুক্তরা কারা অভ্যন্তরে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন অজুহাতে বাদীর স্বামী শামীমকে শারীরিকভাবে নাজেহাল ও মারধর করেন। খাবার না দেওয়ার প্রতিবাদ করায় জেলার তারিকুল ইসলাম বন্দি শামীমকে বেধড়ক মারধর করেন।

১৭ জুলাই সন্ধ্যায় এমদাদ, সবুজ ও সাইমুর গিয়ে তাকে কারা অভ্যন্তরে একটি আমগাছের সঙ্গে বেঁধে মারধর করেন। পরে তাকে জেলারের অফিসে নিয়ে যাওয়া হয়। তখন জেলার তারিকুল বলেন, ‘শালা এখনো মরেনি, মরলে এক কলম লিখে দেব, কিছুই হবে না।’ এ কথা বলে জেলারও আবার শামীমকে মারধর করেন।

মামলার আবেদনে আরও বলা হয়েছে,১১ নভেম্বর একটি মামলায় শামীমকে চট্টগ্রাম আদালতে হাজির করা হয়। তখন বাদী দেখা করতে গেলে এসব নির্যাতনের বিষয়ে বিস্তারিত বলেন তার স্বামী। বর্তমানে শামীম ঠিকমতো হাঁটাচলা করতে পারে না। শামীমের শরীরে  এখনও আঘাতের চিহ্ন আছে বলে আবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

আদালত সূত্রে জানা গেছে , গত ২৫ নভেম্বর একই অভিযোগে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ২য় আদালতে মামলার আবেদন  করেছিলেন বাদী পারভীন আক্তার। পরে ৬ ডিসেম্বর এই আদালতে উপযুক্ত এখতিয়ার সম্পন্ন আদালতে মামলা দায়েরের কথা বলে নালিশটি ফেরতে দেয়। যার কারণে বাদী আজ মহানগর দায়রা জজ আদালতে মামলাটি দায়ের করেন।

কেএম/এমএইচএস