বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছিলেন, ‘অধিকার ছাড়িয়া দিয়া অধিকার রাখিতে যাইবার মতো এমন বিড়ম্বনা আর নাই।’ কবি যদি বেঁচে থাকতেন আর সম্প্রতি ডিএনসিসির নতুন ওয়ার্ডগুলোতে আসতেন, তাহলে হয়ত লিখতেন, ‘অধিকার পাওয়ার পর তা ভোগ না করতে পারার মতো এমন দুঃখ আর নাই।’

কবি না লিখলেও এমনই অনুভূতি ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) সঙ্গে যুক্ত হওয়া সব নতুন ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের। ‘নতুন’ সম্বোধন করা হলেও ডিএনসিসির এসব ওয়ার্ডের বয়স একে একে চার বছর হয়ে গেছে। তবু উন্নয়নের যে ‘অধিকারের’ আশা করেছিলেন এলাকাবাসী, সে গুড়ে বালি ছিল এতদিন। তবে চাপা দুঃখ বুকে বয়ে চলা এসব ওয়ার্ডবাসীর মনে ডিএনসিসি এবার বিলিয়ে দেবে আনন্দ।

সিটি করপোরেশনের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার পরও সার্বিক উন্নয়নে পিছিয়ে আছে ডিএনসিসির নতুন ওয়ার্ডগুলো। দীর্ঘ চার বছরের অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে মেগা প্রকল্পের আওতায় এবার এসব ওয়ার্ডে উন্নয়নকাজ শুরুর উদ্যোগ নিয়েছে ডিএনসিসি। জানা গেছে, নবগঠিত ১৮টি ওয়ার্ডে চলতি ডিসেম্বরেই এই উন্নয়নকাজ শুরু হবে।

ডিএনসিসির নতুন এসব ওয়ার্ডের জন্য গত বছরের ১৪ জুলাই ৪ হাজার ২৫ কোটি ৬২ লাখ টাকার প্রকল্প অনুমোদন দেয় জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। করোনা মহামারির জন্য উন্নয়নকাজ শুরু হতে পারেনি। করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় এখন কাজ শুরু হচ্ছে।

ডিএনসিসি মেয়র আতিকুল ইসলাম সম্প্রতি এ বিষয়ে বলেন, ‘নতুন ওয়ার্ডগুলোর উন্নয়নের লক্ষ্যে একটি মাস্টার প্ল্যান প্রণয়ন করা হয়েছে। সেই মোতাবেক এসব ওয়ার্ডে উন্নয়ন কার্যক্রম শুরু হবে। পরিকল্পিত ও পরিবেশবান্ধব উন্নয়ন কার্যক্রমের ফলে নতুন ওয়ার্ডগুলোর চেহারাই বদলে যাবে।’

নতুন ওয়ার্ডগুলোর বর্তমান পরিস্থিতি

২০১৭ সালের জুলাই মাসে ডিএনসিসির ৪২ নম্বর ওয়ার্ডের আওতায় আসে বাড্ডা সংলগ্ন বেরাইদ এলাকা। কিন্তু এলাকা ঘুরে বোঝার উপায় নেই এটি সিটি করপোরেশনের আওতাধীন।

সামান্য বৃষ্টিতেই এখানে সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা, পানি নিষ্কাশন পদ্ধতি উন্নত না হওয়ার কারণে বিভিন্ন সড়ক ও গলিতে বছরজুড়ে জমে থাকে পানি। এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থারও দুরবস্থা। সিটি করপোরেশনের কোনো সুযোগ-সুবিধাই পাচ্ছে না এলাকাবাসী।

২০১৬ সালের ৯ মে প্রশাসনিক পুনর্বিন্যাস সংক্রান্ত জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটিতে (নিকার) ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সঙ্গে ৮টি করে ইউনিয়ন যুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পরের বছর নবগঠিত ৩৬টি ওয়ার্ডকে দশটি অঞ্চলে বিভক্ত করা হয়।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) শ্যামপুর, দনিয়া, মাতুয়াইল, সারুলিয়া, ডেমরা, মান্ডা, দক্ষিণগাঁও এবং নাসিরাবাদ ইউনিয়নকে ৫৮, ৫৯, ৬০, ৬১, ৬২, ৬৩, ৬৪, ৬৫, ৬৬, ৬৭, ৬৮, ৬৯, ৭০, ৭১, ৭২, ৭৩, ৭৪ ও ৭৫ নম্বর ওয়ার্ডে বিভক্ত করা হয়।

অপরদিকে ডিএনসিসি অন্তর্ভুক্ত বাড্ডা, ভাটারা, সাঁতারকুল, বেরাইদ, ডুমনি, উত্তরখান, দক্ষিণখান ও হরিরামপুর ইউনিয়নকে ৩৭, ৩৮, ৩৯, ৪০, ৪১, ৪২, ৪৩, ৪৪, ৪৫, ৪৬, ৪৭, ৪৮, ৪৯, ৫০, ৫১, ৫২, ৫৩ ও ৫৪ নম্বর ওয়ার্ডে বিভক্ত করা হয়।

রাজধানীর বাড্ডা এলাকা সংলগ্ন ডিএনসিসির ৪২ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা সাজেদুর রহমান বলেন, ‘আমরা নামেই সিটি করপোরেশনের বাসিন্দা। কোনো ধরনের উন্নয়নকাজ আমাদের এখানে হয়নি। অনেক এলাকাতে এখনও পানি নিষ্কাশনের উন্নত ব্যবস্থা নেই। এতে দিনের পর দিন জলাবদ্ধতা। দীর্ঘ চার বছর ধরে অপেক্ষা করছি আমরা, কাজের কাজ কিছুই হয়নি।’

অন্যদিকে ডুমনি এলাকার বাসিন্দা আক্তার মাহমুদ বলেন, ‘রাস্তাঘাটের অবস্থা খারাপ, যোগাযোগ ব্যবস্থা খুবই নাজুক। বছরজুড়ে বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা। আমার একটা বাড়ি আছে, ভাড়া দিয়ে সংসার চলে। যখন সিটি করপোরেশনের সঙ্গে আমাদের এলাকা যুক্ত হলো তখন ভেবেছিলাম এলাকার উন্নতি হবে, সঙ্গে ভাগ্যেরও। কিন্তু চার বছরেও উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। জলাবদ্ধতার কারণে বাসার বিভিন্ন ইউনিট ফাঁকা থাকে, ভাড়াটিয়া পাই না।’

নতুন ওয়ার্ডগুলোর এমন পরিস্থিতি বিষয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের নতুন একটি ওয়ার্ডের একজন কাউন্সিলর নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘রোজ রোজ জলাবদ্ধতা ও নাজুক যোগাযোগ ব্যবস্থা নিয়ে অভিযোগ আসে। তবে নতুন ওয়ার্ডগুলোর উন্নয়নকাজের জন্য একনেক অনুমোদন দিয়েছে। দ্রুতই কাজ শুরু হবে বলে জানতে পেরেছি।’

অপেক্ষার ফল সুমিষ্ট হয়। দীর্ঘ চার বছর অপেক্ষা শেষে যে উন্নয়নকাজ শুরু হতে চলেছে, তার মিষ্টতা একটু বেশিই হবে বলে বিশ্বাস ডিএনসিসির নতুন সব ওয়ার্ডবাসীর।

এএসএস/এইচকে/এসএসএইচ