আর কে টাওয়ারে আগুন
জরুরি সিঁড়ির নিচেই লাগে আগুন, আতঙ্কিত অনেকেই বাঁচেন লাফিয়ে
রাজধানীর বাংলামোটর এলাকার আর কে টাওয়ারের সাত তলায় আগুন লাগার খবর পাওয়া যায় শনিবার (১১ ডিসেম্বর) দুপুর ১২টা ২৫ মিনিটে। তবে আগুন লাগে আরও আগে। আগুন লাগার পরই বন্ধ করা হয় বিদ্যুৎ ও গ্যাসের সরবরাহ। ইমার্জেন্সি এক্সিট পয়েন্ট যে পাশে ছিল সেখানেই লেগেছিল আগুন। এ কারণে ওইপাশে থাকা জরুরি নির্গমণ সিঁড়ি আটকে পড়ারা ব্যবহার করতে পারেননি। ভবনে আটকে পড়া মানুষ ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
আগুন লাগার পর দ্রুত সব ফ্লোরে ছড়িয়ে পড়ে ধোঁয়া। যে যেভাবে পেরেছেন বেরিয়ে এসেছেন। তবে ভবনটির আট ও ৯ তলায় আটকে পড়া লোকজন জানালা ভেঙে ফায়ার সার্ভিসের পাইপ-এ ঝুলে অপর ভবনে লাফিয়ে বাঁচেন।
বিজ্ঞাপন
ভবনের বিভিন্ন ফ্লোরে কাজ করা কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, আর কে টাওয়ারের নিয়মিত ব্যবহারের সিঁড়িও ছিল ব্যবহারের অনুপযোগী, কার্টুন ও কাগজপত্র দিয়ে ঢাকা। আর লিফটে প্রায় দিনই সমস্যা দেখা দিত। আগুন লাগার পর বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করায় বের হওয়াটা ছিল খুবই ঝুঁকিপূর্ণ।
আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার পর ঘটনাস্থলে কথা হয় ৯ম তলা থেকে লাফিয়ে বেঁচে ফেরা ইনটেরিয়র ডিজাইন ফার্ম লাক্সারিয়াস আর্কিটেক্টের ইঞ্জিনিয়ার নাইমুল ইসলামের সঙ্গে।
তিনি বলেন, ৯ম তলায় আমাদের অফিস। পুরো ভবনে ৫ থেকে ৭শ লোক কাজ করেন। বাইরের অনেকেই যাতায়াত করেন। আগুন লাগার পরই পুরো ভবন ধোঁয়ায় ঢেকে যায়। কিছুই দেখা যাচ্ছিল না। লিফট বন্ধ। সিঁড়ি দিয়ে নিচে নেমে দেখি, সেখানেও আগুন। আবার উপরে উঠে যাই। কিন্তু বের হতে পারছিলাম না। কারণ ইমার্জেন্সি সিঁড়ি থাকলেও সেটি ছিল সামনের দিকে। সিঁড়ি বরাবর নিচেই জ্বলছিল আগুন, যে কারণে বের হতে পারছিলাম না। বাধ্য হয়ে আমরা চারজন জানালা ভেঙে ফায়ার সার্ভিসের পানির পাইপ ধরে ঝুলে ঝুলে অন্য ভবনের ছাদে লাফিয়ে নামি। এতে দুজন সামান্য আহত হয়েছেন।
তিনি বলেন, ভবনের সাততলায় ছিল একটি সংবাদপত্র ও ছোট বাচ্চাদের খেলনার কারখানা। তাদের খোঁজ নেওয়ার চেষ্টা করেছি। কিন্তু ধোঁয়ার কারণে যেতে পারিনি।
শরীফ মাহমুদ নামে একই প্রতিষ্ঠানের ইঞ্জিনিয়ার বলেন, একটি ভবনে এত মানুষের কর্মস্থল। ন্যূনতম ফায়ার সেফটি নেই। ফায়ার এক্সিট পয়েন্ট বা সিঁড়ি থাকার নিয়ম পেছনে, আমাদের ভবনে সেটা আছে সামনে। সাততলায় ওই সিঁড়ির কাছেই আগুন লেগেছে। যে কারণে অধিকাংশ ব্যক্তিই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বেরিয়েছেন। দুজনকে দেখেছি যারা ৬ তলা থেকে লাফিয়ে পড়ে আহত হয়েছেন। আবার অনেকে ফায়ার সার্ভিসের সহায়তায় বের হয়েছেন।
আগুনের কারণ ও ভবনের অবস্থা সম্পর্কে ঘটনাস্থলে কথা বলেন ফায়ার সার্ভিসের ডিরেক্টর অপারেশন্স লে. কর্নেল জিল্লুর রহমান।
তিনি বলেন, আগুন লাগার খবর পেয়ে ১২টা ২৫ মিনিটের মধ্যেই ফায়ার সার্ভিসের দল ঘটনাস্থলে পৌঁছে। আটটি ইউনিট টানা কাজ করে ২টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। ভবনটির যেখানে আগুন লেগেছে সেখানে অনেক কাগজ, কার্টুনসহ বিভিন্ন প্যাকেজিং ম্যাটেরিয়াল ছিল। যে কারণে আগুন নেভাতে বেগ পেতে হয়। আগুন পুরোপুরি নেভানোর পর কারণ পর্যবেক্ষণ করা হবে।
তিনি বলেন, আমরা তদন্ত করে দেখব কেন আগুন লেগেছে। তবে সিঁড়ি মাত্র একটি। অথচ ভবনের আয়তন অনুযায়ী আরও ইমার্জেন্সি ফায়ার এক্সিট (সিঁড়ি) থাকার কথা ছিল। বিল্ডিং কোড অনুযায়ী বেশির ভাগ ভবনেই আমরা পর্যাপ্ত এক্সিট পয়েন্ট পাই না। এখানেও ওপেন স্পেস খুবই কম। আর এখানে আরেকটি বিষয় লক্ষ্য করা গেছে। সেটি হলো, এখানে মাকড়সার জালের মতো তার। যে কারণে পানি নিক্ষেপ বাধাগ্রস্ত হচ্ছিল, ভেতরে প্রবেশেও সমস্যা হচ্ছিল। ইমার্জেন্সি ফায়ার এক্সিট সাইটেই আগুন লাগার কারণে জানালা ভেঙে ভেতরে ফায়ার কর্মীদের প্রবেশ করতে হয়েছে। আমরা সবকিছু তদন্ত করে দেখব।
আর কে টাওয়ারের সামনের সড়কেই দায়িত্ব পালন করছিলেন অ্যাসিস্ট্যান্ট ট্রাফিক সাব ইন্সপেক্টর (এটিএসআই) খোকন মৃধা। তিনি জানান, আগুন লাগার শুরুতেই আমি ধোঁয়া বের হতে দেখি। এরপর দৌড়ে গিয়ে ভবনের গ্যাস ও বিদ্যুতের লাইন বন্ধ করি। ৯৯৯ এর মাধ্যমে ফায়ার সার্ভিসকে জানাই। এরপর ফায়ার কর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করে।
জেইউ/এসকেডি