র‌্যাব সদর দফতরের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, মার্কিন নিষেধাজ্ঞার ব্যাপারে আমরা অফিসিয়ালি এখনো কিছু জানি না। তবে যেটা গণমাধ্যমে এসেছে যে, র‌্যাব মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে। আসলে র‌্যাব মানবাধিকার লঙ্ঘন কিংবা লুণ্ঠন করেনি, বরং মানবাধিকার রক্ষা করে চলছে।

শনিবার (১১ ডিসেম্বর) দুপুর আড়াইটায় কারওয়ান বাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন তিনি।

কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, মানবাধিকার রক্ষায় র‌্যাবের ৯ হাজার সদস্যের ফোর্স কাজ করে যাচ্ছে। মানবাধিকার রক্ষা করতে গিয়ে সাবেক গোয়েন্দা প্রধান লে. কর্নেল আজাদসহ র‌্যাবের ২৮ জন শহীদ হয়েছেন। আইনশৃঙ্খলা সমুন্নত রাখতে এবং মানবাধিকার রক্ষা করতে গিয়ে র‌্যাবের এক হাজারের বেশি সদস্যের অঙ্গহানি হয়েছে। বিভিন্ন সময় দুই হাজারের বেশি সদস্য আহত হয়েছেন।

কমান্ডার মঈন দাবি করেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষা কিংবা মানবাধিকার রক্ষার্থে র‌্যাবের যে আত্মত্যাগ তা অন্য কোনো বাহিনীর রয়েছে কি না সন্দেহ আছে।

তিনি বলেন, এলিট ফোর্স হিসেবে কিছু ম্যান্ডেটের আলোকে র‌্যাব প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। জঙ্গি, মাদক, সন্ত্রাসবাদ দমনেই র‌্যাব প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। আজকে র‌্যাবের আভিযানিক সাফল্যের কারণেই জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ উত্তর বা দক্ষিণাঞ্চলসহ পুরোদেশে শূন্যের কোঠায় নেমে এসেছে। র‌্যাবের অভিযানের কারণেই সুন্দরবন জলদস্যুমুক্ত হয়েছে। আমরা সুন্দরবনের জলদস্যু মুক্ত হওয়ার তৃতীয় বর্ষ এবার উদযাপন করেছি। বিশ্বের আর কোনো দেশেই এমন জলদস্যু মুক্ত হয়েছে? সুন্দরবনে ৩৬টি দস্যু বাহিনীর ৩২৬ জন আত্মসমর্পণ করেছে। তাদের পুনর্বাসনে র‌্যাব মানবিক ভূমিকা পালন করেছে। তাদের সুস্থ স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে সরকারি অনুদান ছাড়াও র‌্যাব নিজস্ব অর্থায়নে ঘর দিয়েছে, গরু-ছাগল দেওয়া হয়েছে। বাঁশখালীর জলদস্যুদেরও স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনা হয়েছে।

র‌্যাবের এ কর্মকর্তা বলেন, র‌্যাব আত্মসমর্পণ করা জঙ্গিদের সুস্থ-স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে কাজ করছে। বিশ্বে খুব কম দেশেই র‌্যাবের মতো আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মানবিকতা দেখিয়েছে। আমরা তাই দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে বলতে চাই, র‌্যাব মানবাধিকার লঙ্ঘন বা লুণ্ঠন করেনি বরং রক্ষা করে চলেছে।

কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, বিভিন্ন বাহিনীর চৌকস অফিসার ও সদস্যদের নির্বাচন করে একটি বিশেষ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে র‌্যাবে আনা হয়। নিজস্ব আইন ও নিয়ম কঠোরভাবে পালন করা হয়। এখানে নিয়মের বাইরে কোনো কিছু করার সুযোগ নেই। দেশে র‌্যাবই প্রথম বাহিনী যেখানে নিজস্ব সদস্যের জন্য ডোপ টেস্টের ব্যবস্থা করেছে। এখন সরকারি চাকরিতে ডোপ টেস্টের ব্যবস্থা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে র‌্যাব কিশোর গ্যাংয়ের দৌরাত্ম বন্ধসহ বিভিন্ন ইস্যুতে সফল ও স্বার্থকভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। করোনা মহামারিতে সন্তান বাবাকে, বাবা সন্তানকে ফেলে গিয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে র‌্যাব হেলিকপ্টার ব্যবহার করে করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছে, হাসপাতালে ভর্তির ব্যবস্থা করেছে।

মাদকবিরোধী অভিযান, গুজব, রাষ্ট্রবিরোধী অপতৎপরতাসহ জনসচেতনতামূলক অনেক কার্যক্রম র‌্যাব পরিচালনা করে যাচ্ছে। র‌্যাব মানবাধিকার রক্ষা যদি নাই করত তাহলে সুন্দরবন জলদস্যুমুক্ত হতো না আবার তাদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করত না। মানবাধিকার রক্ষা যদি র‌্যাব নাই করত তাহলে আবার জঙ্গিদের সুস্থ জীবনে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নিত না।

র‌্যাব অফিসিয়ালি ডকুমেন্ট পেলে নিরীক্ষা করে যেসব পদক্ষেপ গ্রহণ করা দরকার তা নেওয়া হবে। ইতোমধ্যে স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।

ক্রসফায়ার ইস্যুতে র‌্যাবের ভূমিকা সম্পর্কে এক প্রশ্নের জবাবে খন্দকার আল মঈন বলেন, বিভিন্ন অভিযানে র‌্যাবের গুলিবিনিময়ে নিহতের কথা বলা হয়। যখন আমরা মাদক কিংবা জঙ্গিবিরোধী অভিযানে যাই, যখন প্রতিরোধের শিকার হই কিংবা গুলির পর আত্মরক্ষার জন্য র‌্যাবও গুলি চালায়। এতে র‌্যাবের এক হাজারের বেশি সদস্যের অঙ্গহানি হয়েছে। আত্মরক্ষার্থেই র‌্যাব গুলি চালায়। গুলি বিনিময়ের পর নির্বাহী তদন্ত হয়। যথাযথ তদন্তের পর গুলি বিনিময় যথাযথ ছিল কি না সেটা যাচাই বাছাই করা হয়। মানুষ হিসেবে ভুল করতেই পারে। যদি যথাযথ না হয় তাহলে কঠোর আইনানুগ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়। র‌্যাবে যারা চাকরি করে তাদের কেউ আইন লঙ্ঘন করলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়। 

জেইউ/এসকেডি/জেএস