অপহরণের জন্যই ঢাকায় আসে চক্রটি, দাবি করে ১০ লাখ টাকা
গাইবান্ধা থেকে ঢাকায় এসে আতিয়ার রহমান (৬২) নামের এক বৃদ্ধকে অপহরণ, নির্যাতন ও ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করায় অপহরণকারী চক্রের এক সদস্যকে গ্রেফতার করেছে র্যাব।
র্যাব ৪ এর সহকারী পরিচালক এএসপি (মিডিয়া) মাজহারুল ইসলাম জানান, গত ৭ ডিসেম্বর সকাল সাড়ে ১০টার দিকে আতিয়ার রহমান গাইবান্ধা থেকে আসা আতিয়ার ও আসাদুলের সঙ্গে মহাখালীতে দেখা করতে গিয়ে নিখোঁজ হয়।
বিজ্ঞাপন
ঘটনার পর নিখোঁজের ছেলে জামিউল ইসলাম জীবন মিরপুর মডেল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি এবং র্যাব-৪ বরাবর ভিকটিমকে উদ্ধারের জন্য একটি আবেদন করেন। প্রাপ্ত অভিযোগের ভিত্তিতে ভিকটিমকে উদ্ধার এবং অপহরণকারী চক্রের সদস্যদের গ্রেফতারে র্যাবের একটি গোয়েন্দা দল কাজ শুরু করে।
গোয়েন্দা তথ্য ও স্থানীয় সোর্সের সাহায্যে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে গত ৯ ডিসেম্বর ভোর ৫টা থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত গাইবান্ধা জেলার বামনডাঙ্গা এলাকায় সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনা করে অপহৃত আতিয়ার রহমানকে উদ্ধার ও গ্রেফতার করা হয় অপহরণকারী চক্রের সদস্য মো. আশিকুর রহমান (২৮) কে।
গ্রেফতার আশিকুরের বাড়ি গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জের বামনডাঙ্গায়। অপহরণের মূল পরিকল্পনাকারীর নামও আতিয়ার। আর আশিকুর তার ছোট ভাই।
গ্রেফতার আশিকুর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, গত ৭ ডিসেম্বর সকালে আতিয়ার রহমানের কাছে গাইবান্ধা থেকে আসা অপহরণকারী চক্রের পলাতক সদস্য আসামি আতিয়ার ও আসাদুল একটি ব্যাপারে সহযোগিতা চায় এবং মহাখালী আসতে বলে।
তাদের কথামতো মহাখালী আসলে তিতুমীর কলেজের সামনে অপহরণকারী আতিয়ার ও আসাদুলসহ আরও পাঁচ-ছয় জন মিলে বৃদ্ধকে একটি সাদা রঙের মাইক্রোবাসে জোর করে টেনে তুলে এবং হাত পেছনে বেঁধে আব্দুল্লাহপুর হয়ে গাজীপুরের দিকে যায়। এ সময় ভুক্তভোগীকে নির্যাতন করে সঙ্গে থাকা মোবাইল এবং নগদ টাকা কেড়ে নেয়। ভিকটিমকে নিয়ে গাইবান্ধার দিকে রওনা দেয়। গাইবান্ধা জেলার বামনডাঙ্গার একটি বাড়িতে সারারাত ভিকটিমকে আটকে রাখে নির্যাতন করে চক্রটি। পরবর্তীতে তাকে দিয়ে বাড়িতে ফোন করে মুক্তিপণ দাবি করে অভিযুক্তরা। এ সময় ভিকটিমের কাছ থেকে জোরপূর্বক একটি ব্লাংক চেকে স্বাক্ষর নেয় তারা। সারারাত নির্যাতন শেষে পরদিন গত ৮ ডিসেম্বর ভিকটিমকে গাইবান্ধা শহরে নিয়ে যায়। একটি এটিএম বুথে গিয়ে কার্ড পাঞ্চ করে টাকা তুলতে গেলে দেখে ভিকটিমের অ্যাকাউন্ট ব্লক। এতে অপহরণকারীরা প্রচণ্ড ক্ষিপ্ত হয়ে ভিকটিমকে নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরাতে থাকে এবং মেরে ফেলার হুমকি দেয়।
একপর্যায়ে ভিকটিমের পরিবারের সঙ্গে ভিকটিমকে কথা বলিয়ে দিয়ে ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে অন্যথায় মেরে ফেলার হুমকি দেয়। ভিকটিমের পরিবার কোনো মুক্তিপণ না প্রদান করায় এবং সন্ধ্যা হয়ে এলে ভিকটিমকে একটি খোলা মাঠের মধ্যে নিয়ে যায় এবং মেরে ফেলবে বলে ভয়ভীতি দেখায়। এরই মধ্যে বার বার ভিকটিমের পরিবারকে টাকা পাঠানোর জন্য চাপ দেওয়া হয়।
র্যাবের আভিযানিক দল আনুমানিক ভোর ৬টার দিকে বামনডাঙ্গা রেলস্টেশনের পাশের খোলামাঠ সংলগ্ন রেললাইনের পাশ থেকে ভিকটিম আতিয়ার রহমানকে উদ্ধার করে। র্যাব সদস্যদের সঙ্গে থাকা ভিকটিমের ছেলে জীবনের শনাক্তমতে ভিকটিমকে উদ্ধার করে বামনডাঙ্গা রেলস্টেশনের ভেতরে নিয়ে আসা হয়। কিছু সময় বিশ্রামের পর ভিকটিমের শারীরিক অবস্থা স্বাভাবিক হলে তার দেখানো মতে যে বাড়িতে (অপহরণকারী আতিয়ারের বাড়ি) প্রথমে তাকে আটকে রাখা হয়েছিল সেখানে তল্লাশি চালানো হয়।
সেখান থেকে অপহরণকারী দলের মূল নেতা আতিয়ারের ভাই ও সহযোগী আশিকুরকে ঘরে লুকিয়ে থাকা অবস্থায় গ্রেফতার করা হয়। পলাতক অন্যান্যদের গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যাহত আছে। তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।
জেইউ/আইএসএইচ