রাজধানীর স্বামীবাগের মিতালি স্কুল গলির একটি মেসে অভিযান চালিয়ে গতকাল যে ৫ জনকে র‌্যাব আটক করেছিল তারা দীর্ঘদিন ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যবহার করে রাষ্ট্রবিরোধী অপপ্রচার করে আসছিল বলে জানানো হয়েছে সাংবাদিকদের। 

এরসঙ্গে ওই পাঁচজন নিরাপদ সড়ক আন্দোলনেও উসকানি দিয়ে আসছিল বলে জানিয়েছে র‌্যাব। 

র‌্যাব বলছে, উসকানি ও অপপ্রচারের জন্য টেলিগ্রামসহ নানা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন ক্লোজড গ্রুপ তৈরি করা হয়েছিল। নাশকতা ও জ্বালাও-পোড়াও করতে উস্কানি দিতো তারা এই গ্রুপগুলো থেকে। এই চক্রের একজন ছাত্র শিবিরের সঙ্গে জড়িত বলে স্বীকার করেছে।

যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে তারা হলেন- আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ, ওয়ায়েজ কুরুনী, তাওহীদুল ইসলাম, গাজী সাখাওয়াত ও হাবিবুর রহমান।  
এ সময় তাদের কাছ থেকে জব্দ করা হয় দুই লাখ টাকা, ল্যাপটপ, পোর্টেবল হার্ডডিস্ক ও বিভিন্ন দেশবিরোধী, নাশকতা ও উসকানিমূলক লিফলেট।

আজ (শুক্রবার) দুপুরে কারওয়ান বাজারে র‍্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

খন্দকার আল মঈন বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে র‌্যাবের সাইবার মনিটরিং সেলের সাইবার পেট্রোলিংয়ে দেখা যায়, বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে রাষ্ট্রবিরোধী, রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয় এমন সংবেদনশীল বিষয়ে মিথ্যা এবং অতিরঞ্জিত তথ্য ও অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। রাষ্ট্রবিরোধী কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে র‌্যাব সাইবার মনিটরিংয়ের সঙ্গে গোয়েন্দা নজরদারী বৃদ্ধি করে। এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল স্বামীবাগে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়।

তিনি বলেন, গ্রেফতারদের কাছ থেকে জব্দ হওয়া আলামত বিশ্লেষণ করে এবং তাদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, বর্তমান রাষ্ট্রের উন্নয়নের গতি-ধারাকে বানচাল ও নস্যাৎ করার জন্য রাষ্ট্রের শান্তি-শৃঙ্খলা বিঘ্ন করতে সরকারের বিরুদ্ধে নানা প্রকার অপপ্রচার, সরকারি সম্পদ ও মানুষের জান-মালের ক্ষতি, শান্তিপ্রিয় জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টির লক্ষ্যে ষড়যন্ত্র করার পরিকল্পনা করে তারা। তারা অনলাইনে রাষ্ট্র, রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অপপ্রচারে লিপ্ত। বিভিন্ন মাধ্যমে দেশের বাইরে মিথ্যা তথ্য দেওয়া এবং অপপ্রচার চালিয়ে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করার চেষ্টা করে আসছিল। বিগত সময়ের বিভিন্ন ইস্যুসহ সাম্প্রতিক সময়ে নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনকে পুঁজি করে তারা নাশকতার অপচেষ্টা করছিল।

তিনি আরও বলেন, গ্রেফতাররা সকলেই দীর্ঘদিন রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত। রাষ্ট্রবিরোধী কার্যক্রম তারা সংঘবদ্ধভাবে ক্লোজড গ্রুপের মাধ্যমে পরিচালনা করে আসছিল বলে জানায়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর বিভিন্ন পেজ ও গ্রুপের মাধ্যমে তারা রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য অর্থ সংগ্রহ করতো। 

র‍্যাবের মুখোপাত্র বলেন, আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ ও তাওহীদুল ইসলামের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় রাষ্ট্রবিরোধী, নাশকতা, সন্ত্রাসবিরোধী এবং বিস্ফোরক আইনে একাধিক মামলা রয়েছে। তারা বিভিন্ন ধরনের রাষ্ট্রবিরোধী অপপ্রচার,  নাশকতা ও উসকানিমূলক প্রচারণার কর্মকাণ্ডে জড়িত রয়েছে।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে খন্দকার আল মঈন বলেন, গ্রেফতাররা সবাই বিশ্ববিদ্যালয় পাস করেছেন। তারা নিয়মিত জায়গা পরিবর্তন করতেন। তাদের এই কর্মকাণ্ডের জন্য দেশ ও দেশের বাইরে থেকে অনেকেই অর্থ জোগান দিতেন। আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ স্বীকার করেছেন যে, তিনি আগে ছাত্র শিবির করতেন। বাকিরা রাজনৈতিক মতাদর্শের কথা স্বীকার করেননি। 

এমএসি/এনএফ