‘টাকা হলে সবকিছু সম্ভব’ এ ধারণা চিরতরে মুছতে হবে: প্রধান বিচারপতি
‘টাকা হলে সবকিছু সম্ভব’ এ ধারণাকে চিরতরে মুছে দেওয়ার জন্য প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন। একই সঙ্গে দুর্নীতিবাজদের সমাজ থেকে বয়কট করার আগের কালচারে ফিরে আনারও আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
বৃহস্পতিবার (৯ ডিসেম্বর) রাজধানীর সেগুন বাগিচায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালা অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
বিজ্ঞাপন
দুদক চেয়ারম্যান মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বক্তব্য রাখেন। এ সময় দুদক কমিশনার (অনুসন্ধান) মোজাম্মেল হক খান, কমিশনার (তদন্ত) জহুরুল হক এবং প্রতিষ্ঠানটির সচিব মু. আনোয়ার হোসেন হাওলাদারসহ কমিশনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
প্রধান বিচারপতি বলেন, দুর্নীতি প্রতিরোধ করার লক্ষ্যে দুদককে একটি বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছে। দুর্নীতি সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে প্রবেশ করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ভুলণ্ঠিত করছে। সমাজ থেকে দূরে সরে যাচ্ছে আদর্শ ও নৈতিকতা। দেশপ্রেম, আদর্শ ও নৈতিক মূল্যবোধের ভিত্তিতে দুর্নীতির বিরুদ্ধে আমাদের শক্ত অবস্থান নিতে হবে।
দুর্নীতির বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর একটি ভাষণ উদ্ধৃত করে প্রধান বিচারপতি বলেন, “বঙ্গবন্ধুর সময় সেই শিক্ষিত (দুর্নীতিগ্রস্ত) মানুষের সংখ্যা শতকরা পাঁচজন থেকে এখন বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে এখন আমাদের আরও বেশি সতর্ক থাকতে হবে দুর্নীতির বিরুদ্ধে। আমার সবচেয়ে বেশি কষ্ট হয় যখন দেখি স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিগ্রি অর্জনের পর রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত হয়ে কিছু কিছু কর্মকর্তা দুর্নীতিতে নিমজ্জিত হয়। দেশের বিদ্যানব্যক্তিরা লোভী হলে, ঐশয্যের পেছনে ছুটলে, অসাধু হলে দুর্নীতিকে প্রতিরোধ করা কোনো দিন সম্ভব হবে না। ‘টাকা হলে সবকিছু সম্ভব’ এ ধারণাকে চিরতরে মুছে দেওয়ার জন্য আমাদের সবার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে।
তরুণ প্রজন্ম দুর্নীতির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ালে দেশ দুর্নীতিমুক্ত হতে বাধ্য এমন প্রত্যয় ব্যক্ত করে সৈয়দ মাহমুদ হোসেন বলেন, তরুণ সমাজকে দুর্নীতির বিরুদ্ধে এবং সুশাসন এবং মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় সোচ্চার ভূমিকা পালন করতে হবে। আমরা প্রত্যেকে যদি নিজ নিজ অবস্থান থেকে দেশপ্রেম, নৈতিকতা, সামাজিক দায়বদ্ধতা আলোয়ে উদ্ভাসিত হয়ে দুর্নীতির মূলউত্পাটন করতে পারি তবেই এর সুফল দেশের প্রতিটি নাগরিক ভোগ করবে এবং আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডল আমাদের ভাবমূর্তি উজ্জল হবে।
তিনি বলেন, আমরা শৈশবে দেখেছি দুর্নীতিবাজদের সমাজ থেকে বয়কট করা হতো। তাদের সঙ্গে আত্মীয়তার সম্পর্ক স্থাপন করতে সংকোচ বোধ করা হত। বরং এখন তাদের উৎসাহিত করা হয়। দুর্নীতিবাজদের তোষণ করা হয়। আমাদের পূর্বের কালচারে ফিরে যেতে হবে।
আমি নবীন ছেলে-মেয়েদের উদ্দেশ্যে বলছি, তারা তাদের পিতা-মাতার কাছে বিনয়ের সঙ্গে জানতে চাইবে যে, তাদের পিতা-মাতার বেতন-ভাতা কত? তাদের মাসিক আয় কত, মাসিক ব্যয় কত? তাদের সংসার কিভাবে চলে, তারা কীভাবে বিলাসবহুল জীবন-যাপন করে। পরিবারের সদস্যদের মধ্যে হতে দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে। দুর্নীতিবাজদের পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয়ভাবে বয়কট করতে হবে।
অন্যদিকে তদন্তকারী কর্মকর্তার মনে রাখতে হবে যে, একজন নিরপরাধ ব্যক্তি যেন দুর্নীতির মামলায় জড়িয়ে না পড়ে। অন্যদিকে অপরাধী যেই হোক না কেন তার পদমর্যাদা কোনো অবস্থাতেই দুর্নীতির দায় থেকে পরিত্রাণ মাপকাঠি হবে না। একজন দুর্নীতিবাজ যাতে এই দায় থেকে মুক্তি না পায় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে বলেও প্রধান বিচারপতি তার বক্তব্যে উল্লেখ করেন।
আরএম/এসএম