ব্যাগ ঘাড়ে ঝুলিয়ে বাসের জন্য অপেক্ষা, অতিরিক্ত যাত্রী থাকায় মাঝপথে গণপরিবহনে উঠতে না পারা, যানজট আর গণপরিবহনের সংকটসহ এমন বিভিন্ন ভোগান্তি রাজধানীবাসীকে প্রায় প্রতিদিনই (ছুটির দিন বাদে) পোহাতে হচ্ছে। সকালে যারা জীবিকার তাগিদে, অথবা স্কুল-কলেজ, অথবা প্রয়োজনীয় কাজে বের হন তাদের কাছে প্রতিদিনের এমন ভোগান্তির চিত্র নতুন নয়।

যে কারণে সময় নিয়ে বের হয়েও অনেকেই ঠিকমতো পৌঁছাতে পারছেন না। ভোগান্তির একই চিত্রের দেখা মেলে অফিস শেষে বিকেলে বা সন্ধ্যায়।

বুধবার (৮ ডিসেম্বর) রাজধানীর গুলশান বাড্ডা লিংক রোডের বিপরীত সড়কে সকাল সাড়ে ৮টা থেকে শত শত মানুষকে বাসের জন্য অপেক্ষা করতে দেখা যায়। অফিসগামীদের ভোগান্তির বিষয়ে এখানে কথা হয় বেশ কয়েকজনের সঙ্গে। তাদের একজন বেসরকারি চাকরিজীবী আকরাম হোসেন। তিনি বলেন, অফিসগামী মানুষদের এক ধরনের যুদ্ধ করে প্রতিদিন অফিসে যেতে হয়। খুব তাড়াহুড়ো করে রাস্তায় যখন এসে দাঁড়াই তখন অর্থাৎ অফিস টাইমে বাসে ওঠা মুশকিল হয়ে দাঁড়ায়। যাব গুলিস্থান অফিসে, কিন্তু সেখানে যাওয়ার জন্য কোনো বাসেই ওঠা যায় না। প্রতিটি বাসেই যাত্রীতে ঠাসা।

তিনি বলেন, বাসের গেটেই ঝুলে থাকেন কমপক্ষে ৭/৮ মানুষ। এমন চিত্র প্রতিদিনের। এছাড়া কেউ যদি কোনোমতে বাসে উঠতে পারে তারপরও বিপদের শেষ নেই। তখন তাকে বাসে ঝুলে থাকতে হয় দীর্ঘ যানজটের মধ্যে।

রাজধানীর রামপুরা টিভি সেন্টারের সামনে কথা হয় বেসরকারি চাকরিজীবী নাজিয়া তাবাসসুমের সঙ্গে। তিনিও একই ধরনের অভিযোগ জানিয়ে বলেন, অফিস টাইমে পুরুষরা হয়তো কোনোমতে ঝুলে বাসে উঠতে পারে। কিন্তু আমরা নারীরা তো তাও পারি না। দীর্ঘ সময় বাসের জন্য অপেক্ষায় থেকেও বাসে ওঠার কোনো পরিস্থিতি থাকে না। আর অফিস টাইমে যেহেতু বাস যাত্রীতে পরিপূর্ণ থাকে তাই আমরা বাসে ওঠার কোনো সুযোগ পাই না। এটা প্রতিদিনের চিত্র। সিএনজিচালিত অটোরিকশাও এ সময় ভাড়া চায় বেশি। এভাবে প্রতিদিন যাওয়াও সম্ভব নয়। যে কারণে গণপরিবহনে এক ধরনের যুদ্ধ করেই যেতে হয়।

যানজটের মধ্য দিয়ে দিনের শুরু

রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে যানজটের মধ্য দিয়ে দিনের শুরু হয়েছে আজ। সকাল থেকেই সড়কে যাত্রীর চাপ এবং পথে পথে যানজট সৃষ্টি হতে দেখা গেছে।

এয়ারপোর্ট থেকে উত্তরা-টঙ্গী সড়ক, খিলক্ষেত, বনানী, মাহাখালী, জাহাঙ্গীর গেট, কুড়িল, প্রগতি সরণি, বাড্ডা, রামপুরা, মালিবাগ সড়কগুলোতে সকাল থেকেই তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়েছে। 

গুলশান-১ নম্বর সড়কে কথা হয় মিরপুর থেকে আলিফ বাসে আসা বেসরকারি চাকরিজীবী মাসুদ রানার সঙ্গে। তিনি বলেন, আজ মিরপুর থেকে অফিসে আসার সময় প্রায় সব রাস্তাতেই যানজট ছিল। এর মধ্যে আগারগাঁও, জাহাঙ্গীর গেট, মহাখালী, আমতলী, গুলশানে খুব বেশি যানজট ছিল।

আব্দুল্লাপুর থেকে উত্তরা, খিলক্ষেত, কুড়িল প্রগতি সরণি হয়ে রামপুরা বাজার পর্যন্ত আসা ভিক্টর ক্লাসিক বাসের চালক হামিদুর রহমান যানজট পরিস্থিতি সম্পর্কে বলেন, এই সড়কের প্রায় পুরোটাজুড়েই যানজট আছে, খুব ধীরগতিতে আজ গাড়ি চালিয়ে এসেছি। আজ যানজটের মধ্যেই সকাল শুরু হয়েছে। অফিস টাইমে এসে এই যানজট আরও বেড়ে গেছে।

বনানী, চেয়ারম্যান বাড়ি হয়ে মহাখালী বাস টার্মিনাল পর্যন্ত যাত্রী নিয়ে আসা অটোচালক আলাউদ্দিন মিয়া বলেন, এই সড়কের দুইপাশেই তীব্র যানজট আছে, যে কারণে যাত্রী নিয়ে এই সড়ক পার হতে অনেক সময় লেগে গেছে। বলতে গেলে প্রতিটি সড়কেই আজ অফিস টাইমে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়েছে। এখন প্রতিদিনিই রাজধানীর সড়কগুলোতে অতিরিক্ত যানজট থাকে, যে কারণে আমাদের ট্রিপ আগের চেয়ে অনেক কমে গেছে।

রাজধানীর যানজটে জিডিপি ও মাথাপিছু আয়ের ক্ষতি হচ্ছে

রাজধানীর যানজটে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ও মাথাপিছু আয়ের ক্ষতি হচ্ছে বলে গবেষণায় উঠে এসেছে। বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) বার্ষিক গবেষণা সম্মেলনে সম্প্রতি এ তথ্য তুলে ধরা হয়। 

সেখানে জানানো হয়, শহরে যানজটের কারণে বছরে জিডিপির সরাসরি ক্ষতি হচ্ছে ২ দশমিক ৫ শতাংশ। এছাড়াও প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে মাথাপিছু আয়ের ক্ষতি হচ্ছে ঋণাত্মক ৫ দশমিক ৮ শতাংশ। সেই সঙ্গে ঢাকার ওভার গ্রোথের কারণে ক্ষতি হয় জিডিপির ৬ শতাংশ। দেশের মানুষ যারা শহরে বাস করেন তাদের অধিকাংশ বাস করেন ঢাকায়। দেশের মোট জনসংখ্যা প্রায় ১৬ কোটি। প্রধান শহরগুলোতে বাস করে ৩১ দশমিক ৯ শতাংশ মানুষ। এরমধ্যে আবার ঢাকায় বাস করে ১১ দশমিক ২ শতাংশ মানুষ। এছাড়া ১০ লাখের বেশি মানুষ বাস করে সাড়ে ৩ শতাংশ শহরে। ১০ লাখের মতো মানুষ বাস করে এমন শহর মাত্র ৫টি।

এএসএস/জেডএস