নিরাপদ সড়কের দাবিতে পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী সড়ক অব্যবস্থাপনার সঙ্গে জড়িতদের প্রতি ব্যঙ্গচিত্র প্রদর্শন করতে রাস্তায় নেমেছেন শিক্ষার্থীরা। রোববার (৫ ডিসেম্বর) দুপুর সোয়া ১২টা থেকে শিক্ষার্থীরা রামপুরা ব্রিজের হাতিরঝিল অংশের ফুটপাতে ব্যঙ্গচিত্র নিয়ে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করছেন। এতে খিলগাঁও মডেল কলেজের শিক্ষার্থীরা অংশ নিয়েছেন।

সরেজমিনে দেখা যায়, শিক্ষার্থীরা পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী সড়কের অব্যবস্থাপনার বিরুদ্ধে ব্যঙ্গচিত্র প্রদর্শন করছেন। এ সময় তারা নিরাপদ সড়কের দাবিতে তাদের দেওয়া ১১ দফা দাবির পক্ষে নানা শ্লোগান দেন।

শিক্ষার্থীরা গত কয়েক দিন ধরে রামপুরা ব্রিজে নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলন করে যাচ্ছেন। সর্বশেষ শনিবার (৪ ডিসেম্বর) তারা সড়কের অব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে রামপুরা ব্রিজে দাঁড়িয়ে লাল কার্ড প্রদর্শন করেন। ওই কর্মসূচি থেকে ব্যঙ্গচিত্র প্রদর্শনের ঘোষণা দেওয়া হয়।

তার আগে বুধবার (১ ডিসেম্বর) শিক্ষার্থীরা নিরাপদ সড়ক নিশ্চিত করতে ১১ দফা দাবি উত্থাপন করেন।

শিক্ষার্থীদের ১১ দফা দাবিগুলো হলো-

১. সড়কে নির্মম কাঠামোগত হত্যার শিকার নাঈম ও মাঈনউদ্দিনের হত্যার বিচার করতে হবে। তাদের পরিবারকে যথাযথ ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। গুলিস্তান ও রামপুরা ব্রিজ সংলগ্ন এলাকায় পথচারী পারাপারের জন্য ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ করতে হবে।

২. সারা দেশে সব গণপরিবহনে শিক্ষার্থীদের হাফ পাস সরকারি প্রজ্ঞাপন দিয়ে নিশ্চিত করতে হবে। হাফ পাসের জন্য কোনো সময় বা দিন নির্ধারণ করে দেওয়া যাবে না। বর্ধিত বাস ভাড়া প্রত্যাহার করতে হবে। সব রুটে বিআরটিসির বাসের সংখ্যা বৃদ্ধি করতে হবে।

৩. গণপরিবহনে ছাত্র-ছাত্রী এবং নারীদের অবাধ যাত্রা ও সৌজন্যমূলক ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।

৪. ফিটনেস ও লাইসেন্স বিহীন গাড়ি এবং লাইসেন্স বিহীন চালককে নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। গাড়ি ও ড্রাইভিং লাইসেন্স নিয়ে বিআরটিএ’র দুর্নীতির বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।

৫. সব রাস্তায় ট্রাফিক লাইট, জেব্রা ক্রসিং নিশ্চিত করাসহ জনবহুল রাস্তায় ট্রাফিক পুলিশের সংখ্যা বাড়াতে হবে। ট্রাফিক পুলিশের ঘুষ-দুর্নীতির বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।

৬. বাসগুলোর মধ্যে বেপরোয়া প্রতিযোগিতা বন্ধে এক রুটে এক বাস এবং দৈনিক আয় সব পরিবহন মালিকের মধ্যে তাদের অংশ অনুযায়ী সমান ভাবে বণ্টন করার নিয়ম চালু করতে হবে।

৭. শ্রমিকদের নিয়োগপত্র-পরিচয়পত্র নিশ্চিত করতে হবে। চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল করতে হবে। চুক্তিভিত্তিক বাস দেওয়ার বদলে টিকেট ও কাউন্টারের ভিত্তিতে গোটা পরিবহন ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাতে হবে। শ্রমিকদের জন্য বিশ্রামাগার ও টয়লেটের ব্যবস্থা করতে হবে।

৮. গাড়ি চালকের কর্মঘণ্টা একনাগাড়ে ৬ ঘণ্টার বেশি হওয়া যাবে না। প্রতিটি বাসে দুই জন চালক ও দুই জন সহকারী রাখতে হবে। পর্যাপ্ত বাস টার্মিনাল নির্মাণ করতে হবে। পরিবহন শ্রমিকদের যথাযথ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে।

৯. যাত্রী-পরিবহন শ্রমিক ও সরকারের প্রতিনিধিদের মতামত নিয়ে সড়ক পরিবহন আইন সংস্কার করতে হবে এবং বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে।

১০. ট্রাক, ময়লার গাড়িসহ অন্য ভারী যানবাহন চলাচলের জন্য রাত ১২টা থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত সময় নির্ধারিত করে দিতে হবে।

১১. মাদকাসক্ত নিরসনে গোটা সমাজে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। চালক-সহকারীদের জন্য নিয়মিত ডোপ টেস্টের ও কাউন্সিলিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে।

এমএসি/এসএসএইচ